কলকাতা ব্যুরোঃ তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রাণ সংশয় হতে পারে। সোমবার এমনই আশঙ্কা প্রকাশ করলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ আর এই নিয়ে সরাসরি নাম না নিয়ে অভিযোগের তির ছুঁড়েলেন ভারতীয় জনতা পার্টির দিকে। সম্প্রতি বিজেপি শাসিত রাজ্য ত্রিপুরায় গিয়ে আক্রান্ত হয়েছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ তাঁর কনভয়ে হামলা হয় ৷ আর এই প্রসঙ্গ টেনেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, সেদিন অভিষেক বুলেটপ্রুফ গাড়িতে ছিলেন৷ তা না হলে সেদিন অভিষেকেরও শারীরিক ক্ষতি হতে পারতো ৷

তৃণমূল সুপ্রিমোর আরও অভিযোগ, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় যে বিমানে যাতায়াত করছেন, সেখানে অভিষেকের আসনের পাশের চার-পাঁচটি আসনে গুন্ডা পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে ৷ আর সেই সূত্রে মমতার দাবি, অভিষেকের জীবন সংকটে পড়তে পারে ৷

তবে মমতার এই অভিযোগের পাল্টা দিয়েছে বিজেপি। বিজেপির রাজ্য সাধারণ সম্পাদক সায়ন্তন বসু বলেন, ‘আমাদের কি আর খেয়ে দেয়ে কাজ নেই যে বিজেপি অভিষেকের পিছনে নজর রাখব, তাঁর পাশে গুন্ডা বসাতে যাব’। সায়ন্তন বলেন, মমতা এমন কথা বলে অভিষেককে প্রচারের আলোয় আনার চেষ্টা করছেন।

পাশাপাশি গত শনিবার ত্রিপুরায় আক্রান্ত হয় বাংলার তৃণমূলের বেশ কয়েকজন নেতা ৷ রবিবার রাতে তাঁদের বিশেষ বিমানে কলকাতায় ফেরানো হয় ৷ তাঁদের মধ্যে দু’জন সুদীপ রাহা ও জয়া দত্ত এখন কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালের উডবার্ন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন ৷ আর সোমবার সকালে তাঁদের হাসপাতালে দেখতে যান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ কথা বলেন দুজনের সঙ্গে। তারপর ওয়ার্ডের বাইরে এসে ত্রিপুরার বিজেপি সরকার ও গেরুয়া শিবিরের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের বিরুদ্ধে তোপ দাগেন ৷ তাঁর অভিযোগ, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর অমিত শাহের নির্দেশে সবটাই হয়েছে ৷ এটা আমি বিশ্বাস করি। তা না হলে ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেবের এত সাহস হত না ৷’’

পাশাপাশি দলের যুবনেতাদের উপর হামলার ঘটনার কড়া নিন্দা করেন মমতা ৷ তাঁদের উপর হামলার প্রতিবাদে ছাত্র সমাজকে গর্জে ওঠার ডাক দেন তিনি ৷ এদিন তৃণমূল নেতাদের ত্রিপুরায় যাওয়ার জন্য বিমানের টিকিট না দিতে বলা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন মমতা ৷

এসএসকেএমে সাংবাদিকদের মুখোমুখি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

প্রসঙ্গত, ত্রিপুরায় তৃণমূল কংগ্রেসের ছাত্র ও যুব নেতাদের উপর হামলার ঘটনা নিয়ে সংসদে সরব হন দলের সাংসদরা ৷ সোমবার সংসদ চত্বরেই গান্ধীমূর্তির সামনে ধরনা শুরু করেন তাঁরা ৷ তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদ কল্যাণ বন্দ্য়োপাধ্য়ায়ের নেতৃত্বে চলতে থাকে স্লোগান ৷ তৃণমূলের অভিযোগ, বিজেপিশাসিত ত্রিপুরায় গণতন্ত্র বলে আর কিছু নেই ৷ তাই উত্তর-পূর্বের এই রাজ্যে গণতন্ত্র ফেরানোর ডাক দেন তৃণমূল সাংসদরা ৷ এদিন তাঁদের হাতে যে প্ল্যাকার্ড ছিল, তাতে লেখা ছিল ‘‘ত্রিপুরায় গণতন্ত্র ফেরাতে হবে’’, ‘‘ত্রিপুরায় স্বৈরতন্ত্র নিপাত যাক’’ ৷

