কলকাতা ব্যুরো: বিহারে এন ডি এ র জয় পশ্চিমবঙ্গে ভোটে প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা খুব বেশি। কারণ এবারই প্রথম ভোটে নীতিশ এবং বিহারের মানুষের মধ্যে সরাসরি সমঝোতা হলো না। উল্টে বলা যায় বিহারের মানুষের সঙ্গে সরাসরি যোগসুত্র তৈরি হল নরেন্দ্র মোদির। সেদিক থেকে কম আসনে প্রার্থী দিয়েও নিতিশকে পিছনে ফেলে দিয়ে এখন প্রথম একক সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হাওয়ার হিসেবে এগোচ্ছে বিজেপি। আর এবার বিহার ভোটে বিজেপি হয়ে উঠেছে একক চালিকাশক্তি। ফলে এটা বিজেপির সারা দেশের সমর্থকদের মধ্যে বাড়তি অক্সিজেন যোগাবে।
এ রাজ্যে একটা বড় অংশের মানুষ বিহার থেকে কাজের সূত্রে আসেন। তারা নানা পেশায় যুক্ত থাকেন। একদিকে আসানসোল, বীরভূম থেকে শুরু করে সীমানা লাগোয়া জেলাগুলিতে বহু বিহার বাসী র যাতায়াত বা বসবাস। অন্যদিকে এ রাজ্যের শিল্পাঞ্চল গুলিতেও বিভিন্ন শ্রমিক মহল্লায় বিহারীদের আধিপত্য অনেকটাই বেশি। বিহারে ভোটের এবারের ফল তাদের একটা বড় অংশকে প্রবল ভাবে প্রভাবিত করতে পারে।এবার বিহারে এই ফলে একটা বড় ফ্যাক্টর মুসলিম ভোট। এবার বিহারে সীমান্ত এলাকা গুলিতে মূলত কাটিহার, পূর্ণিয়া, আরার মতো সংখ্যালঘু জেলায় মিম বা তার নেতা আসাউদ্দিন ওয়াসি ব্যাপক প্রভাব তৈরি করেছেন। তাছাড়া বাহাদূরর্গঞ্জ, আমানুর, পূর্ণিয়া, কাটিহার আরারিয়া, কিশান্গঞ্জ থেকে শুধু মিম নিজেই জেতে নি, বিজেপি যেখানে একটা সিট ও জিততে পারবে কিনা সন্দেহ ছিল, সেখানে ভোট সঙ্গবদ্ধ হয়েছে। ফলে ভোট কেটে বিজেপিকে একটা ভালো সুযোগ করে দিয়েছে।

মুসলিমরা যদি কোথাও নিজেদের বিকল্প পেয়ে যায়, তাহলে তারা যে একত্রিত ভাবে সেখানেই ভোট দেয়, তার প্রমাণ এর আগে আসামের এ আই এল ইউ এর বরাক ভ্যালি বা মহারাষ্ট্র অরঙ্গবাদ, উত্তরপ্রদেশের একটা অংশে মুসলিম ভোট সংগঠিত করে দেখিয়েছে। এর আগেও মুসলিমদের ভোট একত্রিত করেছে কাশ্মীরও। তার উদাহরণ রয়েছে কেরালে মাল্লাপুরামের মতো সংখ্যালঘু এলাকায়।
সেই একইভাবে এ রাজ্যের মালদা, মুর্শিদাবাদ, উত্তর দিনাজপুর, দক্ষিণ দিনাজপুরের মত জেলা থেকে বসিরহাট পর্যন্ত, মূলত সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে সংখ্যালঘু ভোট একত্রিত করতে মীমের মত সংগঠন আগামী বিধানসভায় একটা বড় ভূমিকা নিতে পারে। ফলে এ রাজ্যে এখনও পর্যন্ত মুসলিম ভোট যেখানে তৃণমূলের দখলে ছিল। যদি বিহারের মত মুসলিম ভোটে মীমের মত কোন সংগঠন একত্রিত করে দেয় সে ক্ষেত্রে বিজেপিকে এরাজ্যে ঠেকানো মুশকিল হতে পারে।
এরপরে রয়েছে শহর বা মফস্বলের অবাঙালি ভোট। বিজেপির প্রতি দুর্বলতা কলকাতা শহরে বড় বাজার, পোস্তার অবাঙালি এলাকাগুলোতে গত কয়েক বছর ধরেই যথেষ্ট প্রভাব দেখা যাচ্ছে। বিজেপি একইসঙ্গে আসানসোল, শিলিগুড়ির মতো জায়গায় প্রভাব রয়েছে।
উত্তরবঙ্গে গত কয়েক বছরে তো ব্যাপক ভোট নিয়ে ফেলেছে বিজেপি। আর এরাজ্যে গত লোকসভায় ১৮ টি আসন পেয়েছে বিজেপি। সেখানে মানুষ তৃণমূলের বিরোধিতার জন্যই বিজেপিকে ভোট দিয়েছে, সব ক্ষেত্রে এমনটা নয়। গত কয়েক বছর ধরে এ রাজ্যে আরএসএস যেভাবে খুব ধীরে সুস্থে প্রভাব বাড়িয়েছে, সেই কথা অস্বীকার করা যাবে না। আর মোটের উপর বিহারের সঙ্গে বাংলার একটা বড় যোগাযোগ রয়েছে প্রতিবেশী হওয়ার সূত্রে। বিহারের বাঙালির সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে রয়েছে। তাই এর প্রভাব এ রাজ্যের ভোটের পড়তে পারে।
সবচেয়ে বড় কথা বিহারে এই জয় বাংলায় বিজেপির অতিক্ষুদ্র সমর্থক মোদি শাহ সম্পর্কে ভাবতে সামান্য হলেও বাধ্য করবে।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version