এক নজরে

বেজিংয়ের জন্য দিল্লির দরজা খোলায় আদবে লাভ কার?

By admin

February 25, 2021

মৈনাক শর্মাগালওয়ানে চিন – ভারতের সেনার হাতাহাতির ঘটনাতে দিল্লির নাম না জড়ানো এবং তার পরেই সীমান্ত থেকে সৈন্য সরিয়ে সীমা বিবাদ মেটানোর মধ্যে বেজিং এর ভারতের প্রতি কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনঃ গঠনের সংকেত দিচ্ছে। আর এই সংকেতকে স্পষ্ট করতেই দিল্লিতে আয়োজিত বৃক্স সম্মেলনকে সমর্থন করে বেজিং। সূত্রের খবর অনুসারে, ভারতের আয়োজিত বৃক্স সম্মেলনে সামিল হতে পারেন চিনা প্রেসিডেন্ট সি জিংপিং।এই খবর প্রকাশের পরেই ভারত ও চীনের আবার বন্ধুত্ব হবে এই আশায় রয়েছে দূনিয়া। তাছাড়া দিল্লির তরফেও নয় মাস পর খুলতে চলেছে চিনা বিনিয়োগ।

এর ফলেই প্রশ্ন থাকছে ভারতের ও চিনের কূটনীতির ভবিষ্যৎ নিয়ে। প্রশ্ন থাকছে, ভারত চিনের কেবলই বাজারে পরিণত হবে কি না তা নিয়ে।

চীন ও ভারতের বাণিজ্যিক আদান প্রদান

অর্থনীতিতে উন্নত দেশগুলির অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য বিনিয়োগই হলো একমাত্র উপায়। সেক্ষেত্রে ভারত হলো বিশ্বের প্রথম পাঁচটি অর্থনৈতিক প্রভাবশালী দেশের মধ্যে একটি। লাদাখে দুই দেশের সীমা বিবাদের জেরে দিল্লির ডাকা বয়কট চীন নীতির ফলে দুই দেশের মোট ৮৭.৬ বিলিয়ন ডলারের ব্যবসা হয়। যা অন্য সালের তুলনায় ৫.৬ শতাংশ কম। অর্থাৎ ক্ষতির মুখ দেখে চিন। অর্থাৎ দিল্লির সাথে সীমা বিবাদ জিইয়ে রাখলে ভারতের মতো বড় বাজার হাতছাড়া হবে চিনের।

একই ভাবে আমদানির ক্ষেত্রে দিল্লি এখনও বেজিং এর উপর নির্ভরশীল। ভারত -চিনের থেকে প্রায় ৬৬.৭ বিলিয়ন ডলারের আমদানি করে। যা সীমা বিবাদের ফলে ১০.৮ শতাংশ কম হয়েছে। চীনের দ্রবের উপর অধিক ট্যাক্স চাপানোর প্রভাব পরে ভারতের অটোমোবাইল ও ইলেকট্রিক ব্যবসায়। তাছাড়াও চিনে ভারতের রপ্তানি ১৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। যা প্রথম বার ছাড়িয়ে ২০ বিলিয়ন (20.86)হয়। কম হয়েছে ভারত ও চীনের বাণিজ্যিক ঘাটতিরও, অর্থাৎ চিনে ভারতের ব্যবসার পজিটিভ উন্নতির সম্ভাবনা রয়েছে।

চিন – ভারতের বাণিজ্যিক সম্পর্কের উজ্জ্বলতা রয়েছে। কিন্তু ভারতের প্রকল্পে চিনা উপস্থিতি বা চিনের বিনিয়োগ সমস্যায় ফেলতে পারে দিল্লিকে, মত বিশ্লেষকদের।

ভারতে চিনা বিনিয়োগ

করোনার ফলে লকডাউনে যার বাজে প্রভাব পড়েছে ভারতের স্বাস্থ্য ও অর্থনীতির উপর, এই অবস্থায় অর্থনীতি ও করোনা থেকে দেশ বাঁচাতে ভারতের প্রয়োজন বিদেশী বিনিয়োগ। তার জেরেই করোনার জন্য প্রায় ৭৫০ মিলিয়ান অর্থ সাহায্য করে চিনা সমর্থণ প্রাপ্ত এশিয়ান ইনফরাট্রাকচার ব্যাংক (AIIB)। শুধু তাই নয়, ভারতের বেঙ্গালুরু মেট্রো ও মুম্বাই আরবান ট্রান্সপোর্ট প্রকল্পেও সাহায্য রয়েছে এ আই আই বির। যার ফলে শর্ত সাপেক্ষ সাহায্যের জন্য না চাইলেও ভারতের প্রকল্পে থাকছে চিনা কোম্পানিগুলির উপস্থিতি। যা আগামীতে পিছিয়ে দিতে পারে ভারতীয় কোম্পানি গুলিকে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নিতিন গারকারীর মতে, ভারতীয় অর্থনীতির গ্রাফ আবার তুলতে প্রায় ৫০ থেকে ৬০ হাজার কোটির বিদেশী বিনিয়োগ প্রয়োজন। যার ফলে ২০২০ সালের এপ্রিল মাসে বাতিল হওয়া চিনা বিনিয়োগ আনতে চলেছে দিল্লি। কিন্তু ভারতীয় অর্থনীতি কে চাঙ্গা করতে চিনা বিনিয়োগ আপাতত অক্সিজেন জোগানোর কাজ করলেও, ভবিষ্যতে সমস্যা হতে পারে দিল্লির।

উন্নতির জন্য বিনিয়োগ প্রয়োজন। সে ক্ষেত্রে শর্ত সাপেক্ষ সাহায্যের পরিবর্তে মুক্ত সাহায্যের জন্য চাপ দিতে হবে এশিয়ান ইনফরাট্রাকচার ব্যাংকের মতো সংস্থা গুলিকে। চীনের সাথে দিল্লির কূটনৈতিক সম্পর্ক এক প্রতিযোগিতা মূলক পরিবেশ সৃষ্টি করবে। ভারতের দেশীয় কোম্পানি গুলির মধ্যে এই অবস্থায় দিল্লির ডাকা আত্মনির্ভর ভারতের নীতির সামনে তৈরী হবে নতুন চ্যালেঞ্জ। তাছাড়া শ্রীলংকাতে অধিক চিনা বিনিয়োগের কুফলকে মাথায় রেখে আপাতত সম্পূর্ণ বিদেশী বিনিয়োগ না খোলার দিল্লির নীতি একটি প্রশংসা প্রাপ্ত পদক্ষেপ।