৯৭তম অস্কারে এ বছর সেরা চলচ্চিত্রের পুরস্কার ঘরে তুলেছে শন বেকারের ‘আনোরা’। এর আগে, কান চলচ্চিত্র উৎসবেও স্বর্ণপাম জিতেছিল এই ছবিটিট। উল্লেখ্য, এবার অস্কারের মঞ্চে তিনটি ঘটনা ঘটেছে যেগুলিকে বিশেষ বলা যায় বা অন্য কিছুও বলা যেতে পারে তবে বিষয়গুলি যে বিরাট সংখ্যক দর্শক এমনকি আন্তর্জাতিক মিডিয়ারও দৃষ্টি কেড়েছে তা বলা বাহুল্য।একটি ঘটনার কেন্দ্রে আছে ব্রাজিল আর অন্যটির কেন্দ্রে ফিলিস্তিন। এছাড়া বিশেষভাবে উঠে এসেছে আদিবাসীদের কথাও। প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক ফিচার ফিল্ম বিভাগে জয়ী হওয়ার গৌরব অর্জন করে ব্রাজিল। ওয়াল্টার সালেস পরিচালিত এই ছবি ইউনিস পাইভারের বাস্তব জীবনের গল্পকে কেন্দ্র করে নির্মিত। সম্প্রতি ছবিটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। ‘আই য়্যাম স্টিল হেয়ার’ ছবিটি ‘এমিলিয়া পেরেজ’ ছবিটিকে পেছনে ফেলে সেরা আন্তর্জাতিক সিনেমার পুরস্কার জিতেছে। অবশ্য ‘এমিলিয়া পেরেজ’ ছবিতে আইনজীবীর চরিত্রে অভিনয় করে পার্শ্বচরিত্রে সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার জিতেছেন জোয়ি সালডানা। এবারের অস্কারে সেরা তথ্যচিত্রের পুরস্কার জিতেছে ‘নো আদার ল্যান্ড’। ফিলিস্তিনিদের সংগ্রাম নিয়ে নির্মিত এই তথ্যচিত্র। ইসরায়েল ও ফিলিস্তিন নির্মাতাদের যৌথভাবে নির্মিত এই চলচ্চিত্রে কর্মী বাসেল আদরার জীবন অনুসরণ করা হয়েছে, যিনি গ্রেফতারের ঝুঁকি নিয়ে তার নিজের শহরে ধ্বংসযজ্ঞের তথ্যচিত্র তৈরি করেন।

ফিলিস্তিনি তথ্যচিত্র ‘নো আদার ল্যান্ড’-এর নির্মাতারা হলেন বাসেল আদ্রা, হামদান বল্লাল, ইউভাল আব্রাহাম, রাচেল সোর। যখন ইসরায়েলি বাহিনী বহিষ্কার করা দেশের বিরুদ্ধে আদ্রার সম্প্রদায় বাঁচা মরার লড়াই করছে। শৈশব থেকেই আদ্রা সামরিক দখলে তার অঞ্চলে বাড়িঘর ধ্বংস এবং বাসিন্দাদের বাস্তুচ্যুত হওয়ার সঙ্গে বড় হয়েছেন। স্বাভাবিকভাবে তার গল্প আর নির্মাণে সেগুলোর প্রভাব স্পষ্ট তাকে নাড়া দিয়েছে। আদ্রার প্রচেষ্টার প্রতি সমর্থনে এগিয়ে আসেন একজন ইসরায়েলি সাংবাদিক। ওই সাংবাদিক নিজেও ইসরায়েল কর্তৃক ফিলিস্তিনিদের বাস্তুচ্যুত করার সাক্ষী। এই বৈষম্যের বিরুদ্ধে যিনি নিজেও কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়েছেন। তথ্যচিত্রটি এর আগে প্রাক-অস্কার পুরস্কার বিভাগে বেশ প্রভাব বিস্তার করে এবং সম্মানিত হয়। এছাড়াও আইডিএ পুরস্কারে সেরা তথ্যচিত্র এবং সেরা পরিচালক, ইউরোপীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে সেরা ইউরোপীয় তথ্যচিত্র এবং বার্লিনে সেরা তথ্যচিত্রের মর্যাদা অর্জন রয়েছে তাদের ঝুলিতে।

