কলকাতা ব্যুরো: পদ্মশ্রী পুরস্কারপ্রাপ্ত বর্ষীয়ান কার্টুনিস্ট নারায়ণ দেবনাথের চিকিৎসার খরচ বহনের আশ্বাস দিলেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়। শনিবার সকালে সস্ত্রীক রাজ্যপাল ‘বাঁটুল দি গ্রেট’, ‘হাঁদা ভোঁদা’র স্রষ্টার হাওড়ার শিবপুরের বাড়িতে যান। কার্টুনিস্টের সন্তানের কাছ থেকে শারীরিক অবস্থার খোঁজখবরও নেন তিনি। শুক্রবারই রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড় টুইটে জানিয়েছিলেন অসুস্থ নারায়ণ দেবনাথের বাড়িতে যাবেন তিনি।
নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী, শনিবার সকাল সকাল বিখ্যাত কার্টুনিস্টের হাওড়ার শিবপুরের বাড়িতে যান রাজ্যপাল ধনকড়। সঙ্গে ছিলেন তাঁর স্ত্রী সুদেশ ধনকড়ও। ফুল, উত্তরীয়-সহ নানা সামগ্রী নিয়ে কার্টুনিস্টের বাড়িতে এদিন গিয়েছিলেন রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধান। কার্টুনিস্টের শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর নেন। নারায়ণ দেবনাথের বাড়ি থেকে বেরনোর পর সংবাদমাধ্যমের সামনে নারায়ণবাবুর চিকিৎসার খরচ বহনের আশ্বাস দেন রাজ্যপাল।
‘হাঁদা ভোঁদা’, ‘বাঁটুল দি গ্রেট’, ‘নন্টে ফন্টে’, ‘বাহাদুর বেড়াল’, ‘ডানপিটে খাঁদু আর তার কেমিক্যাল দাদু’র মতো বিখ্যাত কার্টুন চরিত্রের স্রষ্টা নারায়ণ দেবনাথ। ২০১৩ সালে সাহিত্য অ্যাকাডেমি পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। ২০২১-এ পদ্মশ্রী। শিবপুর বাজারে নিজের বাড়িতে এখন কার্যত ঘরবন্দি বিখ্যাত এই কার্টুনিস্ট। কারও সাহায্য ছাড়া একা বিছানা থেকে নামতেও পারেন না।
নারায়ণ দেবনাথকে চিকিৎসার আশ্বাস দেওয়া নিয়ে ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে রাজনৈতিক তরজা। রাজ্যপালের এক্তিয়ার নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী। তিনি বলেন, এটা রাজ্যপালের ক্ষমতার মধ্যে পড়ে না। শিরোনামে থাকার জন্য এক্তিয়ারের বাইরে কাজ করছেন তিনি।
এদিকে, রাজ্যের সঙ্গে সংঘাত লেগেই রয়েছে রাজ্যপালের। বিএসএফের এক্তিয়ার বৃদ্ধি নিয়ে তরজা অব্যাহত। এই প্রসঙ্গে ফের রাজ্যকে তোপ দেগেছেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়। বিএসএফের এক্তিয়ার বাড়ানো নিয়ে রাজ্য সরকারের সমালোচনার জবাব দিয়ে সহযোগিতার পরামর্শ দেন জগদীপ ধনকড় । মুখ্যমন্ত্রী সংঘর্ষ-পরিস্থিতি তৈরি করছেন অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, বিএসএফ-এর মতো আধা সামরিক বাহিনী দেশের সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। রাজ্যের সীমান্ত এলাকাগুলি অত্যন্ত সংবেদনশীল। যেখানে কেন্দ্রীয়ভাবে ৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত সুরক্ষা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সেখানে রাজ্য কেন ১৫ কিলোমিটারের কথা বলছে। মুখ্যমন্ত্রী কেন সংঘর্ষ-পরিস্থিতি তৈরি করছেন? বিএসএফ-এর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে রাজ্যের কাজ করা উচিত।’
শনিবার বিকেল ৫টার মধ্যে মুখ্যসচিব হরেকৃষ্ণ দ্বিবেদী ও স্বরাষ্ট্রসচিব বিপি গোপালিকাকে রাজভবনে তলব করা হয়েছে ৷ এদিন এক টুইট বার্তায় নিজেই এই কথা জানিয়েছেন রাজ্যপাল ৷ ঠিক কী কারণে এদিন রাজ্যের দুই শীর্ষ প্রশাসনিক আধিকারিককে রাজ্যপাল রাজভবনে ডেকে পাঠিয়েছেন তা জানা না গেলেও মনে করা হচ্ছে, এই বিষয়গুলি নিয়ে তিনি মুখ্যসচিব ও স্বরাষ্ট্রসচিবের সঙ্গে কথা বলতে পারেন ৷
অন্যদিকে শনিবার সকালেও হাওড়া পুরবিল নিয়ে রাজ্য সরকারকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন রাজ্যপাল ৷ তিনি বলেন, আমি হাওড়া পৌরবিল নিয়ে গত ২৪ নভেম্বর রাজ্যের কাছে কিছু তথ্য জানতে চেয়েছিলাম, কিন্তু এখনও সেই প্রশ্নের উত্তর মেলেনি ৷ অথচ আমায় দোষারোপ করা হচ্ছে ৷ বলা হচ্ছে, আমি বিল আটকে রেখেছি ৷ আমি সংবিধান মেনেই কাজ করছি ৷ বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্য়োপাধ্যায়ের সমালোচনাও এদিন শোনা গিয়েছে ধনকরের মুখে ৷ তাঁকে নিজের পদের গরিমা বজায় রাখার পরামর্শ দিয়েছেন রাজ্যপাল ৷