%%sitename%%

এক নজরে

Weather Updates West Bengal: বৃষ্টিতে দুর্ভোগ চরমে, মঙ্গলেও ভাসার আশঙ্কা

By admin

September 20, 2021

কলকাতা ব্যুরো: রবিবার মধ্যরাত থেকে শুরু হওয়া দুর্যোগ থেকে এখনই রেহাই মিলছে না বঙ্গবাসীর। সোমবার এমনটাই জানানো হলো আলিপুর আবহাওয়া দফতরের পক্ষ থেকে। বরং আগামিকাল, মঙ্গলবারও কলকাতা সহ রাজ্যের বেশ কয়েকটি জেলায় ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায়। রবিবার মধ্যরাত থেকে শুরু হওয়া বৃষ্টিতে এমনিতেই ভাসছে কলকাতা ৷ ভারী বৃষ্টির জেরে দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলিতেও জনজীবন বিপর্যস্ত ৷ সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় জানালেন, একদিকে ঘূর্ণাবর্ত ও অন্যদিকে মৌসুমী অক্ষরেখার অবস্থান, এই জোড়া চাপেই প্রবল বৃষ্টি শুরু হয়েছে ৷ ঘূর্ণাবর্তটি স্থলভাগ থেকে উপরে ৫.৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে।

অন্যদিকে মৌসুমী অক্ষরেখা গয়া থেকে কলকাতার উপর দিয়ে উত্তর-পূর্ব বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত আছে। তার জেরে ভারী বৃষ্টি হচ্ছে। তবে কলকাতা ও পার্শ্ববর্তী জেলার কিছু অংশের জন্য আশার কথাও শুনিয়েছে হাওয়া অফিস ৷ সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, ঘূর্ণাবর্তটি পশ্চিম দিকে সরছে। যার ফলে কলকাতা ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে বুধবার থেকে বৃষ্টির পরিমাণ কমবে ৷ তবে দক্ষিণ ২৪ পরগনার কিছু অংশে ভারী বৃষ্টি হতে পারে ৷ আর পশ্চিমাঞ্চলের বেশ কয়েকটি জেলায় ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে ৷ সেই তালিকায় রয়েছে, পূর্ব মেদিনীপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর, পূর্ব বর্ধমান, পশ্চিম বর্ধমান, ঝাড়গ্রাম, পুরুলিয়া, ও বাঁকুড়া ৷ সেই কারণে আবহওয়া দফতরের তরফে সাধারণ মানুষের জন্য সতর্কবার্তাও দেওয়া হয়েছে ৷

দফতরের অধিকর্তা জানিয়েছেন, মৎস্যজীবীদের আগামী ২৪ ঘণ্টায় মাছ ধরতে সমুদ্র যেতে নিষেধ করা হয়েছে। বৃষ্টির ফলে নদীতে জলস্তর বৃদ্ধি পাবে। বজ্রপাতের সময় নিরাপদ স্থানে অথবা পাকা বাড়ির নিচে থাকার আবেদন করা হয়েছে। আর কলকাতাবাসীর জন্য আবহওয়া দফতরের সতর্কবার্তা হল, ভারী বৃষ্টির জন্য বিপদজনক বাড়ি থেকে নিরাপদ স্থানে সরে যেতে হবে।

তবে সপ্তাহ শুরুর দিনেই মুষলধারে বৃষ্টিতে নাজেহাল কলকাতা ট্রাফিক পুলিশও। লালবাজার সূত্রে খবর, রাতভর বৃষ্টিতে শহরের উত্তর থেকে দক্ষিণ সর্বত্রই জল জমে যায়। অথচ সপ্তাহের প্রথম কাজের দিন হওয়ায় জল ভেঙেই গন্তব্যে পৌঁছনোর চেষ্টা করেন মানুষ। ছোট গাড়ি নিয়ে রাস্তায় বেরিয়ে বিপাকে পড়েন তাঁদের অনেকেই ৷ ইঞ্জিনে জল ঢুকে যাওয়ায় নানা জায়গায় গাড়ি বিকল হয়ে যায় ৷ ফলে জমা জলেই বাড়তে থাকে গাড়ির লাইন ৷ যানজটে আটকে ভোগান্তি বাড়ে আমজনতার ৷

