এক নজরে

শচিনকে টপকে ইতিহাস গড়লেন বিরাট কোহলি

By admin

March 04, 2025

মঙ্গলবার দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমিফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে একাধিক নজির গড়েছেন কোহলি। এদিন কোহলি ৫৩ বলে অর্ধশতরান পূরণ করেন। আর এই হাফসেঞ্চুরি করার সঙ্গে সঙ্গে ইতিহাস লিখে ফেললেন বিরাট।এদিন বিরাট কোহলি প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে আইসিসি টুর্নামেন্টের নকআউট ম্যাচে ১,০০০ রানের মাইলস্টোন পার করে গিয়েছেন। এছাড়াও এদিন রান তাড়া করতে নেমে ৮,০০০ রানের মাইলস্টোনও টপকে গিয়েছেন ‘চেজ মাস্টার’।মুকুটে একের পর এক পালক যোগ হয়ে চলেছে কোহলির।আইসিসি ওডিআই ক্রিকেট টুর্নামেন্টের ইতিহাসে কোহলি এদিন ২৪টি হাফসেঞ্চুরি বা তার বেশি স্কোর করেছেন। বিশ্বের প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে তিনি এই রেকর্ড গড়েছেন। সেই সঙ্গে টপকে গিয়েছেন শচীন তেন্ডুলকরকে। শচীন আইসিসি ওডিআই ক্রিকেট টুর্নামেন্টে মোট ২৩টি পঞ্চাশ বা তার বেশি রান করেছেন। এতদিন সচিনের সঙ্গেই একই তালিকায় ছিলেন কোহলি। এখন একক ভাবে এই রেকর্ডের মালিক বিরাট। এদিকে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ভারতীয়দের মধ্যে সবচেয়ে বেশি অর্ধশতরান বা তার বেশি রান করার রেকর্ডের মালিকও হয়ে গেলেন কোহলি। তিনি টপকে গেলেন শিখর ধাওয়ান, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় এবং রাহুল দ্রাবিড়কে। এঁরা তিন জনেই ছ’টি করে অর্ধশতরান বা তার বেশি রান করেছেন। এতদিন কোহলিও এই একই তালিকাতেই ছিলেন। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে হাফসেঞ্চুরি করে কোহলি নয়া নজির গড়লেন। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে কোহলির হাফসেঞ্চুরির সংখ্যা এখন সাতটি।

এদিন অস্ট্রেলিয়াকে সেমিফাইনালে হারিয়ে আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে পৌঁছে গেল ভারত। আর তার ফলে আয়োজক হলেও ফাইনাল আয়োজন করতে পারবে না পাকিস্তান। ফাইনাল হবে দুবাই আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে। তাই বলা যায় অস্ট্রেলিয়া হারল, বুক ফাটল পাকিস্তানের। কারণ সেমিফাইনালে ভারত জিতে যাওয়ায় আয়োজক হয়েও পাকিস্তান আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনাল পাচ্ছে না। ফাইনাল হবে দুবাইয়ে। তবে দ্বিতীয় সেমিফাইনাল হবে পাকিস্তানের লাহোরের গদ্দাফি স্টেডিয়ামে। বুধবার দ্বিতীয় সেমিফাইনালে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে নামবে দক্ষিণ আফ্রিকা। সেই ম্যাচে যে দল জিতবে, সেই দল দুবাইয়ে ভারতের বিরুদ্ধে ফাইনালে খেলবে। সেই ম্যাচ আগামী ৯ মার্চ (রবিবার)।  মঙ্গলবার টসে জিতে প্রথমে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়ে ২৬৪ রানে অল-আউট হয়ে যায় অস্ট্রেলিয়া। একটা সময় মনে হয়েছিল যে অজিরা অনায়াসে ৩০০ রানের গণ্ডি পেরিয়ে যাবেন। বিশেষত আগের তিনটি ম্যাচের নিরিখে মঙ্গলবার দুবাইয়ের যে পিচে খেলা হচ্ছে, সেটা তুলনামূলকভাবে ব্যাটিংয়ের পক্ষে ভালো হওয়ায় একটা সময় ভারতীয়দের মধ্যে প্রবলভাবে সেই আশঙ্কা চেপে বসেছিল। কিন্তু পাঁচ বলের মধ্যে স্টিভ স্মিথ এবং গ্লেন ম্যাক্সওয়েল (৩৬.৪ ওভার এবং ৩৭.৩ ওভার) আউট হয়ে যাওয়ায় জোর ধাক্কা খায় অস্ট্রেলিয়া। আর সেই কারণেই স্মিথের ৭৩ রান এবং অ্যালেক্স ক্যারির ৬১ রানের পরেও কোনওক্রমে ২৬০ রানের গণ্ডি পার করেন অজিরা। এদিন অজিদের কোনও জুটিই বড় রান করতে পারেনি। তিনটি অর্ধশতরানের জুটির পরেও সর্বোচ্চ ৫৬ রানের পার্টনারশিপ গড়ে অজিরা। যখনই মনে হচ্ছিল যে ম্যাচটা ভারতের হাত থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে, তখন উইকেট তুলে নিচ্ছিল ভারত।

