কলকাতা ব্যুরো: বুধবার দেশের ৭৩ তম স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে অনেকের অজান্তেই এক ঐতিহাসিক মুহূর্তের সাক্ষী রইল দিল্লির রাজপথ। বিদায়ের দিনেও শেষবারের মতো দায়িত্ব পালন করল ‘বিরাট’। না বিরাট কোহলির কথা হচ্ছেনা। এই বিরাট-কে দেশের সবথেকে সেরা ঘোড়া বা বলা যেতে পারে ঘোড়াদের রাজা। ১৩ বছর দেশের রাষ্ট্রপতিকে পরিষেবা দেওয়ার পর অবসর নিল বিরাট। আজ সাধারণতন্ত্র দিবসের দিনই ছিল তার কাজের শেষ দিন। কর্মজীবনের অন্তিম দিনেও নিষ্ঠার সঙ্গে সে নিজের কর্তব্য পালন করে গিয়েছে। রাষ্ট্রপতি রাম নাথ কোবিন্দের দেহরক্ষী হিসেবে তাঁকে এসকর্ট করে রাষ্ট্রপতি ভবন থেকে নিয়ে গিয়েছে রাজপথে, সাধারণতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজে। গায়ে-মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করে তাকে বিদায় সম্ভাষণ জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী-সহ কেন্দ্রের অন্যান্য শীর্ষস্থানীয়রা।
বিরাট রাষ্ট্রপতির দেহরক্ষায় নিয়োজিত ঘোড়সওয়ার বাহিনীতে সবচেয়ে সম্মানীয় ঘোড়া। চলতি বছর সেনা দিবসে তাকে আর্মি স্টাফ কমেন্ডেশনের প্রধান হিসেবে পুরস্কৃত করা হয়েছে। অসামান্য দক্ষতা ও ব্যতিক্রমী পরিষেবা দিয়ে এই বিরল সম্মান অর্জন করেছে সে। ঘোড়া হিসেবে সে-ই প্রথম পায় কমেন্ডেশন কার্ড। চার্জারের ভূমিকায় সাফল্যের সঙ্গে কাজ করার জন্য রাষ্ট্রপতির দেহরক্ষী ঘোড়াগুলির মধ্যে সে প্রথম ঘোড়া যাকে এই অনন্য সম্মান দেওয়া হয়।
দেশের সব প্রেসিডেন্টের বডিগার্ড টিমে একদল ঘোড়া রয়েছে। তাদের ‘ক্যাপ্টেন’ এই বিরাট। সে নিজেও একটা কালো ঘোড়া। বিরাট রাষ্ট্রপতির দেহরক্ষী কমান্ড্যান্টের চার্জার। বিরাট নামের ঘোড়াটি ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রাচীনতম রেজিমেন্টের গর্ব এবং তাদের মধ্যে সবচেয়ে শান্ত প্রভাবশালী। বুধবার শেষ বারের মতো রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের লিমুজিনকে এসকর্ট করে রাজপথ অবধি নিয়ে গিয়েছিল বিরাট। এবার থেকে আর দেশের প্রথম নাগরিকের কনভয়ে তাঁর স্থান হবে না, অবসরের বয়স হয়ে গিয়েছে যে।
১৭৭৩ সালে তৈরি রাষ্ট্রপতির দেহরক্ষী বাহিনীর ঘোড়া রাষ্ট্রপতি ভবন থেকে রাজপথ অবধি পথ দেখিয়ে নিয়ে যায়। ২০০৩ সালের ৩ বছর বয়স থেকে শুরু করে দীর্ঘদিন রাষ্ট্রপতির অন্যতম প্রধান সঙ্গী ছিল বিরাট। ১৩ বছর ধরে কমান্ড্যান্টের চার্জার হিসাবে, সে রাষ্ট্রপতিকে প্রজাতন্ত্র দিবস উদযাপনে নিয়ে গিয়েছিলেন এবং রাষ্ট্রপতি ভবনে রাষ্ট্রপ্রধানদের পরিদর্শন করার জন্য আনুষ্ঠানিক সংবর্ধনার নেতৃত্বে ছিল। দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদের থেকে জানা গিয়েছে, প্রজাতন্ত্র দিবস উদযাপনের সময় রাজপথে উল্লাসের মধ্যে তাঁর আরোহীর ক্ষীণতম ফিসফিস শোনার ক্ষমতা তাঁকে সবচেয়ে বিশ্বস্ত ঘোড়া করে তুলেছিল। দূর থেকে বন্দুকের আওয়াজ বা ব্যান্ডে জাতীয় সঙ্গীত কোনও কিছুতেই ভয় পেতে দেখা যায়নি বিরাটকে। সবকিছুতেই সে ধীর, স্থির- কর্তব্যে অবিচল। অসংখ্য দর্শকরে মাঝেও তাঁর আত্মবিশ্বাস বারবার প্রকাশিত হয়েছে।
১৯৯৭ সালে ৩ টি স্ট্যালিওয়ের সঙ্গে আমদাকি করা ভলক্যানো প্রজাতির ঘোড়া থেকে অশ্বপ্রজননের মাধ্যমে জাতিতে হ্যানোভেরিয়ান বিরাটের জন্ম হয়। তাঁর চকচকে লেজ, নরম চোখ দেখে মনে গলে যায়। তাঁর শান্ত স্নিগ্ধ স্বভাব, সাহসী মনোভাব বাকিদের থেকে তাঁকে আলাদা করে রেখেছে। এখানেই সে বাকিদের থেকে আলাদা। তাইতো তাঁকে নিয়ে অনেকেরই আগ্রহের সীমা নেই। এটাই বিরাটকে কিংবদন্তি করে তোলে। যারা বছরের পর বছর ধরে তাঁর আশেপাশে রয়েছেন তাঁরা এমন একটি মুহূর্ত মনে করতে পারবেন না যখন বিরাট চলার সময় ঝাঁকুনি দিয়েছে।
আরও একটি বিষয় জেনে রাখার মতো। গত সপ্তাহের সেনা প্রধান নারাভানে বিরাটকে সিওএএস কম্যান্ডেশন কার্ড দিয়েছিলেন। ২০০৭ সালে ফরিয়াদের পরে দ্বিতীয়বার রাষ্ট্রপতির দেহরক্ষী ঘোড়াকে এই সম্মান দেওয়া হয়েছে। অবসর নিলেও বিরাট পেনশন পাবে, তা অবশ্য জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।