এদিন এসএসকেএম থেকে ঘুরে এসে হাওড়ার ডুমুরজলা স্টেডিয়াম থেকে হেলিকপ্টারে ঝাড়গ্রামের উদ্দেশে রওনা দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যাওয়ার সময় আকাশপথে পরিদর্শন করেন হাওড়ার উদয়নারায়ণপুরের প্লাবিত এলাকা।

এরপর নির্ধারিত সূচী অনুসারে ঝাড়গ্রামে বিশ্ব আদিবাসী দিবসের অনুষ্ঠানে উপস্থিত হন মুখ্যমন্ত্রী। এদিন একদিকে যেমন আদিবাসী শিল্পীদের সঙ্গে নাচের তালে পা মেলান তো অন্যদিকে ধামসা, মাদলও বাজালেন মমতা ৷

এদিন আদিবাসী দিবসের অনুষ্ঠানে সমাজের বিভিন্ন স্তরের কৃতীদের সংবর্ধনা দেন মুখ্যমন্ত্রী। আদিবাসী সম্প্রদায়ের বিশিষ্টদের সম্মান জানানো হয়। পাশাপাশি অনুষ্ঠান মঞ্চ থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের কৃতি ছাত্রছাত্রীদেরও সংবর্ধনা দেওয়া হয়।

মমতা তাঁর বক্তব্যে জানান, ‘ঝাড়গ্রামকে নতুন জেলা করেছি। ঝাড়গ্রামে ৯৫ শতাংশ মানুষকে পরিষেবা দিয়েছি। আদিবাসী উন্নয়নে জোর দেওয়া হয়েছে। ঝাড়গ্রামে সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল তৈরি হয়েছে। স্পোর্টস কমপ্লেক্স তৈরি হয়েছে। মাওবাদী হানায় মৃতদের পরিবারকে চাকরি দিয়েছি। আদিবাসীদের অধিকার কেউ কেড়ে নিতে পারবে না। সারা দেশেও এই আইন চালু করা হোক। আদিবাসীদের জন্য আলাদা দফতর তৈরি করেছি’।

পাশাপাশি এদিন আদিবাসী সমাজের বীর শহিদ সিধু-কানহুর ছবিতে শ্রদ্ধা জানান মুখ্যমন্ত্রী। এরপরই বিকেলে ঝাড়গ্রামে প্রশাসনিক বৈঠকে অংশ নেবেন মমতা, এমনটাই নবান্ন সূত্রে খবর। সোমবার রাতে মুখ্যমন্ত্রী থাকবেন পর্যটন উন্নয়ন নিগমের রাজবাড়ি ট্যুরিস্ট কমপ্লেক্সের ‘সুবর্ণরেখা’য়। মঙ্গলবার সকালে ঝাড়গ্রামে থেকে ঘাটালে বন্যাকবলিত এলাকা পরিদর্শন করতে যাওয়ার কথা রয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর।

অন্যদিকে সোমবার শুরু হয়ে গেল সংসদের বাদল অধিবেশনের শেষ সপ্তাহ। আজ অধিবেশন শুরুর আগে শেষ সপ্তাহের রণকৌশল তৈরি করতে বিরোধী দলগুলিকে নিয়ে বৈঠকে বসেন বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতা মল্লিকার্জুন খাড়গে। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন রাহুল গান্ধীও। তৃণমূলের তরফে বৈঠকে প্রতিনিধিত্ব করেন অর্পিতা ঘোষ এবং প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version