কলকাতা ব্যুরো: সংক্রমণ ছড়ানোর ক্ষেত্রে দীর্ঘ সময়ের যাত্রা এমনিতেই দুশ্চিন্তার কারণ ছিল। এবার হাতেনাতে এল প্রমাণও। একটি সমীক্ষায় উঠে এসেছে কোনও করোনা পজিটিভ ব্যক্তির সঙ্গে যাত্রা করলে সংক্রমণ ছড়াচ্ছে আরও দ্রুত। শুধু তাই নয়, ভারতে করোনা পজিটিভ ধরা পড়ার মাত্র ৬ দিনের মধ্যে মৃত্যুর তথ্যও উঠে এসেছে এই সমীক্ষায়।
এ ক্ষেত্রে তামিলনাড়ু ও অন্ধ্রপ্রদেশের প্রায় ৮৫ হাজার করোনা পজিটিভ কেস ও তাদের সঙ্গে কোনও না-কোনও ভাবে যোগাযোগে এসেছে এমন ৫ লক্ষ ৭৫ হাজারেরও বেশি সংখ্যক মানুষের ওপর এই সমীক্ষা চালানো হয়। জানা গিয়েছে, বয়স্ক ব্যক্তিরা এই সংক্রমণ থেকে আশ্চর্যজনক ভাবে নিরাপদ থাকছেন। কিন্তু ১৪ বছরের মধ্যেকার শিশু ও কিশোর-কিশোরীরা তাঁদের বন্ধুদের কাছ থেকে তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে সংক্রমিত হচ্ছে।
প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়, ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, বার্কলে অ্যান্ড জনস হপকিনস ব্লুমবার্গ স্কুল অফ পাবলিক হেল্থের সমীক্ষক দল কোভিড-১৯ নিয়ে বিশ্বের বৃহত্তম সমীক্ষার পর এমনই উল্লেখ করেছেন সাইন্স নামক জার্নালে। সমীক্ষায় যোগদান রয়েছে, তামিলনাড়ু ও অন্ধ্রপ্রদেশের সরকারি আধিকারিকদেরও।
মৃত্যুর হার নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে প্রায় ১ লক্ষ ২৫ হাজার জনের ওপর সমীক্ষা করে জানা গিয়েছে, করোনা পজিটিভদের অর্ধেক অংশ সংক্রমণ ধরা পড়ার ৬ দিনের মধ্যেই প্রাণ হারাচ্ছেন। আবার ১,০২৪ জনের করোনা ধরা পড়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মৃত্যু হয়েছে। মৃত ব্যক্তিদের অধিকাংশই ডায়াবেটিস, হাইপারটেনশন, কোরোনারি আর্টারি ডিসিস ও রেনাল ডিসিসে ভুগছিলেন। ৬২.৫ শতাংশ ক্ষেত্রে মৃত ব্যক্তিরা আগে থেকেই এগুলির মধ্যে অনন্ত একটি রোগের শিকার ছিলেন।
অন্যদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে হাসপাতালে ভর্তির ১৩ দিনের মধ্যে মৃত্যুর ঘটনা রেকর্ড করা হয়েছে। আবার চিনা গবেষণার ভিত্তিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, ২ থেকে ৮ সপ্তাহের মধ্যে মৃত্যুর ঘটনা নজরে পড়েছে।
তামিলনাড়ু ও অন্ধ্রপ্রদেশে যে দলটি সমীক্ষা চালিয়েছে, তাঁদের ধারণা, ২৪ ঘণ্টা থেকে ৬ দিনের মধ্যে যাঁদের মৃত্যু হয়েছে, তাঁদের করোনা ধরা পড়েছে সংক্রমিত হওয়ার বহু দিন পর।
সমীক্ষায় এ-ও উঠে এসেছে, মাত্র ৯ শতাংশ মানুষ পরিবারের কোনও করোনা পজিটিভ ব্যক্তির দ্বারা সংক্রমিত হয়েছেন। কিন্তু ৭৯.৩ শতাংশ ব্যক্তির মধ্যে সংক্রমণ ছড়িয়েছে কোনও করোনা পজিটিভের সঙ্গে যাত্রার ফলে। সমীক্ষা বলছে, কোনও সুস্থ ব্যক্তি যদি যাতায়াতের সময় যানবাহনে ৬ ঘণ্টার বেশি সময় কোনও করোনা পজিটিভের সঙ্গে কাটান, তাহলে সংক্রমণ ছড়িয়েছে ৭৯.৩ শতাংশ ক্ষেত্রে।
শুধু তাই নয়, এ-ও উঠে এসেছে যে, অন্যান্য দেশের তুলনায় ভারতে ৪০ থেকে ৭০ বছর বয়সি ব্যক্তিরা করোনা দ্বারা সংক্রমিত হন বেশি। এমনকি সমীক্ষক দলের হাতে প্রমাণ এসেছে, এই দুই রাজ্যে সংক্রমিত জনসংখ্যার ৮ শতাংশের মাধ্যমে ৬০ শতাংশ গৌণ সংক্রমণ ছড়িয়েছে। এমনই সমীক্ষা কেরল ও মহারাষ্ট্রের মতো রাজ্যে হওয়া উচিত বলে মনে করে দলটি।
তবে সংক্রমণ ছড়ানোর ক্ষেত্রে বাচ্চাদের ভূমিকা তর্কাতিত নয়। সমবয়সী করোনা পজিটিভের সঙ্গে মেলামেশার ফলে বাচ্চাদের মধ্যে সংক্রমণের প্রাদুর্ভাব লক্ষ্য করেছেন সমীক্ষকরা। উল্লেখ্য এই তথ্য প্রকাশিত হওয়ার দিনই, কেন্দ্রের কাছ থেকে ধাপে ধাপে স্কুল খোলার ক্ষেত্রে চিন্তা-ভাবনার অনুমতি মিলেছে রাজ্য সরকারগুলিকে। সে ক্ষেত্রে স্কুল খুললে এই তথ্যটিকে নিছকই উড়িয়ে দেওয়া যাবে না।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version