কলকাতা ব্যুরো: চলে গেলেন মাধুকরীর স্রষ্ঠা বুদ্ধদেব গুহ যাকে এক কথায় আধুনিক বাংলা সাহিত্যের প্রাণপুরুষ বললেও হয়তো কম বলা হয় শনিবার গভীর রাতে তিনি মারা যান আজ বিকেলে কেওড়াতলা মহাশ্মশানে তাকে অন্তেষ্টি হবে তার আগে বাড়ী থেকে শোক মিছিল হবে দেহ নিয়ে বুদ্ধদেব গুহর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন সমাজের বিভিন্ন অংশের প্রথিতযশা।
পেশায় চার্টার্ড একাউন্টেন্ট নেশায় জঙ্গল প্রেমিক বুদ্ধদেব গুহ লেখা পড়ে বহু বাঙালির জঙ্গল প্রেম জেগেছে একথা বললে হয়তো অত্যুক্তি হবে না পাশাপাশি চান ঘরে গান বা বাতিঘরের মতো উপন্যাস বাঙালি কে রোমান্টিকতায় উষ্ণ করেছে। তিনি একদিকে গায়ক অন্যদিকে তার আকার হাত ছিল রীতিমতো ঈর্ষণীয় একেবারে সাবেকি বাঙালিয়ানা প্রতিমূর্তি বুদ্ধদেব গুহ শিকার এর শখ তাকে সাহিত্য প্রেমীদের কাছে আলাদা করে ছিনিয়ে দিয়েছিল শুধু ভারতবর্ষের রাজ্যের জঙ্গল ঘুরে বেড়ানোই নয় বিদেশেও তিনি ঘুরে বেড়িয়েছেন নানা প্রান্ত। তার প্রকৃতি প্রেম, অরণ্য ভালোবাসা, শিকারে দক্ষতা, বেড়ানো আর প্রেমিক মন -এই সব মিলিয়ে তিনি থাকবেন সাহিত্যপ্রেমী বাঙালির মনে। তাঁর ছোটগল্প ও উপন্যাসেও বাঙালি খুঁজে পায় জীবনের রসদ। ইংল্যান্ড, ইউরোপের প্রায় সমস্ত দেশ, কানাডা, আমেরিকা, হাওয়াই দ্বীপ পুঞ্জ, জাপান, থাইল্যান্ড ও আফ্রিকার নানা জঙ্গলে পা পড়েছিল তার। আর শুধু এরাই নয় বাংলাদেশ প্রয়োজন তার অগণিত গুণমুগ্ধ তাই বারেবারেই তাকে বাংলাদেশের বাঙালির আমন্ত্রণে ছুটে যেতে হয়েছে প্রতিবেশী রাষ্ট্রে। ‘সবিনয় নিবেদন’ তাঁর জনপ্রিয় পত্রোপন্যাস। তাঁর অসংখ্য উপন্যাসের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘কোয়েলের কাছে’, ‘কোজাগর’, ‘নগ্ন নির্জন’, ‘বাতিঘর’, ‘একটু উষ্ণতার জন্য’, ‘বাবলি’, ‘চান ঘরে গান’, ‘বাংরিপোসির দু’রাত্তির’, ‘বাজা তোরা, রাজা যায়’, ‘ঝাঁকিদর্শন’ ইত্যাদি। পেয়েছেন আনন্দ পুরস্কার।
পেশায় ছিলেন একজন নামী চাটার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট। দিল্লির কেন্দ্রীয় রাজস্ব বোর্ড থেকে পশ্চিমবঙ্গের আয়কর বিভাগের উপদেষ্টা বোর্ডের সদস্য নিযুক্ত হন। আকাশবাণী কলকাতা কেন্দ্রের অডিশন বোর্ডের সদস্য ছিলেন তিনি। কেন্দ্রীয় সরকারের ফিল্ম সেন্সর বোর্ডের সদস্য ছিলেন তিনি। বামফ্রন্ট আমলে তাকে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বনবিভাগের বন্যপ্রাণী উপদেষ্টা বোর্ড এবং নন্দন উপদেষ্টা বোর্ডের সদস্য করা হয়েছিল। বিশ্বভারতীর রবীন্দ্রভবনে পরিচালন সমিতির সদস্যও নিযুক্ত হয়েছিলেন। গায়ক হিসেবে তিনি ছিলেন পরিচিত মহলে সমাদৃত। বিশেষ করে টপ্পা গানের তিনি ছিলেন গায়ক প্রেমিক।
জঙ্গলে দুঃসাহসিক অ্যাডভেঞ্চার কাহিনী লিখে তিনি ছোটদেরও মন মাতিয়েছেন। তার সৃষ্টি ঋজুদা ছোটদের কাছে এক হিরো। তার সঙ্গী হয়ে রুদ্র, তিতির ও ভটকাই রার বিভিন্ন জঙ্গল ঘুরে বেড়াতো। রুদ্রই এই গল্পগুলির বর্ণনাকারী। প্রধানত পূর্ব ভারতের অরণ্যগুলিই ঋজুদা সিরিজের কাহিনীর প্রেক্ষাপট। ঋজুদাকে প্রথম পাওয়া যায় ১৯৭৩ সালের এপ্রিল মাসে প্রকাশিত “ঋজুদার সঙ্গে জঙ্গলে” উপন্যাসে। ঋজুদা, যিনি প্রাক্তন শিকারী, শিকার ছেড়ে দিয়ে তিনি পশুপাখি সংরক্ষণে উদ্যোগ নেন। নিজেকেই ঋজুদার জায়গায় বসিয়ে বুদ্ধদেব একসময় নিজেও শিকার ছেড়ে হয়ে উঠেছিলেন ঋজুদার মতই জঙ্গল ও পশুপাখির প্রেমিক।