রোহিত শর্মা এবং শুভমন গিল যখন ব্যাট করতে নামে, তখন লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৬৫ রানের। খুব সহজ না হলেও সেটা খুব কঠিন ছিল না। নাগালের বাইরে ছিল না লক্ষ্যমাত্রা। তবে শুরুটা খুব একটা ভালো করতে পারেনি ভারত। ৩০ রানে প্রথম উইকেট হারায়। দ্বিতীয় উইকেট পড়ে ৪৩ রানে। তারপর তৃতীয় উইকেটে ৯১ রান যোগ করেন বিরাট এবং শ্রেয়স আইয়ার। শ্রেয়স ৬২ বলে ৪৫ রান করে আউট হয়ে যাওয়ার পর অক্ষর প্যাটেলের সঙ্গে জুটি গড়ে ভারতকে এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকেন বিরাট। তাঁদের জুটিতে ৪৪ রান ওঠে। তারপর ২৭ রান করে অক্ষর আউট হয়ে যাওয়ার পর বিরাটের সঙ্গে জুটিতে ভারতকে জয়ের দোরগোড়ায় নিয়ে যান কেএল রাহুল। তিনি প্রাথমদিকে ঢিমে গতিতে খেলছিলেন। পরবর্তীতে আগ্রাসী খেলে বিরাটের উপরে চাপ কমাতে থাকেন ভারতীয় উইকেটকিপার। কিন্তু ৪২.৪ ওভারে একেবারে অ-বিরাট সুলভ শট খেলে আউট হয়ে যান কোহলি। ওই ওভারের একটা ছক্কা মেরে দিয়েছিলেন রাহুল। তারপরও বড় শট মারতে গিয়ে ৮৪ রানে আউট হয়ে যান বিরাট।

কোহলি যখন আউট হন, তখন জয়ের জন্য ৪৪ বলে ৪০ রান দরকার ছিল। রানটা তেমন বেশি না হলেও হার্দিক পান্ডিয়ার চূড়ান্ত দায়িত্বজ্ঞানহীনতার জন্য ভারতের উপরে চাপ বাড়ছিল। তিনি যেন সাতটি ছক্কা মেরে ম্যাচ শেষ করার লক্ষ্য নিয়ে মাঠে নেমেছিলেন। আর সেটা করতে গিয়ে একের পর এক ডট বল খেলে যাচ্ছিলেন। বড় শট মারছিলেন। কিন্তু অহেতুক ডট বল খেলে চাপ বাড়াচ্ছিলেন। শেষপর্যন্ত ‘হিরো’ হতে গিয়ে আউট হয়ে যান। তবে ভারতের কোনও বিপদ হয়নি। ১১ বল বাকি থাকতেই চার উইকেটে জিতে পঞ্চমবারের জন্য আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে পৌঁছে যায় ভারত। ৩৪ বলে ৪২ রানে অপরাজিত থাকেন রাহুল।