কলকাতা ব্যুরো: শনিবার রাজ্যের চারটি বিধানসভা আসনে উপনির্বাচন। গত বিধানসভা ভোটে সেই চার আসনে ফলাফল ছিল ২-২। কিন্তু এবার চারটি আসনেই জয়ের লক্ষ্য নিয়ে ভোটময়দানে নেমেছে তৃণমূল। এদিকে বাম এবং কংগ্রেসের আসন সংখ্যাও শূন্য। ফলে চার বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচন বিরোধীদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। শনিবার সমস্ত বুথেই মোতায়েন রয়েছে কেন্দ্রীয় বাহিনী।

দুপুর ১ টা পর্যন্ত দিনহাটায় ভোট পড়েছে ৪৭.৮৩ শতাংশ। শান্তিপুরে ভোটদানের হার ৪৮.০২ শতাংশ। খড়দহ এবং গোসাবায় যথাক্রমে ৩৬.৭ শতাংশ এবং ৫২.১৯ শতাংশ ভোট পড়েছে।
তবে উপ-নির্বাচন ঘিরে শনিবার সকাল থেকেই উত্তেজনা খড়দহে। কেন্দ্রীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙুল তুলেছে তৃণমূল কংগ্রেস। পাশাপাশি খড়দহে জাল ভোটারকে হাতেনাতে পাকড়াও করেন বিজেপি প্রার্থী জয় সাহা। এই ব্যক্তি পালানোর চেষ্টা করলে দৌড়ে গিয়ে তাঁকে আবার ধরেন জয়। ঘটনাটি ঘটেছে ঘোলা শশীভূষণ হাইস্কুলে। উপ-নির্বাচন ঘিরে সকাল থেকেই দফায় দফায় উত্তপ্ত হয়েছে খড়দহ। তারইমধ্যে শশীভূষণ হাইস্কুলে এক ভুয়ো ভোটারকে ধরে ফেলেন বিজেপি প্রার্থী। ওই ব্যক্তির সঙ্গে তর্কাতর্কি হয় বিজেপি প্রার্থীর। ওই ব্যক্তি নিজের ভুলও স্বীকার করে নেন। তারইমধ্যে ওই ব্যক্তি পালিয়ে যান।

তবে এখানেই শেষ নয়। খড়দহ তৃণমূল কংগ্রেসের দাবি, করোনা টিকার দুটি ডোজ ছাড়া ভোট দেওয়া যাবে না বলে জানায় কেন্দ্রীয় বাহিনী। সেই অজুহাতে ৫৩ জন ভোটারকে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। প্রতিবাদ করতে তাঁদের ঢোকার অনুমতি দেয় কেন্দ্রীয় বাহিনী। কিন্তু ততক্ষণে ওই ৫৩ জন ভোটার ফিরে গিয়েছেন।

উত্তপ্ত হয়ে ওঠে শান্তিপুরও। তৃণমূলকে ভোট না দিলে দেখে নেব, এলাকায় ঢুকে একদল মুখ ঢাকা দুষ্কৃতী সাধারণ মানুষকে হুমকি দিতে শুরু করে। ভয়ে ভোট দিতে যাচ্ছেন না মহিলারা। শান্তিপুর বিধানসভার বাগআঁচড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের ৩০ নম্বর বুথের অজয় পল্লী এলাকার ঘটনা। জানা যায় মোটরসাইকেলে করে কয়েক জন দুষ্কৃতী এলাকায় ঢুকে জোরে জোরে চিৎকার করে সকলকে হুমকি দিতে থাকে। বলা হয় তৃণমূলকে ভোট না দিলে পরে দেখে নেওয়া হবে।
যদিও এই এলাকায় বিজেপির দাবি আগের নির্বাচনগুলিতে বিজেপি ব্যাপক লিড পেয়েছে সেই কারণে তাদের এমন হুমকি বলে মনে করছে এলাকার বিজেপি নেতৃত্ব এবং বিজেপি প্রার্থী। তাদের দাবি গত বিধানসভা ভোটে তৃণমূল এখানে পরাজিত হয়েছে সেই আতঙ্কে সাধারণ মানুষকে হুমকি দেখাচ্ছে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা।
এছাড়া এদিন দিনহাটা হাইস্কুলেও উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। বিজেপি প্রার্থী অশোক মণ্ডলকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখায় তৃণমূল। কেন্দ্রীয় বাহিনীর সামনেই তৃণমূল কর্মীদের সঙ্গে বিজেপি প্রার্থীর বচসা হয়। প্রায় হাতাহাতির পরিস্থিতি তৈরি হয়। তৃণমূলের দাবি, বাববার করে বুথের কাছে এসে উত্তেজনা তৈরির চেষ্টা করছেন বিজেপি প্রার্থী। বহিরাগতদের আনা হয়েছে। ভোটারদের প্রভাবিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। যদিও বিজেপির দাবি, প্রার্থী স্রেফ ভোট দিতে আসেন। তাঁর পরিবারের সদস্যদের ভোট দিতে আসার পথে আটকানো হয়।
অন্যদিকে গোসাবায় ভোটের আগের রাতে চণ্ডীর মোড়ে বিজেপি প্রার্থী পলাশ রানার বিরুদ্ধে লিফলেট বিলির অভিযোগ তোলে তৃণমূল কংগ্রেস। শাসক দলের দাবি, এলাকায় একটি লজে বিজেপি প্রার্থীর সঙ্গে ছিল বহিরাগতরা। যদিও পলাশের দাবি, রাজ্যের শাসক দল সন্ত্রাস করছে। বিজেপির এক কর্মী বাইকে করে কাগজপত্র নিয়ে যাচ্ছিলেন। কিছু সম্ভবত পড়ে যায়। ওই কর্মীকে বেধড়ক মারধর করা হয়।