সমালোচক আর বিশেষঙ্গেরা চারটি সিনেমাকে রেখেছিলেন তালিকার একেবারে শীর্ষে। সেগুলি মনোনয়নও পেয়েছিল কিন্তু শেষমেশ ‘কনক্লেভ’, ‘দ্য ব্রুটালিস্ট’, ‘এমিলিয়া পেরেজ’কে পেছনে ফেলে সেরা হল ‘আনোরা’। সেই সঙ্গে পরিচালক শন বেকার পেলেন সেরা নির্মাতার খেতাব আর ২৫ বছর বয়সী মিকি ম্যাডিসন হলেন সেরা অভিনেত্রী। ছবিটি এর আগে কান উৎসবে স্বর্ণপাম জিতেছিল। তখনই থেকেই আলোচনায় ছিল আনোরা। এবারের ৯৭ তম আসরে সেরা অভিনেতার পুরস্কার জিতেছেন অ্যাড্রিয়েন ব্রডি। ‘দ্য ব্রুটালিস্ট’ সিনেমায় অভিনয়ের জন্য তার এই পুরস্কার। এর আগে চলতি বছর একই সিনেমার জন্য গোল্ডেন গ্লোবেও সেরা অভিনেতা হয়েছেন তিনি।পুরস্কার হাতে নিয়ে ব্রডি বলেন, “যুদ্ধ, নিপীড়নের দীর্ঘস্থায়ী ট্রমা, ইহুদিবিদ্বেষ, বর্ণবাদ এবং অন্য বিষয়গুলোর প্রতিনিধিত্ব করতে আমি আবার এখানে এসেছি। আমি সবাইকে নিয়ে একটি সুখী পৃথিবীর জন্য প্রার্থনা করি”।বলে রাখা ভালো ২০০২ সালে ‘দ্য পিয়ানিস্ট’ ছবির জন্য সর্বকনিষ্ঠ অভিনেতার পুরস্কার জিতেছিলেন ব্রডি। মাত্র ২৯ বছর বয়সে অস্কার জেতা ছিল এক অনন্য অর্জন। তারপর প্রায় ২২ বছর পর আবার একই মঞ্চে অস্কার হাতে উঠল তাঁর। দু’বার মনোনয়ন ও দু’বার অস্কার জেতার রেকর্ডও তাঁর। এছাড়া পার্শ্ব চরিত্রে সেরা অভিনেতার পুরস্কার জিতেছেন কিয়েরান কালকিন এবং পার্শ্ব চরিত্রে সেরা অভিনেত্রী হয়েছেন জোয়ি সালডানা।

সেরা পার্শ্ব অভিনেতার পুরস্কার জিতে নেওয়া কালকিনের ক্যারিয়ার প্রায় দুই যুগের। ‘অ্যা রিয়েল পেইন’ সিনেমায় অভিনয় করে এবার তিনি অস্কার জয় করলেন। মাঝে অবশ্য ব্যক্তিজীবন নিয়ে বেশ ঝামেলাতেই ছিলেন বলা যায়। অনেক কাজও ফিরিয়ে দিয়েছেন। তাই এবারের অস্কার জেতা তার ক্যারিয়ারে জন্য একটা গুরুত্ব বহন করে। তিনি সিনেমার লেখক এবং পরিচালক জেসি আইজেনবার্গকে ধন্যবাদ জানিয়ে মঞ্চে বলেন, ‘এই সিনেমার জন্য ধন্যবাদ, তুমি একজন প্রতিভা। জ্যাক অঁদিয়ারের ‘এমিলিয়া পেরেজে’ সিনেমার জোয়ি সালদানা আইনজীবীর চরিত্রে অভিনয় করে নজর কাড়া এক অভিনেত্রী। হাতে অস্কার নিয়ে পরিবারকে অস্কার উৎসর্গ করেন সালদানা। নিজেকে অভিবাসীর সন্তান হিসেবে গর্বিত বলে বর্ণনা করেছেন এই অভিনেত্রী। তিনি বলেন, ‘আমি গর্বিত এবং অভিভূত। নারীর নীরব বীরত্ব এবং শক্তিকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য একাডেমিকে ধন্যবাদ।

অস্কারের তালিকাঃ সেরা সিনেমা: আনোরা, সেরা অভিনেত্রী: মাইকি ম্যাডিসন (আনোরা), সেরা অভিনেতা: অ্যড্রিয়েন ব্রডি (দ্য ব্রুটালিস্ট), সেরা পরিচালক: শন বেকার (আনোরা), সেরা পার্শ্ব অভিনেত্রী: জোয়ি সালদানা (এমিলিয়া পেরেজ), সেরা পার্শ্ব অভিনেতা: কিইরিন কালকেইন (আ রিয়েল পেইন), সেরা রূপান্তরিত চিত্রনাট্য: কনক্লেভ (পিটার স্ট্রন), সেরা মৌলিক চিত্রনাট্য: আনোরা (শন বেকার), সেরা মৌলিক গান: এল মাল (এমিলিয়া পেরেজ), সেরা মৌলিক সুর: দ্য ব্রুটালিস্ট, সেরা আন্তর্জাতিক ফিচার ফিল্ম: আই এম স্টিল হিয়ার-ব্রাজিল, সেরা অ্যানিমেটেড ফিচার ফিল্ম: ফ্লো, সেরা প্রামাণ্যচিত্র: নো আদার ল্যান্ড•, সেরা পোশাক পরিকল্পনা: উইকেড, সেরা রূপসজ্জা ও কেশসজ্জা: দ্য সাবস্ট্যান্স, সেরা শিল্প নির্দেশনা: উইকেড, সেরা শব্দগ্রহণ: ডুন:পার্ট টু, সেরা সম্পাদনা: আনোরা, সেরা চিত্রগ্রহণ: দ্য ব্রুটালিস্ট, সেরা ভিজ্যুয়াল ইফেক্টসব: ডুন: পার্ট টু, সেরা স্বল্পদৈর্ঘ্য: আই অ্যাম নট আ রোবট, সেরা অ্যানিমেটেড স্বল্পদৈর্ঘ্য: ইন দ্য শ্যাডো অব ত্যা সাইপ্রেস।
