বিশেষ প্রতিবেদন – তপন মল্লিক চৌধুরী
নির্বাচন কমিশন আচমকাই ভবানীপুর কেন্দ্রের উপনির্বাচন ঘোষণা করেছিল। তা না হলে গত মাসেই উত্তরবঙ্গ সফরে যেতেন মুখ্যমন্ত্রী ৷ সফরসূচিও ঠিক হয়ে গিয়েছিল। একেবারে শেষ মুহর্তে ভবানীপুর কেন্দ্রের ভোটের জন্য সেই সফরসূচি স্থগিত হয়েছিল ৷ তৃতীয়বার বাংলার শাসন ক্ষমতায় আসার পর এটাই মুখ্যমন্ত্রীর প্রথম উত্তরবঙ্গ সফর।

রাজনৈতিক বিশেষঙ্গদের মতে, একুশের বিধানসভা নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়লাভ করলেও দক্ষিণের তুলনায় তৃণমূলের উত্তরের ফলাফল আশানুরূপ হয়নি। স্বভাবতই, মানুষের সঙ্গে আরও বেশি জনসংযোগ গড়ে তুলতে মুখ্যমন্ত্রী উত্তরবঙ্গের সফর থেকে কি বার্তা দেন সেদিকে নজর রাখছে সব মহল। সূত্রের খবর, উত্তরবঙ্গের উন্নয়নের বিষয়ে সেখানকার প্রশাসনের সঙ্গে প্রশাসনিক বৈঠক করবেন মুখ্যমন্ত্রী। পাশাপাশি উত্তরবঙ্গের মানুষেরও মুখোমুখি হতে পারেন সরকারি কর্মসূচি থেকে। উত্তরবঙ্গ সফর সেরেই গোয়ার উদ্দেশ্যে রওনা দেবেন মুখ্যমন্ত্রী ৷ জানা গিয়েছে নতুন করে প্রাকৃতিক বির্যয়য় না হলে এই সফরসুচি বজায় থাকবে ৷

কিন্তু উত্তরবঙ্গ থেকে আরবসাগর পাড়ের সৈকত-রাজ্যে রওনা দেওয়ার এত তাড়া কেন?
মমতা একুশের বিধানসভা ভোটে জেতার পর গোটা দেশে বিরোধী মুখ হয়ে উঠেছেন। বিধানসভা নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়ের পর মমতার আপাত লক্ষ্য ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচন। তাই শুধু বাংলাতেই আর আটকে থাকতে চায় না তৃণমূল। একের পর এক রাজ্যে নিজেদের সংগঠন বাড়াতে চায়। অসম, ত্রিপুরা, মণিপুরের পর তৃণমূলের লক্ষ্য এবার গোয়া। সেখানে সংগঠন বাড়াতে চাইছে তৃণমূল। পুজোয় সে রাজ্যে কার্যালয় খুলেছে তৃণমূল। ইতিমধ্যেই বড় বড় ব্যানার টাঙিয়ে প্রচার শুরু হয়ে গিয়েছে। মমতাকে দেখেই তৃণমূল নিয়ে গোয়ায় আগ্রহ তৈরি হয়েছে বলে দাবি নেতৃত্বের।

আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে সাগর পারের গোয়ায় ৪০ আসনের বিধানসভা নির্বাচন। গোয়াতে মমতার মুখ সামনে রেখেই বাজি ধরছে তৃণমূল। ইতিমধ্যে গত ২৯ সেপ্টেম্বর অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন গোয়ার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী লুইজিনহো ফালেইরো। কেবল ফালেইরো একা নন, একই সঙ্গে কলকাতায় এসে দল বদলে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন আরও ৬ প্রাক্তন কংগ্রেস নেতা-সহ মোট ১০ জন। পশ্চিমের এই রাজ্যে সংগঠন মজবুত করাই আপাতত লক্ষ্য তৃণমূলের। আর সেই লক্ষ্যপূরণ করতেই গোয়া যাচ্ছেন সুপ্রিমো। এই আবহে মমতার গোয়া-যাত্রায় তৃণমূলের সংগঠন অন্য মাত্রা পাবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, ভোটের আগে সাগর পারে তৃণমূল সুপ্রিমোর গোয়া সফর যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ।

প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালের বিধানসভা ভোটে গোয়ায় কংগ্রেস ১৭টি আসন জিতেছিল। বিজেপি জিতেছিল মাত্র ১৩টি আসন। যদিও রাজনৈতিক পালাবদলের পরে, বিজেপি সরকার গঠন করে। আর বাংলা দখলের পর এবার গোটা দেশ জুড়ে বিজেপির একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী মুখ হিসাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে তুলে ধরতে চাইছে তৃণমূল কংগ্রেস। সেই সূত্রে গোয়াকে টার্গেট করেছে তাঁরা। তৃণমূল সূত্রে খবর, তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দিতে পারেন গোয়ার একাধিক প্রাক্তন ফুটবলার, এক অভিনেত্রী সহ বেশ কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তি। জাতীয় রাজনীতিতে মমতার প্রথম গোয়া সফর নিয়ে জোর চর্চা শুরু হয়েছে কারণ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলায় বিজেপির রথ থমকে দিয়েছেন। তারপর থেকে তিনিই গোটা দেশের বিরোধী মুখ। তাই তাঁর গোয়া সফর নিঃসন্দেহে চর্চার দাবি রাখে।

সম্প্রতি তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যসভার সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েন সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ভিডিও বার্তা ছাড়েন। সেখানে ডেরেক বলেছেন, গোয়ার বিজেপি সরকার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ভয় পেয়েছে। কংগ্রেস–বিজেপি গোয়ার জন্য কিছু করেনি। আর করবেও না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেভাবে বাংলার উন্নয়ন করেছেন সেভাবেই গোয়ার উন্নতি ঘটাবেন।
3 Comments
তীক্ষ্ণ রাজনৈতিক বিশ্লেষণধর্মী লেখা, প্রতিটি কথা যুক্তিযুক্ত এবং বাস্তবতাপূর্ণ।
উত্তর-পূর্বের রাজ্য আসাম-ত্রিপুরা-মণিপুরে যে কৌশল বা স্ট্র্যাটেজি আরব সাগর পারের রাজ্য গোয়াতেও কি তা খাটবে? তবে সমীকরণ যাই থাক না কেন বিজেপি শাসিত সমস্ত
রাজ্য দখল করে ফেলাটা সহজ সাধ্য নয়…
রাজনীতির লেখা রাজনৈতিক ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ দিয়ে যেভাবে উপস্থাপন করতে হয় সেই ভাষাটি লেখকের সম্পূর্ণ দখলে, তাই লেখাটি পড়ে নানা প্রশ্ন যেমন জাগে উত্তরো মেলে লেখার মধ্যেই।