কলকাতা ব্যুরো: ছট পুজো নিয়ে মেতে উঠেছে কলকাতা সহ সারা দেশ। তবে এবার দূষণের জেরে রবীন্দ্র এবং সুভাষ সরোবর বন্ধ থাকলেও গঙ্গার ৩৭ টি ঘাট এবং যোধপুরপার্ক, পোদ্দারনগর, আনন্দপুর এবং পাটুলি মিলিয়ে মোট ১৭০ টি ঘাট ছটপুজোর জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। তাই বিকল্প ব্যবস্থায় খুশি ছট পুজোর ব্রতপালনকারীরা। এদিন ভোর হতেই ঘাটের উদ্দেশে রওনা দেন সাধারণ মানুষ। সূর্যোদয় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই শুরু হয় উপাসনা।  

১০ নভেম্বর বুধবার পালিত হচ্ছে এই বছরের ছট পুজো। তবে এবার করোনা আবহে অন্যান্য উৎসবের মতোই ছট পুজো ঘিরেও রয়েছে বেশ কিছু বিধিনিষেধ। পঞ্জিকা মতে, চলতি বছর ১০ নভেম্বর ছট পুজো। ছট পুজোয় ৩৬ ঘন্টা কঠোর ব্রত পালন করতে হয়। তারপর মন্ত্র ও আরতি করে ছঠি মাইয়ার পুজো করা হয়ে থাকে। ছটের থালায় বিভিন্ন কাঁচা সবজি সাজিয়ে অর্ঘ্য দেন ছটব্রতীরা।

এবছর বুধবার ১০ নভেম্বর থেকে ১১ নভেম্বর বৃহস্পতিবার অবধি চলবে ছটপুজো। তবে ন্যাশনাল গ্রিন ট্রাইব্যুনালের নির্দেশে দূষণ রুখতে ছট পুজোর আগে বন্ধ রবীন্দ্র সরোবর ও সুভাষ সরোবর। বাঁশের ব্যারিকেড দিয়ে ঘিরে ফেলা হয়েছে দুই সরোবরের চারদিক। অশান্তি এড়াতে একজন ডিসি ও ৫ জন অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার পদমর্যাদার অফিসারের নেতৃত্বে মোতায়েন ৫০০ পুলিশ কর্মী। মূলত ভয়াবহ দূষণের ধাক্কায় রবীন্দ্র এবং সুভাষ সরোবরের জলে অক্সিজেনের মাত্রা কমে এসেছে। তার উপরে ঢাকুরিয়া লেকের পরিবেশ সংরক্ষণ নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের আদেশ লঙ্ঘন করে সরোবরে ছটপুজো হলে জলজ প্রাণীর বাঁচার সম্ভাবনা কমে যাবে। তাই এবারেও রবীন্দ্রএবং সুভাষ সরোবরে বন্ধ ছট পুজো।

তবে এবার রবীন্দ্র এবং সুভাষ সরোবর বন্ধ থাকলেও গঙ্গার ৩৭ টি ঘাট এবং যোধপুরপার্ক, পোদ্দারনগর, আনন্দপুর এবং পাটুলি মিলিয়ে মোট ১৭০ টি ঘাট ছটপুজোর জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রশাসক মণ্ডলীর সদস্য তথা বিধায়ক দেবাশিস কুমার।

আগেই KMDA-এর তরফে নোটিস দিয়ে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, বৃহস্পতিবার সন্ধে ৬টা পর্যন্ত বন্ধ থাকবে রবীন্দ্র সরোবর। বুধবার সকালেই সরোবরের গেটগুলিতে তালা লাগিয়ে দেন নিরাপত্তারক্ষীরা। পাশাপাশি, যে সমস্ত জলাশয়ে ছট পুজো করা যাবে, তার তালিকাও টাঙিয়ে দেওয়া হয়েছে KMDA-এর তরফে। একইসঙ্গে সচেতনতামূলক প্রচারও চালাচ্ছে কলকাতা পুলিশ ও পুরসভা।

প্রসঙ্গত, ২০১৮ এবং ২০১৯ সালে নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও সুভাষ সরোবর-রবীন্দ্র সরোবরে ছটপুজো নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়। সমালোচনার মুখে পড়ে প্রশাসন। তবে ২০২০ সালে করোনার কারণে হাইকোর্টে নির্দেশ পুজোতেও মানতে হয়েছে উদ্যোক্তা থেকে দর্শনার্থীদেরও। হাইকোর্ট ও পরিবেশ আদালতের রায়ই বহাল রাখার নির্দেশ দেয় সুপ্রিম কোর্ট। কেএমডিএ-আবেদন খারিজ করা হয়। গত বছর, ছট পুজোর জন্য সাধারণ মানুষের জন্য তাদের বাড়ির কাছেই এই কৃত্রিম জলাশয় করা হয়েছিল। মোট ৪৫ টি ঘাট করা হয়। তার মধ্যে ১৬ টি কৃত্রিম জলাশয় ছিল। সবটাই কলকাতা পৌরসভার পক্ষ থেকে সমস্ত বন্দোবস্ত করে দেওয়া হয়েছিল। শুধু তাই নয় যেখানে কৃত্রিম জলাশয় থাকছে তার পাশে বায়ো-টয়লেট, চেঞ্জিং রুম পর্যাপ্ত পরিমাণে আলোর ব্যবস্থাও করা হয়েছিল।

তবে চলতি বছরের ছট পুজোতে কোনও খামতি রাখেনি কলকাতা পুরসভা। বুধবার এবং বৃহস্পতিবার গঙ্গার ঘাটগুলিতে পর্যাপ্ত পরিমাণে আলোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রতিটি জলাশয়ে স্নান এবং পুজোর পর পোশাক পরিবর্তনের জন্য যাবতীয় ব্যবস্থা করেছে পুরসভা এবং কেএমডিএ। কেমএমডি-র তরফে জানানো হয়েছে, ছট পুজোর পুণ্যার্থীরা থাকেন এমন ওয়ার্ডে হোর্ডিং পোস্টার দিয়ে বিকল্প জলাশয়ের কথা জানানো হয়েছে। যাতে কেউ রবীন্দ্র সরোবরে ব্রত পালন করতে না যান। 

তবে উৎসবের দিন মানুষ সবকিছু ভুলে আনন্দে মেতে ওঠেন। শত বিধি নিষেধ থাকলেও তা উৎসবের দিনে ভুলে যান। করোনাকে উপেক্ষা করেও এদিন হাজারে হাজারে মানুষ কলকাতা সহ রাজ্যের বিভিন্ন ঘাটে জড়ো হন। যেখানে ছিল না কোনও সামাজিক দূরত্ব, ছিল না মাস্কের বালাই। সবকিছুকে দূরে সরিয়ে মানুষ মেতে ওঠেন আরাধনায়। কিন্তু চলতি বছর দুর্গাপুজোর পর যেভাবে শহর তথা রাজ্যে সংক্রমণ বেড়েছে তা নিয়ে ইতিমধ্যেই চিন্তিত চিকিৎসকরা। তবুও সাধারণ মানুষের কোনও হেলদোল নেই। দেদারে চলছে উৎসব পালন।  

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version