কলকাতা ব্যুরো: উত্তরপ্রদেশে নির্বাচনের প্রথম দিনে সেই রাজ্যের বিদায়ী মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের বিতর্কিত মন্তব্যে রাজনৈতিক মহলে তোলপাড় শুরু হয়ে গিয়েছে। আগেই যোগীর মন্তব্যে বাংলার রাজনৈতিক দলগুলি একযোগে কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। এবার যোগী আদিত্যনাথকে তোপ দাগলেন কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন।

কেরলের মুখ্যমন্ত্রী কটাক্ষ, যোগী ভয় পাচ্ছেন, আসলে উত্তরপ্রদেশকে যদি কেরল হতে হয়, তবে শিক্ষায়, স্বাস্থ্যে সেরা হতে হবে। উত্তরপ্রদেশের মানুষ যা চান। উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের টুইটার হ্যান্ডেল থেকে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। যেখানে তাঁকে বলতে দেখা যায়, একটা কথা আপনাদের মন থেকে বলতে চাই, গত পাঁচ বছরে বহু দুর্দান্ত কাজ আমরা করেছি। যদি আপনারা আমাদের আর সুযোগ না দেন, তাহলে এই পাঁচ বছরের পরিশ্রম বৃথা যাবে। উত্তরপ্রদেশ; বাংলা, কেরল বা কাশ্মীরের মতো হয়ে যেতে একেবারেই বেশি সময় লাগবে না। আপনাদের ভোট আমাদের জন্য আশীর্বাদ। আপনাদের ভোটই ভয়হীন জীবনের নিশ্চয়তা দিতে পারে।

যোগী কেরল ও বাংলাকে কাশ্মীরের সঙ্গে একাসনে বসানোয় তীব্র সমালোচনা শুরু হয়েছে দেশজুড়ে। পাল্টা সুর চড়িয়েছেন কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়নও। তিনি টুইট করেন, যোগী আদিত্যনাথ ভয় পাচ্ছেন, যদি উত্তরপ্রদেশকে কেরল হতে হয়, তবে শিক্ষায়, স্বাস্থ্য পরিষেবায়, সমাজ কল্যাণে, জীবন ধারনের প্রতিটি ক্ষেত্রে শ্রেষ্ঠ হয়ে উঠতে হবে। হয়ে উঠতে হবে এমন শান্তিপূর্ণ সমাজ, যেখানে ধর্ম ও জাতপাতের নামে মানুষকে খুন হতে হয় না। আর এটাই তো চায় উত্তরপ্রদেশের মানুষ।

পিনারাই বিজয়নের টুইটার হ্যান্ডেল থেকে একই বক্তব্যের একটি হিন্দি টুইটও করা হয়েছে। এদিকে যোগীকে কটাক্ষ করে টুইট করেছেন কংগ্রেস নেতা শশী থারুরও। শশী লেখেন, “বিজেপি যদি ক্ষমতায় না আসে তবে কাশ্মীর, বাংলা অথবা কেরল হয়ে উঠতে পারে উত্তরপ্রদেশ, ভোটারদের বলেছেন যোগী আদিত্যনাথ। তা হলেই উত্তরপ্রদেশের ভাগ্য ফিরবে। কাশ্মীরের সৌন্দর্য্য, বাংলার সংস্কৃতি ও কেরলের শিক্ষা দারুণ কাজে আসবে। উত্তরপ্রদেশের বর্তমান সরকারের জন্য করুণা হয়।

এদিকে যোগী এভাবে বাংলার নাম নেওয়ায় ক্ষোভ ফুঁসে উঠেছেন বঙ্গের রাজনীতিবিদরা। যোগীর এই মন্তব্যে তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ শান্তনু সেনের প্রতিক্রিয়া, যোগী ভয় পেয়েই এ ধরনের মন্তব্য করছেন। বুঝতেই পারছেন, এবার তাঁদের হার আসন্ন।

পালটা প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন কংগ্রেস সাংসদ অধীর চৌধুরীও। অধীরের মন্তব্য, অধমপ্রদেশ হয়ে গিয়েছে উত্তরপ্রদেশ। যোগীর মন্তব্যই তার প্রমাণ। সুজন চক্রবর্তী বলেন, বাংলার কথা উল্লেখ করে বঙ্গবাসীর মধ্যে বিভাজন ধরাতে চাইছেন উনি। অত্যন্ত নিন্দনীয় মন্তব্য এবং এতেই বিজেপির অ্যাজেন্ডা স্পষ্ট হয়।

সিপিএমের আরেক নেতা বিকাশ ভট্টাচার্যর প্রতিক্রিয়া, ভোটের দিন এভাবে মানুষজনকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করেছে যোগী আদিত্যনাথ। এখন নির্বাচন কমিশন চুপ কেন? উত্তরপ্রদেশবাসীর কাছে আবেদন, আপনারা বিজেপি বিরোধিতায় প্রতিরোধ গড়ে তুলুন।

প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার  সুকৌশলে কেরল এবং বাংলাকে কাশ্মীরের সঙ্গে একাসনে বসালেন যোগী। বোঝাতে চাইলেন বাংলা এবং কেরলের মানুষ ভীতির সঙ্গে বসবাস করেন। দেশের অন্যান্য প্রান্তের তুলনায় বসবাসের জন্য অনুপযুক্ত এই রাজ্যগুলি। কিন্তু বাস্তব বলছে, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, পরিকাঠামো সব সূচকেই উত্তরপ্রদেশের থেকে অনেক অনেক এগিয়ে বাংলা ও কেরল। যে রাজ্যে নারী নিরাপত্তা এবং আইন শৃঙ্খলার নিরিখে দেশের মধ্যে সবচেয়ে পিছিয়ে আছে, সেই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর মুখে এই ধরনের মন্তব্য কতটা শোভনীয়? প্রশ্ন উঠছেই।

আসলে, কেরল বা বাংলার মতো রাজ্যগুলিতে সংখ্যালঘুর সংখ্যা উত্তরপ্রদেশের তুলনায় বেশি। তাই এই রাজ্যগুলিকে সন্ত্রাস অধ্যুষিত কাশ্মীরের সঙ্গে তুলনা করে আসলে মেরুকরণের অঙ্কটিই স্পষ্ট করে দিতে চেয়েছেন যোগী, এমনটাই বলছে রাজনৈতিক মহল। বৃহস্পতিবার সকালে শুরু হয়েছে উত্তরপ্রদেশের প্রথম দফার ভোটগ্রহণ। প্রথম দফায় ৫৮ আসনে ভোট হচ্ছে।  সকাল ৭টায় শুরু হয়েছে ভোটগ্রহণ। শেষ হবে সন্ধে ৬টায়। জাঠ কৃষক অধ্যুষিত পূর্ব উত্তরপ্রদেশে এবার কঠিন লড়াইয়ের মুখে বিজেপি।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version