এক নজরে

Assam Boat Accident: অসমের নৌকাডুবিতে এখনও নিখোঁজ ২

By admin

September 09, 2021

কলকাতা ব্যুরো: অসমের জোড়হাটের কাছে ব্রহ্মপুত্রে মুখোমুখি ধাক্কা খেয়ে দুর্ঘটনার কবলে পড়েছিল দু’টি নৌকা। সময়ের একটু গরমিলেই নেমে এসেছিল বিপত্তি। ভয়াবহ নৌ-দুর্ঘটনায় ডুবে যান শতাধিক যাত্রী। বুধবার মধ্যরাত অবধি উদ্ধারকার্য চালানোর পর বৃহস্পতিবার সকালে ফের দুই নিখোঁজ ব্যক্তিকে উদ্ধারের জন্য নদীতে তল্লাশি শুরু করেছে এনডিআরএফ বাহিনী। শেষ খবর পাওয়া অবধি, এখনও একজনেরই মৃতদেহ পাওয়া গিয়েছে, নিখোঁজ রয়েছেন ২ জন। এ দিন মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মাও ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান।

প্রসঙ্গত, বুধবার বিকেলে অসমের ব্রহ্মপুত্র নদের নিমাটি ঘাটের কাছে দুটি নৌকার মধ্যে সংঘর্ষ হয়। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, যন্ত্রচালিত নৌকাটি মাজুলির কমলাবাড়ি ঘাটের দিকে যাচ্ছিল। নিমাটি ঘাট থেকে ‘মা কমলা’ নামের ওই নৌকাটি যাত্রা শুরু করার আগেই সেখানে চলে আসে টিকপাই নামে আর একটি লঞ্চ। সেটি নৌকাকে ধাক্কা মারলে একশোরও বেশি যাত্রী নিয়ে ডুবে যায় নৌকাটি।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিকাল চারটার সময় নৌকাটি ঘাট থেকে ছেড়ে যাওয়ার কথা ছিল। তার আগেই বড় নৌকাটি চলে আসে। সেটি ঘাটে দাঁড়ানোর সময় ধাক্কা মারে ‘মা কমলা’ নামের নৌকাটিকে। সঙ্গে সঙ্গেই ওই নৌকাটি উল্টে যায়। দুই নৌকা মিলিয়ে প্রায় ১২০ জন যাত্রী ছিলেন। লঞ্চটি সজোরে ধাক্কা মারায় জলে ছিটকে পড়ে যান তারা। নৌকায় থাকা সাইকেল, মোটরসাইকেল-সহ প্রায় ৩৫টি যানবাহনও ডুবে যায়।

দুর্ঘটনাটি ঘটার পরই কিছুজন যাত্রী সাঁতরে পাড়ে উঠে আসতে পারলেও বাকিরা নদীতেই হাবুডুবু খেতে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় বাসিন্দারা নদীর জলে ঝাঁপিয়ে পড়েন। তারাও কিছুজন যাত্রীকে উদ্ধার করে পাড়ে তোলেন। খবর দেওয়া হয় প্রশাসনে, কিছুক্ষণের মধ্যেই এনডিআরএফ বাহিনী এসে উদ্ধারকার্য শুরু করে। বুধবার মধ্যরাত অবধি সেই উদ্ধারকার্য চলে। ৪২ জনকে উদ্ধার করা গিয়েছিল রাত অবধি।

বৃহস্পতিবার সকাল হতেই ফের উদ্ধারকার্য শুরু হয়। এসডিআরএফের তরফে জানানো হয়েছে, এনডিআরএফ ও রাজ্য দমকল বিভাগের সহযোগিতায় এখনও অবধি কমপক্ষে ৮৭ জনকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। এদিন সকালে আরও সাতজনের নিখোঁজ থাকার রিপোর্ট জমা পড়ে। এদের মধ্যে পাঁচজনকেই উদ্ধার করা হয়েছে। নিখোঁজ বাকি দুজনের খোঁজ চলছে।

এদিকে, গতকাল রাতে যে একটি মৃতদেহ উদ্ধার হয়, তার পরিচয় জানা গিয়েছে। মৃতার নাম পরিমিতা দাস, বয়স ৩০ বছর। ওই মহিলা কলেজ শিক্ষিকা ছিলেন বলে জানা গিয়েছে। নদী থেকে যাদের উদ্ধার করা হচ্ছে, তাদের জোরহাট মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে চিকিৎসা করানো হচ্ছে। এদের মধ্যে আটজনের শারীরিক অবস্থা জটিল হওয়ায় তাদের হাসপাতালে ভর্তি রাখা হয়েছে। বাকিদের থাকার জন্য হোটেলের ব্যবস্থা করেছে জোরহাট জেলা প্রশাসন।

জোরহাট পুলিশ সুপার অঙ্কুর জৈন জানিয়েছেন, ভারতীয় সেনা বাহিনী ও বায়ু সেনাও উদ্ধারকার্যে হাত লাগাবে। ইতিমধ্যে তাদের দুটি দল রওনা দিয়েছে ঘটনাস্থলের দিকে। এদিকে, এনডিআরএফ, এসডিআরএফের দল ডুবে যাওয়া নৌকাটিকে উদ্ধার করেছে। নৌকার ভিতরে কেউ আটকে ছিলেন না বলেই জানা গিয়েছে।

প্রসঙ্গত, ব্রহ্মপুত্রের জলস্তর বাড়ার ফলে সতর্কতা হিসাবে বিগত ৫ দিন ফেরি চলাচল বন্ধই ছিল। গতকাল থেকে ফেরি চলাচল শুরু হতেই এই দুর্ঘটনা ঘটে। কর্তব্যে গাফলতির জন্য জলপরিবহন বিভাগের তিন আধিকারিককে সাসপেন্ড করা হয়েছে। তদন্তে গাফিলতি প্রমাণ হলে কড়া শাস্তি দেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে।

বুধবার রাতেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মাকে ফোন করে উদ্ধারকার্য ও বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে জানতে চান। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও অসমের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন এবং সবরকমভাবে সাহায্য়ের আশ্বাস দিয়েছেন।

রাজ্য প্রশাসনের তরফে তিনটি হেল্পলাইন নম্বরও চালু করা হয়েছে নিখোঁজ ব্যক্তিদের সম্পর্কে কোনও তথ্য জানানো বা জানার জন্য। ১০৭০, ১০৭৯ ও ১০৭৭-এই তিনটি নম্বর ২৪ ঘণ্টাই চালু রাখা হচ্ছে। এখানে ফোন করলেই দুর্ঘটনা ও আহতদের সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য জানা যাবে।