কলকাতা ব্যুরো: মুকুল রায়ের বিধায়ক পদ খারিজের মামলায় নয়া মোড়। সোমবার স্পিকারকে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করতে বললো কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ। গত ফেব্রুয়ারিতে মুকুল রায়ের বিধায়ক পদ বহাল রাখার যে সিদ্ধান্ত স্পিকার নিয়েছিলেন, সেটা কার্যত খারিজ হয়ে গেল। ফলে মুকুলের বিধায়ক থাকা নিয়ে ফের সংশয় তৈরি হলো।

গত ১১ ফেব্রুয়ারি স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়ে দেন, মুকুল রায় কোনওদিন দলবদলই করেননি। বিজেপিতেই রয়েছেন তিনি। স্পিকার দাবি করেছিলেন, অভিযোগকারীরা মুকুলের দলবদলের পক্ষে যথেষ্ট প্রমাণ দিতে পারেননি। কিন্তু এদিন বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তব এবং রাজর্ষি ভরদ্বাজের ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়ে দিয়েছে, গত বছরের ১১ জুন যে সাংবাদিক বৈঠকে মুকুল রায় তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন বলে দাবি করা হচ্ছে, সেটাকে প্রমাণ হিসাবে ধরে নিয়ে স্পিকারকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানাতে বলেছে কলকাতা হাইকোর্ট।

এই বিষয়ে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী জানিয়েছেন, আমি কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির বেঞ্চের নির্দেশকে স্বাগত জানাই। পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার অধ্যক্ষের রায় অনুযায়ী মুকুল রায় দশম তফসিল অনুযায়ী দলত্যাগ করেন নি এবং অভিযোগকারী বিরোধী দলনেতা যথাযথ প্রমান দিতে পারেন নি। অধ্যক্ষের সেই নির্দেশ বাতিল করেছে আদালত। দশম তফসিল ও সংবিধানকে রক্ষা করেছে আদালত।

তিনি আরও বলেন, আমি মুকুল রায়ের ভেরিফায়েড টুইটার ও ফেসবুক হ্যান্ডেল থেকে তিনি তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দেওয়া এবং প্রচারের তথ্য দিয়েছিলাম। সেক্ষেত্রে ফেবুক ও টুইটারে সার্টিফিকেটও দিয়েছিলাম আমি। অধ্যক্ষ সেই সার্টিফিকেটকে গুরুত্বই দেন নি। তিনি এই তথ্য প্রমাণকে যথাযথ বলে গ্রহণ করেন নি।

প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালের নভেম্বরে গেরুয়া শিবিরে যোগ দিয়েছিলেন তৃণমূলের তৎকালীন সর্বভারতীয় সম্পাদক মুকুল রায়। কয়েকবছর পর তাঁর ছেলে শুভ্রাংশুও দলবদল করেন। ২০২০ সালে দলের হয়ে ভাল কাজ করার পুরস্কার হিসেবে বিজেপিতে সর্বভারতীয় সহ-সভাপতির দায়িত্ব পান মুকুল। একুশের বিধানসভা ভোটে প্রায় প্রচার ছাড়াই কৃষ্ণনগর উত্তর কেন্দ্র থেকে বড় ব্যবধানে জেতেন মুকুল রায়। কিন্তু বিধানসভা নির্বাচনের পরপরই তিনি নিজের পুরনো দল তৃণমূলে ফিরে যান। ২০২১ সালের ১১ জুন তৃণমূল ভবনে তৃণমূলের উত্তরীয় পরে সাংবাদিক সম্মেলনও করেছিলেন তিনি।

মুকুলের এই ঘর ওয়াপসির পরই তাঁর বিধায়কপদ খারিজের দাবিতে স্পিকারের দ্বারস্থ হয় বিজেপি। যদিও বিধানসভায় মুকুলের আইনজীবীরা বরাবরই দাবি করে এসেছেন, তিনি বিজেপির বিধায়ক। কখনও দলবদল করেননি। এর মধ্যে আবার শাসকদলে বদান্যতায় PAC’র চেয়ারম্যান পদও যায় মুকুলের হাতেই। সেই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধেও আবেদন করে বিজেপি। কিন্তু কোনও লাভ হয়নি। বিজেপির সব অভিযোগ খারিজ করে মুকুলের বিধায়ক পদ বহাল রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন স্পিকার। এবার সেই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার নির্দেশ দিল হাইকোর্ট।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version