এদিন চারটি বিধানসভা আসনে মোট ৯২ কোম্পানি বাহিনী করা হয়েছে। গোসাবায় ২৩ কোম্পানি, খড়দহে ২০ কোম্পানি, দিনহাটায় ২৭ কোম্পানি, শান্তিপুরে ২২ কোম্পানি।
উপনির্বাচনে খড়দার কেন্দ্রের প্রার্থী রাজ্যের মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। তাঁর বিরুদ্ধে বিজেপি প্রার্থী জয় সাহা এবং বামেদের প্রার্থী দেবজ্যোতি দাস। একুশের উপনির্বাচনে ভবানীপুর কেন্দ্রে বিপুল ভোটে জয়লাভ করেছিলেন শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। কিন্তু, পরে তিনি ইস্তফা দেন। এদিকে নির্বাচনের ফল প্রকাশের আগেই মৃত্যু হয় খড়দার নির্বাচিত বিধায়ক কাজল সিনহার।
কোচবিহারের দিনহাটা কেন্দ্রে তৃণমূলের প্রার্থী উদয়ন গুহ এবং বিজেপির প্রার্থী অশোক মণ্ডল। এই আসনে বামেদের প্রার্থী আবদুর রউফ। নদিয়া জেলার শান্তিপুরে তৃণমূলের প্রতীকে লড়ছেন ব্রজকিশোর গোস্বামী। এই কেন্দ্রে বিজেপির প্রার্থী নিরঞ্জন বিশ্বাস এবং বামেদের প্রার্থী সৌমেন মাহাত।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার গোসাবায় তৃণমূলের প্রার্থী সুব্রত মণ্ডল, বিজেপি প্রার্থী পলাশ রাহা এবং বামেদের প্রার্থী অনিল চন্দ্র মণ্ডল।

জানা গিয়েছে গোসাবায় ভোটার সংখ্যা ২৩০২৩০, শান্তিপুরে ভোটার সংখ্যা ২৫৪৮৮৯, দিনহাটায় ভোটার সংখ্যা ২৯৮০৬৭, খড়দায় ভোটার সংখ্যা ২৩২৩৪৮। অধিক সংখ্যক ভোটারকে ভোটমুখী করাই কমিশনের লক্ষ্য। উল্লেখ্য, ২ নভেম্বর ভোট গণনা। এদিকে করোনা সংক্রান্ত বিধিনিষেধ মেনে উপনির্বাচন সম্পন্ন করাতে বিশেষ উদ্যোগী কমিশন। সামাজিক দূরত্ববিধি মেনে যাতে ভোটাররা লাইনে দাঁড়ান সেই ব্যবস্থা করা হচ্ছে। রাখা হয়েছে পর্যাপ্ত মাস্ক এবং স্যানিটাইজার।
বিধানসভা নির্বাচনে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে তৃতীয়বারের জন্য রাজ্যের মসনদে বসেছে তৃণমূল। এরপরে ভবানীপুর উপনির্বাচন এবং সামসেরগঞ্জ ও জঙ্গিপুরের নির্বাচনেও জয়ী হয়েছে তৃণমূল। এই চার কেন্দ্রের উপনির্বাচনে তাই জয়লাভের জন্য মরিয়া হয়ে প্রচার চালিয়েছেন বিরোধীরা। কার পক্ষে যাবে বাংলার মানুষের রায়? রাজ্যবাসীর নজর এখন সেই দিকেই।

তবে শনিবার শুধু পশ্চিমবঙ্গই নয়, দেশের ১৩ টি রাজ্য ও একটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের ৩০ টি বিধানসভা আসন এবং তিনটি লোকসভা আসনে উপ-নির্বাচন হচ্ছে। অসমে গোসাইগাঁও, ভবানীপুর, তামুলপুর, মারিয়ানি এবং থোওড়ায় চলছে উপ-নির্বাচন। বিহারে দুটি বিধানসভা আসন, কর্নাটকে দুটি বিধানসভা আসন, হিমাচলপ্রদেশে একটি লোকসভা আসন ও একটি বিধানসভা আসন, রাজস্থানে দুটি বিধানসভা আসন, তেলাঙ্গানায় একটি বিধানসভা আসনে ভোট হচ্ছে।
এছাড়াও মহারাষ্ট্র, মধ্যপ্রদেশ, দাদরা ও নগর হাভেলি, নাগাল্যান্ড ও মিজোরামে উপ-নির্বাচন হতে চলেছে। মধ্যপ্রদেশ এবং দাদরা ও নগর হাভেলিতে একটি করে লোকসভা আসনে উপ-নির্বাচন চলছে।