কলকাতা ট্রাফিক পুলিশ জানিয়েছে, দক্ষিণ কলকাতার তারাতলা রোড, হাইড রোড, বেহালা চৌরাস্তা, টালিগঞ্জ ট্রাম ডিপো, যাদবপুর গড়ফা, অভিষিক্তা মোড় এবং উত্তর কলকাতার শ্যামবাজার, গিরীশ পার্ক, শোভাবাজার-সহ বিস্তীর্ণ এলাকায় জল জমে যায় ৷ বেলা যত বেড়েছে, পরিস্থিতি ততই খারাপ হয়েছে ৷ জমা জল যাতে দ্রুত যাতে নামানো সম্ভব হয়, তার জন্য রাস্তায় নেমে কাজ শুরু করেন কলকাতা পৌরনিগমের কর্মীরা ৷ তাঁদের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজে নামে কলকাতা ট্রাফিক পুলিশও ৷ ভবানীপুরে জমা জল সরাতে নিয়ে আসা হয় জেট স্যাকশন মেশিন। দ্রুত যানচলাচল স্বাভাবিক করতে শুরু হয় তৎপরতা ৷ তবে তাতেও পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি ৷ জমা জলে ট্রাফিকের গতি ছিল মন্থর ৷

এদিন বিকেলের পরে বৃষ্টির বেগ কিছুটা কমলেও, শহরের বহু রাস্তা রাত পর্যন্ত ছিল জলের তলায়। ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল সংলগ্ন রাস্তা, পার্ক স্ট্রিটের ভিতরের রাস্তা থেকে যাদবপুর সুলেখা মোড়- রাতেও জল থৈ থৈ। দিনের বেলায় যদি বা কিছু অটো এবং বাস রাস্তায় ছিল, বিকেলের পর সে সব উধাও। হাতেগোনা যেসব মানুষ জরুরী প্রয়োজনে রাস্তায় বেরিয়ে ছিলেন, বিকেলের পরে তাদের ঘরে ফেরার একমাত্র স্বস্তি ছিল মেট্রোর পথ। কারণ সন্ধ্যের গড়িয়াহাট দেখলে বোঝার উপায় নেই অন্যদিন এই সময় জমজমাট থাকে গোটা এলাকা।

এদিন নেই অটো বাস বা সাটেল। প্রবল বৃষ্টিতে এসএসকেএম থেকে কলকাতা মেডিকেল কলেজ বা বেসরকারী হাসপাতাল সি এম আর আইয়ের একাংশ কার্যত জলের তলায় চলে যায়। দুর্ভোগ পোহাতে হয় রোগী এবং তাদের আত্মীয়দের। তারমধ্যে দুপুরের একটা বড় সময় লকগেট বন্ধ থাকায় গঙ্গা জল নামেনি। ফলে সন্ধ্যের পরেও শহরের প্রাণকেন্দ্রে বড় রাস্তাগুলোতে জল থৈ থৈ ছিল। তার ফলে যানজট দীর্ঘক্ষন ভুগতে হয়েছে নাগরিকদের।

পুলিশ সূত্রে খবর, সোমবার সকাল থেকেই লালবাজার কন্ট্রোল রুমে ফোন করে জল জমা নিয়ে অভিযোগ আসতে শুরু করে শহরবাসীর তরফে ৷ লালবাজার থেকে সরাসরি সেই তথ্য জানিয়ে দেওয়া হয় পৌরনিগমে ৷ এদিন সকাল থেকেই কলকাতা পুলিশের লালবাজারের কন্ট্রোল রুমের হাল-হকিকত সরাসরি পর্ষবেক্ষণ করেন নগরপাল সৌমেন মিত্র ৷ কলকাতায় যান নিয়ন্ত্রণের অভ্যন্তরীণ দায়িত্বে রয়েছেন কলকাতা পুলিশের অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার পদমর্যাদার দু’জন আধিকারিক ৷ উপরন্তু, এদিন শহরের মোট ২৫টি ট্রাফিক গার্ডের ওসিদেরও বিশেষভাবে সতর্ক করা হয় ৷ তাঁদের বলা হয়, ট্রাফিক ব্যবস্থা সচল রাখার জন্য তাঁরা যেন রাস্তায় থাকেন ৷

পাশাপাশি, শহরের রাজপথে জমা জলে ট্রাফিক ব্যবস্থা কীভাবে কাজ করছে, তা তদারকি করতে অতিরিক্ত সংখ্যায় সার্জেন্টদেরও এদিন রাস্তায় মোতায়েন করা হয় ৷