কলকাতা ব্যুরো: শেষ পর্যন্ত বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ মেনে রাজ্যে গণপরিবহন আপাতত বন্ধ রাখলো রাজ্য সরকার। আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত কার্যত লকডাউনের ( #Lockdown ) এই আবহ জারি থাকবে। যদিও এই কঠোরতার মধ্যেও রাজ্যের কিছু পদক্ষেপের সমালোচনা শুরু হয়েছে। প্রথমত গণপরিবহন বন্ধ থাকলেও এবং রাস্তায় গাড়ি চলাচল আপাতত নিষেধাজ্ঞার মধ্যে কেন শপিংমল ও রেস্তোরাঁ খোলার অনুমতি দেওয়া হল তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। আবার সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার ২৫ শতাংশ লোক নিয়ে চালানোর অনুমতি দিয়েছে রাজ্য। শর্ত, সব সংস্থাকে কর্মীদের জন্য গাড়ির ব্যাবস্থা করতে হবে। বাস্তবে সব ক্ষেত্রে এটা সম্ভব নয় বলেই মনে করছেন অভিজ্ঞরা। একই সঙ্গে বর্তমান আবহে কিছু পার্ক দিনের নির্দিষ্ট সময়ে খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নিয়ে বিরক্ত নাগরিক সমাজের একটা বড় অংশ। আবার এখানেও যারা টিকা নিয়েছেন তারাই ঢুকতে পারবেন বলেও জানিয়ে দিয়েছে রাজ্য সরকার। যখন রাজ্য একটা নির্দিষ্ট লক্ষ্য রেখে আরো ১৫ দিন বিধি নিষেধ বজায় রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তখন এই ধরনের জায়গা খোলা রাখার অনুমতি নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়েছে।

সরকারের পরামর্শদাতা এবং চিকিৎসকেরা অবশ্য মনে করছেন, আগামী ১৫ দিন গণপরিবহন বন্ধ থাকলে মানুষের যেমন কষ্ট হবে এবং কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে একটা বড় বাধা তৈরি হবে, তেমনই করোনার তৃতীয় ঢেউ সামাল দেওয়ার ক্ষেত্রে এই সময়টি যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। সরকারের পরামর্শদাতা এবং চিকিৎসকরাই এখনই এই বিধিনিষেধ তুলে না নেওয়ার পক্ষে পরামর্শ দিয়েছিলেন। তাদের যুক্তি, আগামী জুলাই -আগস্ট করোনার তৃতীয় ঢেউ ধাক্কা দিলে তার আগেই প্রস্তুতি নিতে হবে
প্রথমত বিধি-নিষেধ জারি রেখে যত বেশি সংখ্যক সম্ভব মানুষকে টিকা দেওয়া প্রধান এবং গুরুত্বপূর্ণ কাজ। পাশাপাশি চিকিৎসকরা মনে করছেন, করোনার তৃতীয় ঢেউয়ে ছোটদের উপর আক্রমণ আসতে পারে। এখনো পর্যন্ত দেশে ছোটদের নিরাপত্তায় খুব বেশি ব্যবস্থা হয়নি। চিকিৎসকের পরামর্শ, এই সময়টায় হাসপাতাল বা পরিকাঠামোর ক্ষেত্রে ছোটদের উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করার সুযোগ রয়েছে। তাই তারা মনে করছেন, সামগ্রিকভাবে কষ্ট হলেও এই সময়টায় রাজ্য সরকার আরও ১৫ দিন বিধি নিষেধ বজায় রাখা য় তার সুদুরপ্রসারী ফল পাবে রাজ্য। যদিও শপিংমল খোলা বা রেস্তোরাঁ এবং পার্ক দিনের নির্দিষ্ট সময়ের জন্য খুলে দেওয়া এখনই কোন জরুরী ছিল না বলে মনে করছেন বহু চিকিৎসাকই।

রাজ্যের নয়া ঘোষণা —

  • এখন থেকে ২৫% কর্মী নিয়ে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান চালানো যাবে। তবে কর্মীদের যাতায়াতের জন্য পরিবহনের ব্যবস্থা করতে হবে প্রতিষ্ঠানকেই।
  • সকাল ১০ টা থেকে বিকেল চারটে পর্যন্ত বেসরকারি প্রতিষ্ঠান খোলা রাখা যাবে।
  • এতদিন সকাল সাত টা থেকে ১০ টা পর্যন্ত সবজি ও মুদিখানা বাজার খোলা থাকত। এখন তা বাড়িয়ে এগারোটা পর্যন্ত করা হলো।
  • অন্যান্য দোকানপাট সকাল দশটা পর্যন্ত থেকে সন্ধ্যা ছ টা পর্যন্ত খোলা রাখার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
  • রেস্তোরাঁ খোলা রাখা যাবে দুপুর ১২ টা থেকে রাত আট টা পর্যন্ত। এই তালিকায় পানশালা এবং হোটেলে থাকবে। ৫০% জায়গায় ভর্তি করা যাবে। শপিং মল খোলা রাখা যাবে বেলা ১১ টা থেকে সন্ধ্যা ছ টা পর্যন্ত। ৩০ শতাংশ গ্রাহককে একসঙ্গে ঢুকতে দেওয়া যাবে।
  • বিয়ে বা কোন অনুষ্ঠান বাড়িতে একসঙ্গে ৫০ জনের বেশি ঢুকতে দেওয়া যাবে না।
  • দর্শকশূন্য স্টেডিয়ামে খেলা করার অনুমতি দেওয়া হল।
  • টিকা নেওয়া হয়ে থাকলে দিনের নির্দিষ্ট সময়ে পার্কে ঢোকা যাবে।
  • লোকাল ট্রেন, মেট্রো, বাস, অটো চলাচল আপাতত বন্ধ থাকছে। জরুরী পরিষেবা আগের মতই চালু থাকবে।
  • চিকিৎসার প্রয়োজনে অটো এবং টাক্সি কে ছাড় দেওয়া হয়েছে।
  • রাত ন টা থেকে ভোর পাঁচটা পর্যন্ত জরুরী পরিষেবা ছাড়া কোনো যানবাহন চলাচল করতে পারবে না।
  • ব্যাংক খোলা থাকবে ১০ টা থেকে দুটো পর্যন্ত।
Share.
Leave A Reply

Exit mobile version