কলকাতা ব্যুরো: দীর্ঘ টালবাহানার শেষে আনিস খানের (#AnisKhan) মৃত্যুর ছ ‘দিন পরে ওসিকে সরিয়ে দেওয়া হলো দায়িত্ব থেকে। বৃহস্পতিবার রাতে এই খবর প্রকাশ হয়েছে ভবানী ভবন থেকে। আমতা থানার ওসি দেবব্রত চক্রবর্তীকে ছুটিতে যেতে বলা হয়েছে বলে জানানো হয়েছে পুলিশের তরফে। তবে এমন একদিন এই সিদ্ধান্ত নিল রাজ্য পুলিশ, যেদিন দুপুরে ওই খুনের ঘটনায় ধৃত অভিযুক্তরা পুলিশকর্মীরা প্রকাশ্যে মুখ খুলেছেন ওই ওসির বিরুদ্ধেই। যদিও গোটা ঘটনাক্রমে প্রথম থেকেই ওই ওসির বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছিল।
সূত্রের খবর, ওসির দায়িত্বজ্ঞান হীনতায় তাই মুখ পুড়েছে জেলা পুলিশের (West Bengal Police)। জেলার পুলিশ সুপার শনিবার থেকে রবিবার দুপুর পর্যন্ত একের পর এক বক্তব্য দিয়ে গিয়েছেন, ওই ঘটনায় পুলিশ জড়িত নয় বলে। সূত্রের খবর, ভবানী ভবনে শীর্ষ পুলিশকর্তাদের সামনে এসেও ওই পুলিশ সুপার জানিয়েছিলেন, তাঁকে ওসি জানিয়েছেন, শুক্রবার গভীর রাতে আনিস খানের বাড়িতে তার থানার পুলিশ যায়নি। যার ফলে সংবাদমাধ্যম থেকে শুরু করে সরকারকেও পুলিশ সুপার ভুল তথ্য দিতে বাধ্য হয়েছেন।
যদিও রবিবার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ঘটনাস্থলে গিয়েই মূল সত্যটি জানতে পারেন। কিন্তু শেষ নয় এখানেই, গভীর রাতে পুলিশ এসে তার ছেলেকে খুন করে ফেলে দিয়ে গিয়েছে বলে ওই রাতেই থানায় ফোন করেছিলেন মৃত আনিসের বাবা। অথচ তারপরে আট ঘন্টা কেটে গেলেও থানা থেকে ছ কিলোমিটার দূরে পুলিশ গিয়ে পৌঁছতে পারেনি। যা নিয়ে একাধিক বর্ষীয়ান পুলিশ অফিসার অভিযুক্ত করেছেন থানার ওসিকে। তাঁদের মতে, যেকোনো জায়গায় কোন খুনের ঘটনা ঘটলেই তৎক্ষণাৎ সেখানে পুলিশ পৌঁছে আগে মৃতদেহ বা জখম কেউ থাকলে তড়িঘড়ি তাদের সরিয়ে নিয়ে গিয়ে স্থানীয় হাসপাতাল বা নার্সিংহোমে ভর্তি করা পুলিশের দায়িত্ব। সেক্ষেত্রে একদিকে আহতের বাঁচার সুযোগ থেকে যায়। অন্যদিকে মানুষের ক্ষোভও বাড়তে পারে না। অথচ এক্ষেত্রে হয়েছে ঠিক তার উল্টো।
এক্ষেত্রেও থানার ওসি তার দায় এড়াতে পারেন না। পরের দিন সকাল ন’টায় পুলিশের পৌঁছনো নিয়ে মানুষের মনে ক্ষোভের আগুনে যে ঘি ঢেলেছে, তা এককথায় মানছেন বর্ষীয়ান পুলিশ অফিসাররা। তাদের বক্তব্য, সেই কারণেই প্রথমে তিনজনকে সাসপেন্ড করা হয়েছিল। আবার যে হোম গার্ড এবং সিভিক ভলেন্টিয়ারকে ওই ঘটনায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তারা বৃহস্পতিবার উলুবেড়িয়া আদালত চত্বরে মুখ খোলেন সংবাদমাধ্যমের সামনে। তাদের বক্তব্য, বলির পাঠা করা হচ্ছে নিচুতলার কর্মী হিসেবে তাদেরই। গোটা ঘটনা জানতেন থানার ওসি। এরপরেই রাজ্য সরকার ওই ওসিকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেয়।
যদিও পুলিশের একটি সূত্রের দাবি, বিভিন্ন মামলায় অভিযুক্তদের ধরার ব্যাপারে ওয়ারেন্ট ইস্যু হয়ে পড়েছিল। ওসি সেইসব ওয়ারেন্ট (#Warrant ) কার্যকর করতে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দিয়েছিলেন অধস্তনদের। সেই চাপেই কয়েকজন সেই রাতে আনিস খানের বাড়িতে যায় পুরনো একটি মামলার সূত্রে। যদিও সে কথা তখন ওসিকে জানানো হয়নি। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, তার থানার পুলিশ কর্মীরা স্থানীয় এক বাড়িতে গিয়ে মধ্যরাতে হামলা চালালো, খুনে অভিযুক্ত হলো, অথচ ঘটনার দুদিন পরেও কেন ওসি ভুল তথ্য দিলেন পুলিশ সুপারকে। এক্ষেত্রে ওসি যদি নিচুতলার কর্মীদের নির্দেশ দিয়ে থাকেন, সেক্ষেত্রে তাকে এ ব্যাপারে অন্য কেউ নির্দেশ দিয়েছিল কিনা তা খুঁজে বের করার দাবি ক্রমেই জোরালো হচ্ছে।
পরিবারের আশঙ্কা, পুলিশকে নির্দেশ দিয়ে কেউ বা কারা ওই রাতে পাঠিয়েছিল আনিস খানের বাড়িতে। ওসি অপসারিত হলেও, পরিবার কিন্তু এখনো পুলিশের উপরে ভরসা দেখাচ্ছে না, যা যথেষ্টই বিড়ম্বনায় ফেলছে রাজ্য সরকারকে।