এক নজরে

নয়াদিল্লি স্টেশনে পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যুর দায় কার

By admin

February 17, 2025

মহাকুম্ভে পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যুমিছিলের রেশ এখনও কাটেনি। তার মধ্যেই ফের বিপর্যয়। নয়াদিল্লি স্টেশনে পদপিষ্ট হয়ে মর্মান্তিক মৃত্যু ১৮, আহতও হয়েছেন বহু। রেল পদপিষ্টের ঘটনাকে প্রথমে গুজব বলে দাবি করলেও পরে দুর্ঘটনার কথা স্বীকার করে। শনিবার রাতে নয়াদিল্লি স্টেশনে যে দুর্ঘটনা ঘটেছে, তার কারণ হিসেবে একাধিক তথ্য উঠে এসেছে। তার চেয়ে বড় প্রশ্ন উঠেছে রেলের ভূমিকা নিয়ে। জানা গিয়েছে, রেল প্রতি ঘণ্টায় প্রায় ১৫০০ জেনারেল টিকিট বিক্রি করছিল। টিকিট নিশ্চিত না হলেও যাত্রীদের ট্রেনে উঠে পড়তে বলা হয়। যাঁদের কাছে নিশ্চিত টিকিট ছিল, সংরক্ষিত আসন যাঁরা বুক করেছিলেন দেখা গিয়েছে তাঁরাই ট্রেনে উঠতে পারেননি। অথচ টিকিট ছাড়াও বহু মানুষ ট্রেনে ওঠার জন্য ঠেলাঠেলি করেছেন। প্রশ্ন, যেখানে প্রয়াগরাজ যাওয়ার দেদার টিকিট বিক্রি হওয়ায় প্ল্যাটফর্মে ভিড় উপচে পড়ে কিন্তু রেল তার পরও কেন ট্রেন না বাড়িয়ে কেন প্ল্যাটফর্ম বদল করা হয়? ট্রেনে উপচে  পড়া ভিড় দেখেও রেল ভিড় নিয়ন্ত্রণের পদক্ষেপ করে না? কয়েকদিন আগে কুম্ভের ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়েও কেন সতর্ক ছিল না রেল প্রশাসন? উঠে আসছে একাধিক প্রশ্ন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, প্রয়াগরাজের ট্রেন ধরতে ১২, ১৩, ১৪ ও ১৬ নং প্ল্যাটফর্মে উপচে পড়া ভিড় ছিল। নয়াদিল্লি স্টেশনের ১৪ নম্বর প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়েছিল প্রয়াগরাজ এক্সপ্রেস। স্বতন্ত্র সেনানী ও ভুবনেশ্বর রাজধানী আসতে দেরি করায় স্টেশনে ভিড় ক্রমশ বাড়তে থাকে। ভিড় উপচে পড়ে ১২, ১৩ ও ১৪ নম্বর প্ল্যাটফর্মে সেইসঙ্গে বার বার প্ল্যাটফর্ম বদলের ঘোষণা হওয়াতে যাত্রীদের হুড়োহুড়ি পড়ে যায়। ১২ নম্বর প্ল্যাটফর্মে ঢোকার কথা ছিল ট্রেনের। কিন্তু হঠাৎই ঘোষণা হয়, ওই ট্রেন ১৬ নম্বর প্ল্যাটফর্মে ঢুকবে বলে। বিভ্রান্ত হয়ে যাত্রীরা এদিক ওদিক ছুটতে শুরু করেন। আর তার থেকেই পরিস্থিতি জটিল হয়ে পড়ে কিন্তু সেই পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার মতো পুলিশ যেমন ছিল না, পাশাপাশি ছিল না রেলের নজরদারি। এই ঘটনার দায় কোনোভাবেই এড়িয়ে যেতে পারেনা রেল। প্রশ্ন, মহাকুম্ভ বলে জে এত প্রচার, সেখানে যাতে লক্ষ লক্ষ মানুষকে যাওয়ার জন্য উৎসাহ দেওয়া কিন্তু তাতে কাতারে কাতারে মানুষ সারা দিচ্ছে, ভিড় হচ্ছে দেখেও কেন বেশি ট্রেন চালালো না রেল? উলটে ঘটনার দায় ঘাড় থেকে নামিয়ে দিতে পদপিষ্টের ঘটনাকে গুজব বলে ধামা চাপা দেওয়ার চেষ্টা? প্রশ্নের মুখে পড়লেই দাবি সরকার ঢোক গিলে দুর্ঘটনার কথা স্বীকার করে, রেল কর্তৃপক্ষও এক্ষেত্রে সেই পদক্ষেপ করেছে। কেন এই দুর্ঘটনা ঘটল, তা জানতে দুই সদস্যের উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন রেলমন্ত্রী এবং রেলের তরফে ক্ষতিপূরণের ঘোষণাও করা হয়েছে। কিন্তু তাতেই কি ঘটনার দায় অস্বীকার করা যায় না দায় এড়ানো যায়?

