কলকাতা ব্যুরো: ভাইফোঁটায় বাজার দর যেন যমের দুয়ার। মাছ, মাংস, মিষ্টি থেকে শুরু করে ফল; আকাশছোঁয়া বাজারদরে ভাইয়ের পাত ভরাতে হিমশিম খাচ্ছেন বোনেরা। ভাইফোঁটার থালা সাজাতে গিয়ে ট্যাঁকে টান পড়েছে বাঙালির। উৎসবের মরশুমে হু হু করে দাম বেড়েছে শাক-সবজি থেকে শুরু করে ফলমূলের। মিষ্টির দোকানে গিয়েও পকেটে ছ্যাঁকা লাগছে আমজনতার।
বাঙালির কাছে যে কোনও উৎসব মানেই পেটপুজো মাস্ট। ভাইফোঁটা সেই তালিকায় অনেকটাই উপরে। ভাইদের দীর্ঘায়ু কামনার পাশাপাশি রসনাতৃপ্তির উপরও এই দিনটায় বিশেষ নজর রাখেন বোনেরা। কিন্তু, জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির জ্বালায় ভাইয়ের থালা সাজাতে গিয়ে পকেটে টান পড়ার জোগাড় মধ্যবিত্ত বোনেদের।
দেখে নিন মাছের বাজারদর
চিংড়ি- ৭৫০-১০০০ টাকা
কাতলা- ৪০০-৬০০ টাকা
পাবদা- ১০০০ টাকা
ইলিশ- ১৬০০-১৮০০ টাকা
পার্শে- ৬০০ টাকা
ট্যাংরা- ৬০০ টাকা
মাংসের বাজারদর
পিছিয়ে নেই মাংসও। কষা মাংস কিংবা চিকেন রেজালা ডিনারে থাকতেই পারে। তবে জেনে নেওয়া ভালো মুরগির দর যাচ্ছে ২২০ টাকা প্রতি কেজি। আর খাসির মাংস ৭৫০ টাকা প্রতি কেজি।
এছাড়া শাক-সবজিতেও আগুন
আলু- ২২ টাকা
পেঁয়াজ- ৬৫ টাকা
পটল- ৬০ টাকা
বেগুন- ৮০ টাকা
টোম্যাটো- ৮০ টাকা
কাঁচালঙ্কা- ২০০ টাকা
বাঁধাকপি- ৬০ টাকা
ফুলকপি- ৪০ টাকা পিস
পাশাপাশি মিষ্টির দোকানে গিয়েও চোখ কপালে উঠছে বোনেদের। ভাইফোঁটা স্পেশ্যাল মিষ্টির থালির দর নূণ্যতম ১৫০-২০০ টাকা। পাঁচ থেকে সাত রকমের মিষ্টি না দিলেই নয়। রসগোল্লা, চমচম, ক্ষিরকদম, কাঁচাগোল্লা, গুলাবজামুন, রসমালাই, বেকড রসোগোল্লা কিংবা হাল আমলের ফিউশন মিষ্টি, প্লেট সাজাতে গিয়ে নাভিশ্বাস উঠছে।
দক্ষিণের লেক মার্কেট থেকে উত্তরের মানিকতলা বাজার, বেশিরভাগ বাজারেই এক ছবি। ক্রেতারা জানাচ্ছেন, বাজারে সব জিনিসপত্রের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধিতে সমস্যায় পড়েছেন তাঁরা। কেউ কেউ জানান, বাজারে এসে খালি হাতেই বাড়ি ফিরে যেতে হচ্ছে। তালিকা থেকে বেশ কিছু আইটেম কাটছাঁট করতে হয়েছে অনেককে। জিনিসপত্রের যা দাম তাতে কতটা গুছিয়ে ভাইদের পছন্দ মতো পদ পাতে তুলে দিতে পারছেন না অনেক বোনেরাই।
বিক্রেতারা জানাচ্ছেন, ইয়াসের পর থেকে বারবার ঝড়-বৃষ্টিতে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ফলে বাজারে জোগান কম রয়েছে। জোগান বাড়াতে শিয়ালদার কোলে মার্কেটের ওপর ভরসা করতে অধিকাংশ বাজারের বিক্রেতাদের। কিন্তু, শিয়ালদা থেকে সবজি আনতে গিয়ে খরচ বেড়ে যাচ্ছে। এরই প্রভাব পড়ছে বাজারদরে।
কিন্তু, দাম বাড়লেও কোনও কিছুতে খামতি রাখতে চায় না বোনেরা। দাম যাই হোক ভাইকে খুশি করতে পছন্দের জিনিস কিনতে ভীড় জমিয়েছেন বাজারে। মিষ্টির বাজারও রমরমিয়ে চলছে। তবে জ্বালানি ও ভোজ্য তেলের আকাশছোঁয়া দাম এবং বন্যার জন্য দুধের সঙ্কট তৈরি হওয়ায় বিপাকে জেলার মিষ্টি ব্যবসায়ীরা। তাই বাজার ধরতে ভাইফোঁটাতে তেমন মিষ্টির দাম বাড়াতে সাহস করেননি কেউ।
তবে ভাইফোঁটা স্পেশাল মিষ্টি ছাড়া বেশিরভাগ মিষ্টির দাম একই রয়েছে। বন্দরশহরে ভাইফোঁটায় ক্রেতার মন কাড়ছে কেশরের বৈকুষ্ঠ সন্দেশ, জাফরান মেশানো ক্ষীরের কাজু রিমঝিম। শহরের নামী মিষ্টি দোকানগুলি বোনেদের জন্য তৈরি করেছে রকমারি মিষ্টির স্পেশাল গিফট প্যাকও।