কলকাতা ব্যুরো: এইচআইভি (হিউম্যান ইমিউনোডেফিশিয়েন্সি ভাইরাস)। এই ভাইরাসের সংক্রমণ মানেই জীবন-মরণ সমস্যা। এটি ধীরে ধীরে শরীরে বাড়তে থাকে এবং এক সময় এইডস রোগে রূপ নেয়। এই ভাইরাস প্রতিহত করার উপায় এখনো আবিষ্কার করতে পারেনি চিকিৎসা বিজ্ঞান। তবে একবার কেউ সংক্রমিত হলে, সারা জীবন এই ভাইরাস নিয়েই বাঁচতে হয় তাকে। দশকের পর দশক গবেষণার পরেও পথ খুঁজে পাননি চিকিৎসকেরা। তবে সম্প্রতি এইচআইভি নিয়ে বিস্ময়কর এক ঘটনা ঘটেছে আর্জেন্টিনায়। এইচআইভি সংক্রমিত এক তরুণীর শরীর থেকে হঠাৎই গায়েব হয়ে গিয়েছে ভাইরাস।
জানা যায়, ২০১৩ সালে এইডস ধরা পড়েছিল তরুণীর। তার স্বামীরও এইডস ছিল। তিনি মারা যান। কিন্তু এই মারন ভাইরাসকে হারিয়ে দিয়েছেন তরুণী। এতে বিস্মিত চিকিৎসকেরা। তাদের দাবি, প্রাকৃতিকভাবে কারো এইচআইভি-মুক্ত হওয়ার ঘটনা বিশ্বে এই প্রথম। আর্জেন্টিনার এসপেরানজা শহরের বাসিন্দা ৩০ বছর বয়সি এইচআইভি আক্রান্ত তরুণী আর পাঁচজন সংক্রমিতের মতো ছিলেন না। চিকিৎসকদের পরিভাষায় ‘এলিট কন্ট্রোলার’ ছিলেন তরুণী অর্থাৎ তিনি সংক্রমিত হওয়ার বহু বছর পড়ে এইচআইভি-র উপস্থিতি ধরা পড়ে শরীরে। অসুখ ধরা পড়ার পরে ওষুধ খেতে শুরু করেন তিনি। তারপরে আচমকাই ঘটে যায় এই ঘটনা। এক সময়ে তিনি ওষুধ খাওয়া বন্ধ করে দেন। কিন্তু অসুখ আর ফিরে আসেনি। যেটা সাধারণত হয় না। সম্প্রতি এই সংক্রান্ত একটি রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে আমেরিকান জার্নাল ‘অ্যানালস অব ইন্টারনাল মেডিসিন’-এ।
মানব শরীরে যে কোনো ভাইরাস সংক্রমণের পরে দেখা যায়, ভাইরাসটি শরীরে প্রতিলিপি গঠন করতে থাকে। এই আর্জেন্তিনীয় তরুণীর ক্ষেত্রেও দেখা গিয়েছে, তার ডিএনএ-তে ভাইরাসের উপস্থিতির কোনো ছাপ নেই অর্থাৎ ‘প্রোভাইরাস’ গঠন হয়নি। ‘প্রোভাইরাস’ হল— যখন ভাইরাসের জেনেটিক মেটেরিয়াল মানব কোষের (হোস্ট সেল) ডিএনএ-র মধ্যে ঢুকে যায় এবং মানব কোষের জিনোমের সঙ্গেই প্রতিলিপি গঠন করতে থাকে। এ ক্ষেত্রে গবেষকেরা বহু ‘তল্লাশির’ পরেও ভাইরাসের অস্তিত্ব খুঁজে পাননি তরুণীর দেহে। তারা বলছেন, এটিকে বলে ‘স্টেরিলাইজিং কিওর’ অর্থাৎ, ওই তরুণীর শরীরের ভাইরাসের কোনো প্রতিলিপি নেই।
কিন্তু কী ভাবে এই আশ্চর্যজনক ঘটনা ঘটল? বিজ্ঞানীরা বলছেন— ‘রহস্য’। এর আগেই দু’জন এইচআইভি রোগীর সুস্থ হয়ে ওঠার নজির রয়েছে। কিন্তু তাদের রক্তে ক্যানসার ছিল। সে জন্য তাদের দীর্ঘ চিকিৎসা চলেছিল। স্টেম সেল প্রতিস্থাপণও করা হয়েছিল। তারপর এক সময়ে তারা এইচআইভি-মুক্ত হন। কিন্তু এ ক্ষেত্রে এ সব কিছুই হয়নি। সবটাই ঘটেছে প্রকৃতির নিয়মে এবং কী ভাবে হল, তার কোনও উত্তর নেই চিকিৎসকদের কাছে। একটি বিষয়েই শুধু তারা দ্বিধাহীন। তা হলো এই রোগ থেকে সেরে ওঠা সম্ভব।
বস্টনের ‘রেগন ইনস্টিটিউট’-এর এক বিশেষজ্ঞ বলেন প্রাকৃতিক ভাবেই ওই রোগী সুস্থ হয়ে উঠেছেন। বিশেষজ্ঞদের পর্যবেক্ষণ, এইভাবে প্রাকৃতিক নিয়মে শরীর থেকে ভাইরাসের অবলুপ্তির ঘটনা বিরল। কিন্তু এমনটা হওয়াও যে সম্ভব, তা এই প্রথম জানা গেলো।