এক নজরে

Anis Khan: ‘আনিস হত্যাকাণ্ডে’ গ্রেপ্তার পুলিশের ২, জানালেন মুখ্যমন্ত্রী

By admin

February 23, 2022

কলকাতা ব্যুরো: বাম ছাত্রনেতা আনিস খান হত্যাকাণ্ডে ইতিমধ্যেই পুলিশের দু’ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বুধবার নবান্ন থেকে সাংবাদিক সম্মেলন করে একথা জানালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ইতিমধ্যেই রাজ্য সরকারের তরফে সিট গঠন করে তদন্ত শুরু হলেও সিবিআই তদন্তের দাবিতে সরব মৃত ছাত্রনেতার পরিবার। আর এই পরিস্থিতিতে রাজ্য পুলিশের উপর ভরসা রাখার অনুরোধ জানালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, যদি কোনও অন্যায় হয়ে থাকে তাহলে যেই জড়িত থাক, শাস্তি পাবে।

বুধবার দুপুরে নবান্নে শিল্প বৈঠক করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর সেখানেই আনিস মৃত্যু প্রসঙ্গে মুখ খুললেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রথমেই তিনি জানান, এই ঘটনায় পুলিশের দু’জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মমতা বলেন, যাতে তদন্ত নিরপেক্ষ হয় এবং ওই দুই পুলিশ কর্মী যাতে কোনওভাবেই তদন্ত প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করতে না পারে, সেই কারণেই দুই পুলিশ কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এরপর মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, অভিযোগ যদি সত্য হয় সেক্ষেত্রে সরকার অবশ্যই পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। এরপরই বিরোধীদের কড়া বার্তা দেন মমতা। মঙ্গলবারের মহাকরণ অভিযান প্রসঙ্গে বলেন, আমি আন্দোলন করে বড় হয়েছি, আমাকে কেউ আন্দোলন শেখাবেন না। মঙ্গলবার কলকাতায় যা হয়েছে, তা অনভিপ্রেত। এভাবে রাস্তা আটকে আন্দোলন করা কোনওভাবেই উচিত নয়।

আনিস খান হত্যাকাণ্ডে প্রথম থেকেই সিবিআই তদন্তের দাবি জানিয়েছেন মৃতের বাবা সালাম খান থেকে শুরু করে বিজেপি, বাম-সহ একাধিক রাজনৈতিক দল। সেই প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, তাপসী মালিকের হত্যাকাণ্ড থেকে নন্দীগ্রাম কাণ্ড, রবীন্দ্রনাথের নোবেল চুরির তদন্তভারও রয়েছে সিবিআইয়ের হাতেই। কিন্তু এতদিনেও এর কোনও সুরাহা হয়নি।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আরও জানান, বারবার সিবিআই তদন্তের কথা বলে রাজ্য পুলিশের মনোবল ভেঙে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। এরপরই তিনি মনে করিয়ে দিলেন, যে কোনও বিপদে রাজ্য পুলিশই বাংলার মানুষের পাশে থাকে। এক্ষেত্রে সঠিক তদন্তই হবে। প্রকাশ্যে আসবে আসল তথ্য। অভিযুক্তরা শাস্তি পাবেই।

এদিকে মুখ্যমন্ত্রীর এই বক্তব্যের পর আনিস খানের বাবা অবশ্য এখনও পর্যন্ত সিবিআই তদন্তের দাবিতেই সরব হচ্ছেন। তিনি বলেন, দিদি বলছেন, আনিসের হত্যায় দুই জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আমি খুব খুশি হব যেদিন ওদের আদালতে পেশ করে বিচার শুরু হবে। আসামি তো ওঁরা।

অন্যদিকে এদিন রাজ্য পুলিশের উপর ভরসা রাখার আর্জি জানিয়েছেন রাজ্য পুলিশের ডিজি মনোজ মালব্যও। তিনি সাফ জানান, ১৫ দিনের মধ্যেই আনিস হত্যার রহস্য উদঘাটিত হবে। নিরপেক্ষ তদন্তের পর অভিযুক্তদের কঠোরতম শাস্তি দেওয়া হবে। 

বুধবার বিকেলে সাংবাদিক বৈঠক করেন রাজ্য পুলিশের ডিজি মনোজ মালব্য। তিনি বলেন, পুলিশ সিট গঠন করেছে। ইতিমধ্যেই তদন্ত শুরু হয়েছে। ১০০ শতাংশ নিরপেক্ষভাবে তদন্ত হচ্ছে। ইতিমধ্যে যা তথ্য পাওয়া গেছে, সেই প্রাপ্র তথ্যের ভিত্তিতে ইতিমধ্যেই দু’জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে একজন হোমগার্ড কাশীনাথ বেড়া। অপরজন সিভিক ভলান্টিয়ার প্রীতম ভট্টাচার্য।

এরপরই মৃত ছাত্রনেতার পরিবারের বিরুদ্ধে তদন্তে অসহযোগিতার অভিযোগ করেন তিনি। ডিজি বলেন, তদন্তের স্বার্থে মোবাইল ফোন চাইলে দেওয়া হচ্ছে না। তদন্তে বারবার বাধা দেওয়া হচ্ছে। মঙ্গলবার সারাদিন মিরজ খালিদ ঘটনাস্থলে ছিলেন। কিন্তু তাঁকে কোনও রকমভাবে সহযোগিতা করা হয়নি। বুধবার ফের ময়নাতদন্তের জন্য সিট যায় আনিসের বাড়িতে। সেক্ষেত্রেও বাধা দেওয়া হয়। এরপরই রাজ্য পুলিশের ডিজি প্রত্যেককে সহযোগিতার আর্জি জানান।

আনিস খানের মৃত্যু তদন্ত নিয়ে রাজনীতির দড়ি টানাটানি খেলা যেন ধীরে ধীরে বেশ জোরালো হচ্ছে। বামপন্থী ছাত্র নেতা হওয়া সত্ত্বেও আনিসকে নিয়ে বর্তমান রাজ্য সরকার তথা মুখ্যমন্ত্রীর “আমিত্ব” কিছুটা হলেও বাঁকা চোখেই দেখছে রাজনৈতিক মহল। তবে কি পুরসভা ভোটের বৈতরণী শান্তিতে পেরিয়ে যেতেই এত কৌশল? একদম সামনের সারিতে এসে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে কেন বারবার বলতে হচ্ছে রাজ্য পুলিশের উপর দয়া করে আস্থা রাখুন? তাহলে কি সত্যিই রাজ্যের পুলিশের উপর থেকে আস্থা হারিয়েছে রাজ্যবাসী? যেখানে মৃতের পরিবার ও স্থানীয়রা সিবিআই তদন্তের দাবিতে প্রথম থেকে সোচ্চার হচ্ছেন, রাজ্যের গঠন করা সিটকে কোনভাবেই তদন্তে সাহায্য করছে না। তাহলে সরকারের এই মুহূর্তে ঠিক কি করা উচিত? সিবিআইকে তদন্তের দায়িত্বভার দেওয়া উচিত নাকি পুরভোটের বৈতরণী পেরিয়ে তারপর কিছু সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া উচিত? প্রশ্ন তুলছেন রাজনীতিকরা।