কলকাতা ব্যুরো: ক্ষতিগ্রস্তদের টাকা দেওয়ার ক্ষেত্রে দুর্নীতিতে যুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে এফআইআর দায়ের করার নির্দেশ দিলেন কলকাতা হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্দাল। মালদায় জেলায় বন্যায় দুর্গতদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ায় বিপুল দুর্নীতি হয়েছে বলে অভিযোগ তুলে হাইকোর্টে মামলা দায়ের হয় ৷

প্রসঙ্গত, গত ২৬ জুলাই মামলার শুনানিতে দুর্নীতির ব্যাপারে রাজ্য কী পদক্ষেপ করেছে, তার রিপোর্ট চেয়েছিল কলকাতা হাইকোর্ট। কিন্তু বৃহস্পতিবার রাজ্যের তরফে আইনজীবী কিশোর দত্ত আরও সময় চেয়ে জানান যে, রাজ্য এই বিষয়ে সক্রিয় পদক্ষেপ করছে ৷ ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি তখন তাঁকে প্রশ্ন করেন, এতদিন কেন কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি? যাঁরা ভুক্তভোগী তাঁরা টাকাটা পাচ্ছে না, সেটা রাজ্য দেখবে না ?

২০১৭-এর আগস্টে মালদার বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের টাকা দিতে রাজ্য সরকার একটি প্রকল্প আনে৷ প্রকল্পে জানানো হয়েছিল বন্যায় যাঁদের ঘরবাড়ি পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গিয়েছে, তাঁদের ৭০ হাজার টাকা এবং যাঁদের অল্প ক্ষতি হয়েছে তাঁদের ৩ হাজার ৩০০ টাকা করে দেওয়া হবে। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে মালদার হরিশ্চন্দ্রপুর ব্লকের বড়ই গ্রাম পঞ্চায়েতে তৈরি হয় ৬ সদস্যের একটি কমিটি। গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান, উপপ্রধান নিজেদের পছন্দমতো একটি তালিকা বানিয়ে প্রশাসনকে পাঠায়। তাতে দেখা যায় ৬ হাজার ৫৯৫ জনের মোবাইল নম্বর একটাই। মানে একজন সমস্ত টাকা তুলে নিয়েছে। বাকিদের মধ্যে অধিকাংশ এক নামের দু’টি বা তিনটি অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা পেয়েছেন। প্রায় ১ হাজার ৩০০-এর মতো লোক দু’বার ব্যাঙ্ক থেকে টাকা তুলেছেন।

পরবর্তী সময়ে বিডিও ও জেলাশাসক রাজ্যকে চিঠি লিখে জানান যে মালদায় ক্ষতিপূরণের টাকা দেওয়ার ক্ষেত্রে বড়সড় দুর্নীতি হয়েছে। তারপরও রাজ্য কোনও পদক্ষেপ করেনি। বৃহস্পতিবার মামলার শুনানিতে মামলাকারীদের তরফে আইনজীবী শ্রীজীব চক্রবর্তী ও অনিন্দ্য ঘোষ বলেন, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য প্রায় ৪০ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছিল৷ মালদা জেলার মধ্যে একটা গ্রাম পঞ্চায়েতে এই অবস্থা, তাহলে গোটা জেলায় কী হয়েছে? অবিলম্বে আদালতের একটি কমিটি নিযুক্ত করে পুরো বিষয়ে তদন্ত করা উচিত।

তখন রাজ্যের আইনজীবী কিশোর দত্ত বলেন, রাজ্য ইতিমধ্যে ব্যবস্থা নিয়েছে। করোনার কারণে কিছুটা দেরি হয়েছে। কিন্তু রাজ্য টাকা পুনরুদ্ধারের চেষ্টা চালাচ্ছে। দোষীদের বিরুদ্ধে ১৬০-এর নোটিস দেওয়া হয়েছে। এফআইআর করা হয়েছে। যে ১ হাজার ৩০০-এর মতো লোক দু’বার করে টাকা নিয়েছেন বলে অভিযোগ করা হচ্ছে, তাঁদের থেকে টাকা পুনরুদ্ধারের চেষ্টা চলছে। পঞ্চায়েত প্রধানের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে ৷ ২৪ ডিসেম্বর তাঁকে শোকজ করা হয়।

তখন ক্ষুব্ধ ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি বলেন, এতদিনে শুধুমাত্র ১৬০-তে নোটিস দিলেন আপনারা! এদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত ছিল রাজ্য সরকারের। এরপরই প্রধান বিচারপতি নির্দেশ দেন শুধু যাঁরা টাকা নিয়েছেন, তাঁরা নয় এই দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত সমস্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে অবিলম্বে এফআইআর করতে হবে রাজ্যকে৷ রাজ্য কী ব্যবস্থা নিচ্ছে তা ৮ সেপ্টেম্বরের মধ্যে জানাতে হবে আদালতকে ৷

আগামী ৮ সেপ্টেম্বর মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ঠিক করা হয়েছে। রাজ্য এই বিষয়ে কী কী ব্যবস্থা নিয়েছে, তা ওই দিনের মধ্যে রাজ্যকে জানাতে হবে ৷

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version