কলকাতা ব্যুরো: রাজনৈতিক অশান্তিতে ফের অগ্নিগর্ভ বীরভূমের রামপুরহাট। রাতের অন্ধকারে গ্রামের কয়েকটি বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। অগ্নিদগ্ধ হয়ে বেশ কয়েকজনের মৃত্যু হয়েছে রামপুরহাটের বগটুই গ্রাম। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত গোটা গ্রাম। চলছে রাজনৈতিক চাপানউতোর। আতঙ্কের চাদরে ঢাকা গ্রাম। থমথমে পরিবেশ। অভিযোগ, গ্রামে ঢুকতে বাধা দেওয়া হচ্ছে পুলিশকে। ঘটনার গুরুত্ব বুঝেই দ্রুত কলকাতা থেকে হেলিকপ্টারে বীরভূম যাচ্ছেন রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, আশীষ বন্দ্যোপাধ্যায় (বিধায়ক রামপুরহাট), অভিজিৎ সিনহা (বিধায়ক লাভপুর)। ঘটনার জেরে ইতিমধ্যেই রামপুরহাটের ওসি ও এসডিপিওকে ক্লোজ করা হচ্ছে। এদিকে রামপুরহাটের ঘটনার জেরে নবান্নে জরুরি বৈঠকে বসেছেন মুখ্যসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব ও ডিজি। ইতিমধ্যেই গোটা ঘটনার রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে নবান্নের তরফে। পাশপাশি পুলিশকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে স্বরাষ্ট্র দপ্তরের তরফে।
সোমবার রাতে বরশাল পঞ্চায়েতের উপপ্রধানকে খুনের পরই এই গ্রামে পাল্টা অশান্তি ছড়িয়ে পড়ে। রাতেই গ্রামের কয়েকটি বাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় বেশ কয়েকজনের মৃত্যু হয়েছে। দমকল সূত্রে খবর, মৃতের সংখ্যা ১০। এদের মধ্যে বেশিরভাগই মহিলা। একজনের দেহ অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় রামপুরহাট হাসপাতালে আনা হয়। বাকি দেহগুলি লোপাট করে ফেলা হয়েছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। তবে পুলিশ সুপার ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছেন। মৃতদেহ লোপাটের আশঙ্কা করা হচ্ছে।
সোমবার রাত সাড়ে ১০ টা নাগাদ রামপুরহাট ১ নম্বর ব্লকের বরশাল গ্রামের উপপ্রধান ভাদু শেখকে বোমা মেরে খুন করা হয়। অভিযোগের তির বিজেপির দিকে। এরপর রাত বাড়তেই উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে গ্রামে। তিন, চারটি বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। তাতেই পুড়ে অন্তত ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে খবর। একটি বাড়িতেই ৭ জন ছিল বলে খবর, তাঁদের প্রত্যেকের মৃত্যু হয়েছে। বড় অশান্তি এড়াতে রাতে গ্রামে পুলিশ মোতায়েন ছিল। তা সত্ত্বেও কীভাবে এতগুলি বাড়িতে আগুন লাগল, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। আগুন নেভাতে সকালে সেখানে যায় দমকল বাহিনী। তাঁরাই মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন।
রামপুরহাটের এই এলাকা কয়েকমাস ধরেই রাজনৈতিকভাবে উত্তপ্ত। আট মাসে আগে বাড়ি ফেরার পথে খুন হয়েছিলেন ভাদু শেখের মেজো ভাই। জানা গিয়েছিল, রাস্তায় তাঁকে লক্ষ্য করে গুলি চালায় দুষ্কৃতীরা। এর পর সেই একই কায়দায় খুন হলেন তৃণমূলের উপপ্রধান। আর তার ঠিক পরপরই গ্রামে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় এতজনের মৃত্যু। ইতিমধ্যে কলকাতা থেকে তদন্তকারী দল পাঠানো হচ্ছে রামপুরহাটের বগটুই গ্রামে। সূত্রের খবর, সিআইডি টিম যাচ্ছে সেখানে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান রেকর্ড করে প্রাথমিকভাবে তদন্তে নেমেছে পুলিশ। ঘটনাস্থলে পৌঁছেছেন জেলা পুলিশ সুপার নগেন্দ্র ত্রিপাঠী। তাঁর দাবি, ৭টি বাড়িতে আগুনের ঘটনায় ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদিকে, রামপুরহাটের এই ঘটনায় বিজেপি, তৃণমূলের মধ্যে শুরু হয়েছে জোর তরজা।
জেলার তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের দাবি, রাতভর বোমাবাজি, অশান্তি হয়নি। ওখানে একটি বাড়িতে শর্ট সার্কিট হয়েছে, তাতেই মৃত্যু হয়েছে বাড়ির লোকেদের। ফিরহাদ হাকিম জানিয়েছেন, উপপ্রধান খুনের পর আদৌ ওখানে কী ঘটেছে, সে সম্পর্কে কেউ কিছুই জানে না। তদন্ত না হলে তা বলা সম্ভব নয়। তবে এতজনের মৃত্যু অত্যন্ত দুঃখজনক।
এদিকে, বিজেপি নেতা শমীক ভট্টাচার্যর দাবি, রাজ্যে আইনশৃঙ্খলা একেবারে ভেঙে পড়েছে, এই ঘটনা ফের তার প্রমাণ।
ঘটনার পর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই কাঠগড়ায় তুলেছেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। এদিন সেলিম বলেন, মুখ্যমন্ত্রী বিরোধী শূন্য করতে চেয়েছিলেন এখন তৃণমূল তৃণমূলকে শূন্য করতে নেমেছে। তিনি বলেন, তৃণমূলপন্থীরা তৃণমূলীকেই খুন করলো। এর দায় মুখ্যমন্ত্রীকেই নিতে হবে।