কলকাতা ব্যুরো: চলতি বছরে শীতের দাপট দেখবে ভারত। সম্প্রতি একটি রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে, সেখানে বলা হয়েছে গ্লোবাল ওয়ার্মিং নয়, বরং শীত দাপট দেখাতে চলেছে। যার প্রভাব পড়তে চলেছে পশ্চিমবঙ্গেও। ভারতে ঋতু পরিবর্তনের ধরন বিশ্বের নানা দেশের তুলনায় অনেকটাই আলাদা। এ বছর যেমন উত্তর ভারত জুড়ে তাপপ্রবাহের জের সবচেয়ে বেশি ছিল। আবার তেমন বৃষ্টির প্রবল দাপটে ধসে বিধ্বস্ত হয়েছে উত্তর-পূর্ব ভারতের একাধিক এলাকা। আলিপুর আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, লা নিনার জন্য এবার বাংলা তথা উত্তর ভারত জুড়েই জাঁকিয়ে ঠাণ্ডা মিলবে। আর এই ঠাণ্ডা এবার বাংলায় পা রাখতে চলেছে বৃষ্টির মধ্যে দিয়েই।
দেখা গিয়েছে গ্রীষ্ম, বর্ষা সব আবহাওয়াতেই চরমতম পরিণতি লক্ষ্য করা গিয়েছে। উত্তরাখণ্ড, মহারাষ্ট্র এবং কেরালায় অস্বাভাবিকভাবে ভারী বৃষ্টিপাতে ভয়ঙ্কর বন্যা দেখেছে দেশ। তেমনই এবার শীতও মারাত্মকভাবে পড়বে। যা এশিয়ার জন্য বিপদ বাড়িয়ে তুলবে বলে মনে করা হচ্ছে। এর কারণ হিসেবে দায়ী করা হচ্ছে উত্তর ভারত প্রশান্ত মহাসাগরে উদ্ভূত এল নিনোকে। সেই কারণেই প্রবল ঠাণ্ডার সাক্ষী হতে চলেছে ভারত। এল নিনোর সঙ্গে ভারতের দক্ষিণ পশ্চিম মৌসুমি বায়ু গভীর সম্পর্ক রয়েছে।
প্রসঙ্গত, এল নিনো আবির্ভাবের ফলে ভারতীয় মৌসুমী বায়ু এবং বৃষ্টিপাত প্রভাবিত হয়। ‘এল নিনো’ বা লা নিনা হল একটি স্প্যানিশ শব্দ, যার মানে ‘বালক’। প্রশান্ত মহাসাগরের পূর্ব দিকে সৃষ্ট উষ্ণ সমুদ্রস্রোতকে এল নিনো বলে। দক্ষিণ আমেরিকা সংলগ্ন প্রশান্ত মহাসাগরের পেরু উপকূলে উষ্ণ সমুদ্র স্রোতটি তৈরি হয় বলে এর নাম- এল নিনো। এর ফলে স্বাভাবিক আবহাওয়া ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এল নিনোর ফলে উত্তর গোলার্ধে হিমশীতল শীত সৃষ্টি হয়। ভারতের কিছু অংশে আঘাত হানার সম্ভাবনাও রয়েছে।
জানুয়ারি এবং ফেব্রুয়ারি মাসে বিশেষ করে উত্তরের কিছু রাজ্যে ঠান্ডা থাকবে। যেখানে তাপমাত্রা স্বাভাবিকের থেকে ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামবে বলে পূর্বাভাস। তবে এই ঘটনা প্রথম নয়। অতীতে বহুবার হয়েছে। ২০১০, ২০১৬, ২০১৭, ২০২০ সালেও এল নিনোর প্রভাব দেখা গিয়েছে। এক দশকের ব্যবধানে পাঁচবার এল নিনোর প্রভাব দেখেছে ভারত। বিশেষজ্ঞরা ইতিমধ্যেই সমুদ্রের ক্রমাগত উষ্ণতা নিয়ে উদ্বেগও প্রকাশ করেছেন। তবে এবারের পূর্বাভাস অনুযায়ী, এল নিনো ২০২০ সালের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে শীতলতম শীত নিয়ে আসবে। ইতিমধ্যেই দেশে আগাম সতর্কতা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে সেই মতো।
তবে লা নিনা সংক্রান্ত পরিবর্তনের পাশাপাশি, অন্যান্য কিছু কারণও রয়েছে যা শীতকালীন আবহাওয়াকে প্রভাবিত করতে পারে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে উত্তর মেরুর কারা সাগরে হিমশৈল কমতে শুরু করেছে। এই হিমশৈলগুলি ওই অঞ্চলে উচ্চ চাপ দূর করতে সাহায্য করতে পারে।