নির্যাতিতার বিচারের দাবিতে জুনিয়র ডাক্তারেরা যখন প্রথম বার কর্মবিরতি শুরু করেছিলেন, তখন থেকেই আন্দোলনের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন সিনিয়র ডাক্তারেরা। প্রথম বারের কর্মবিরতির সময়ে রোগী পরিষেবায় জুনিয়র ডাক্তারদের অভাব অনেকাংশে পূরণ করেছিলেন সিনিয়র ডাক্তারেরা। অতিরিক্ত সময় কাজ করে রোগী পরিষেবা সচল রাখার চেষ্টা চালিয়েছেন সিনিয়রেরা। প্রায় ১ মাস ধরে কর্মবিরতি করেছিলেন জুনিয়র ডাক্তাররা। তারপর রাজ্য সরকারের সঙ্গে বৈঠকের পর আংশিক কর্মবিরতি তুলে নিয়েছিলেন তাঁরা। যদিও চলতি সপ্তাহ থেকে ফের দ্বিতীয় দফার পূর্ণ কর্মবিরতি শুরু করেছেন তাঁরা। কিন্তু আগামী দিনে কর্মবিরতি চলবে কিনা সেবিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে বৃহস্পতিবার বৈঠক হয় আরজি কর হাসপাতালের অডিটরিয়ামে। সেখানে জুনিয়ার ও সিনিয়র ডাক্তাররা উপস্থিত ছিলেন।

জানা গিয়েছে, আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার পক্ষে মতামত জানালেও কর্মবিরতি থেকে সরে আসার প্রস্তাব দিয়েছেন সিনিয়র ডাক্তারদের একাংশের। অন্যদিকে কীভাবে আন্দোলন করা যায় সেই বিষয়টি বিবেচনা করার পরামর্শ দিয়েছেন তাঁরা। সিনিয়র ডাক্তারদের একাংশের বক্তব্য, রোগীর স্বার্থ বিবেচনা করেই এই প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এতদিন পর্যন্ত সিনিয়র ডাক্তাররা হাসপাতাল এবং বহির্বিভাগের যাবতীয় কাজ সামলাচ্ছিলেন। কিন্তু জুনিয়র ডাক্তারদের সাহায্য ছাড়া হাসপাতালগুলিতে রোগীর চাপ সামাল দিতে বেগ পেতে হচ্ছে। সেই কারণে কাজে ফেরার বার্তা দেওয়া হচ্ছে। কয়েকদিন আগেই রাজ্যের একাধিক জেলায় বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। সেই কারণে গ্রামীণ অঞ্চলে অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাঁদের কাছে ভরসা সরকারি হাসপাতাল। ফলে ওই হাসপাতালগুলিতে ব্যাপক চাপ বাড়ছে। আর তাই জুনিয়র ডাক্তারদের কর্মবিরতি তুলে নেওয়ার পরামর্শ সিনিয়র চিকিৎসকদের একাংশের।

বুধবার ধর্মতলায় মহাসমাবেশে জুনিয়র ডাক্তারদের প্রতিনিধি দেবাশিস হালদার জানিয়েছিলেন, তাঁরা কর্মবিরতি থেকে সরে এলেও সেটা মানুষের কথা ভেবেই পদক্ষেপ নেবেন। তবে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে সবাই সহমত পোষণ করেন।সিনিয়র ডাক্তারেরা যে পরামর্শ ও প্রস্তাব দিয়েছেন, তা নিয়ে আলোচনা করছেন জুনিয়রেরা। আরজি করের জিবি বৈঠকের পর রাতেই সবগুলি মেডিক্যাল কলেজের প্রতিনিধিদের নিয়ে পৃথক একটি জিবি বৈঠকও শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। পূর্ণ কর্মবিরতির সিদ্ধান্ত থেকে কি সরে আসবেন তাঁরা? এই বৈঠকে কী সিদ্ধান্ত হয়, সে দিকেই আপাতত নজর চিকিৎসক মহলের। সব মেডিক্যাল কলেজগুলিকে নিয়ে জিবি বৈঠকের আগে জুনিয়র ডাক্তারদের প্রতিনিধি অনিকেত মাহাতোও জানিয়েছেন, কর্মবিরতির বদলে অন্য কী কী বিকল্প পন্থা হতে পারে, সেই নিয়ে আলোচনার জন্যই এই বৈঠক।

অন্যদিকে আরজি করের তৃণমূল ছাত্র পরিষদের মাথাকে জালে পুরে ফেলেছে সিবিআই। আর্থিক অনিয়মের অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছে আশিস পাণ্ডে। ইনি সন্দীপ ঘোষ ঘনিষ্ঠ। আরজি করের তৃণমূল ছাত্র পরিষদের ছাত্র নেতা,  আরজি করে দিনের পর দিন ধরে থ্রেট কালচারের যে সিন্ডিকেট চলছিল তারই মাথায় ছিলেন আশিস। অভিযোগ এমনটাই। সূত্রের খবর আশিস তথ্য গোপন করার চেষ্টা করছিল। সিবিআইয়ের হাতে একাধিক নথি রয়েছে যেখানে আর্থিক অনিয়মের নানা তথ্য প্রমাণ রয়েছে। আর সেই সব নথি দেখিয়ে আশিসকে বার বার প্রশ্ন করে সিবিআই। তাকে বার বার প্রশ্ন করা হয়েছিল। আর্থিক বেনিয়ম সংক্রান্ত ব্যাপারে তার ভূমিকা কী! কিন্তু তিনি অনেক কিছু লুকিয়ে ফেলার চেষ্টা করছিলেন।  ৯ অগস্টা তারিখে যেদিন আরজি করে তরুণী চিকিৎসকের দেহ উদ্ধার করা হয়েছিল সেই রাতে  সল্টলেকের একটি হোটেল বুক করেছিল বলে সূত্রের খবর। এমনকী যখন দেহ উদ্ধার করা হয়েছিল তখনও সেমিনার রুমের কাছেই ছিল আশিস।  

আশিস গ্রেফতার হওয়ার পর তাঁর নানা ‘কীর্তি-র কথা প্রকাশ্যে আসছে। প্রথমত আশিস টিএমসিপির পদ ভাঙিয়ে হাসপাতাল, হোস্টেলে ‘দাদাগিরি’চালাতো। প্রাক্তন ছাত্রদের ‘ইউনিয়ন রুম’-এ তালা ঝুলিয়ে দেওয়া থেকে শুরু করে ফেস্টের নামে অবৈধ ভাবে টাকা তোলা, বেআইনিভাবে কোয়ার্টারে হাউস স্টাফ বসানো, আরজি কর চত্বরের বিভিন্ন স্টল থেকে তোলাবাজি করা। এছাড়া ওষুধ, মেডিক্যাল বর্জ্য, চিকিৎসার সরঞ্জাম কেন্দ্রিক যে সমস্ত দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে, তাতেও আশিস যুক্ত চিল বলে অভিযোগ। স্বাস্থ্যক্ষেত্রে বদলি, বিভিন্ন টেন্ডার থেকে সন্দীপদের হয়ে আশিস টাকা তুলত বলেও অভিযোগ।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version