কলকাতা ব্যুরো: কলকাতা হাইকোর্টের একের পর এক মামলা তাঁকে পরিচিত করে তুলেছে। সোশ্যাল মিডিয়াতেও তাঁর ভক্ত হিসাবে পেজ খোলা হয়েছে। কেউ আবার তাঁকে আখ্যা দিয়েছে জনগণের বিচারপতি। তাঁকে নিয়ে বিতর্কও ছড়িয়েছে হাই কোর্টের অন্দরে। ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশ নিয়ে প্রশ্ন তুলে সুপ্রিম কোর্ট ও হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির কাছে নালিশ করেছিলেন তিনি। যার জেরে তাঁর এজলাস বয়কটও করা হয়।

কখনও ভরা এজলাসে বসে তিনি মন্তব্য করেন, আমার মাথায় বন্দুক ধরতে পারেন। মরতে রাজি আছি। কিন্তু দুর্নীতি দেখে চুপ থাকবে না আদালত ! এমন এক বিচারপতিকে নিয়ে আলোচনাও চলছে হাইকোর্টের পরিসরের বাইরে। তিনি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়, বিচারপতি যিনি চর্চায়। শুধু নিয়োগ মামলা নয়, রাজ্যে গত কয়েক মাসে একের পর একর মামলায় তাঁর এজলাস থেকেই এসেছে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ। তালিকায় রয়েছে পার্থ, পরেশদের মতো ভিভিআইপিদের নামেও দায়ের হওয়া মামলা।

হাইকোর্ট সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০০৮ সাল থেকে বিচারপতি হওয়ার আগে অবধি স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি)-এর প্যানেলের আইনজীবী হিসাবে কাজ করেন। ২০১৮ সালের ২ মে অতিরিক্ত বিচারপতি হিসাবে আসেন কলকাতা হাই কোর্টে। ২০২০-র ৩০ জুলাই হাই কোর্টের স্থায়ী বিচারপতি হিসাবে কাজ শুরু করেন তিনি। ২০২১ সাল থেকেই পশ্চিমবঙ্গ স্কুল সার্ভিস কমিশনের দুর্নীতির বিরুদ্ধে একের পর এক গুরুত্বপূর্ণ সিবিআই অনুসন্ধানের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।

সরকারি চাকরি দিয়ে কর্মজীবন শুরু করেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই চাকরি ছেড়ে আইন নিয়ে পড়াশোনা শুরু করেন তিনি। আইনজীবী হিসাবে অরিজিনাল সাইটের মামলা, ন্যাশনাল ইন্সিওরেন্সের মামলাও লড়েছেন তিনি। স্কুল শিক্ষা কমিশনের দুর্নীতি বাদেও বিভিন্ন ক্ষেত্রে কোর্ট সাক্ষী থেকেছে তাঁর মানবিক রায়ের। ৭৬ বছরের বৃদ্ধার ২৫ বছরের বেতন, এরিয়ার-সহ মিটিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেন তিনি। টানা ৩৬ বছরের লড়াইয়ের শেষে এজলাসেই কেঁদে ফেলেন বৃদ্ধা। দুরারোগ্য ক্যানসারে আক্রান্ত সোমা ফিরিয়ে দেন কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির প্রস্তাব।

অন্য চাকরি নয়, এজলাসে দাঁড়িয়েই জানিয়ে দেন, তাঁদের মনে আশা জাগিয়েছেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। লড়াই চালিয়ে যাবেন। অন্য একটি মামলায় স্কুলের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে এক শিক্ষকের বেতন আটকে রাখার অভিযোগ ওঠে। সেই মামলায় বেনজির রায় দেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। ১০ জুন পর্যন্ত স্কুলে ঢোকা বন্ধ করে দেন শিক্ষকের। স্কুলের গেটে দু’জন সশস্ত্র পুলিশ মোতায়েন করার সিদ্ধান্তও নেন তিনি। বাদ যায়নি কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চও। তাঁর একক বেঞ্চের নির্দেশের উপর বিভিন্ন সময়ে ডিভিশন বেঞ্চের স্থগিতাদেশের বিরুদ্ধে গিয়ে সুপ্রিম কোর্টে চিঠি লেখেন তিনি। প্রধান বিচারপতির হস্তক্ষেপও দাবি করেন চিঠিতে।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version