নয়াদিল্লিতে পদপিষ্ট হওয়ার ঘটনার অন্যতম কারণ যদি অতিরিক্ত ভিড় হয় তাস্বত্তেও বলতে হবে রেলের গাফিলতি ছিল। ভিড়ের কারণ কুম্ভ যাওয়ার উদ্দেশে শনিবার রাতে শয়ে শয়ে মানুষ জড়ো হন নয়াদিল্লি স্টেশনে। আসলে নয়াদিল্লি স্টেশন থেকে একাধিক ট্রেন হয় সরাসরি কুম্ভে যাওয়ার কথা, নয়তো কুম্ভ হয়ে অন্য গন্তব্যে যাওয়ার কথা। সেই ট্রেনগুলির আশায় দাঁড়িয়েছিলেন কয়েক হাজার মানুষ।স্বতন্ত্রতা সেনানী এক্সপ্রেস এবং ভুবনেশ্বর-রাজধানী এক্সপ্রেস এই দুটি ট্রেনে প্রয়াগরাজ যাবেন বলে বহু মানুষ ১২ এবং ১৩ নম্বর প্ল্যাটফর্মে অপেক্ষা করছিলেন। কিন্তু দুটি ট্রেনের কোনওটিই সময়মতো পৌছয়নি। এর মধ্যে গুজব ছড়িয়ে পড়ে যে ট্রেনদুটি বাতিল হয়েছে। এর মধ্যে কুম্ভের জন্য স্পেশাল ট্রেন প্রয়াগরাজ এক্সপ্রেস ঢুকে পড়ে ১৪ নম্বর প্ল্যাটফর্মে। প্রয়াগরাজ এক্সপ্রেস আসতে দেখে ওই ট্রেনের যাত্রীরা এবং বাকি দুটি ট্রেনের যাত্রীরাও ১৪ নম্বর প্ল্যাটফর্মের দিকে ছুটতে থাকেন। সকলে একসঙ্গে ওই ট্রেনটিতে ওঠার চেষ্টা করলে অনেকে পড়ে যান। বহু লোক তাঁদের মাড়িয়েই ট্রেনের দিকে ছুটে যান আর্তনাদ-চিৎকার তোয়াক্কা না করে। এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে রেল পুলিশ কার্যত ব্যর্থ হয়। প্রশ্ন ভিড় এবং তা থেকে হুড়োহুড়ির পরিস্থিতি তৈরি হল কেন? প্রথমত দুটি ট্রেন লেট। কেবল লেট নয়, এতটাই ‘লেট’ যে গুজব ছড়িয়ে পড়ে ট্রেনদুটি বাতিল হয়ে গিয়েছে। তাছাড়া ট্রেনের প্ল্যাটফর্ম নিয়ে বিভ্রান্তিকর ঘোষণা শোনা গিয়েছে বলে দাবি। চমকপ্রদ বিষয় হল, প্রয়াগরাজ যাওয়ার জন্য দেড় হাজার যাত্রী অসংরক্ষিত টিকিট কেটেছিলেন। এত বিশাল সংখ্যক অসংরক্ষিত টিকিট বিক্রির পরও কোনওরকম সচেতনতামূলক পদক্ষেপ করা হয়নি।