এক নজরে

Election Campaigning Starts: পুরভোটের প্রচার শুরু তৃণমূল, সিপিএমের

By admin

November 27, 2021

কলকাতা ব্যুরো: ১৯ ডিসেম্বর কলকাতায় পুরভোট। শুক্রবারই প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করেছে তৃণমূল কংগ্রেস ও বামেরা। এরপরই শনিবার সকাল সকাল বিভিন্ন ওয়ার্ডে প্রচারে নামলেন প্রার্থীরা। ৬ বারের কাউন্সিলর। এবার মন্ত্রীও হয়েছেন। কাশীপুর-বেলগাছিয়ার বিধায়ক অতীন ঘোষ চেনা ময়দানে নামলেন পুরভোটের প্রচারে। শনিবার সকালে নিজের পাড়া ফড়িয়াপুকুরের মোহনবাগান লেনে দেওয়াল লেখার কাজেও হাত লাগান কলকাতা পুরসভার ১১ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থী অতীন ঘোষ।

তবে শুধু অতীন ঘোষই নন দেওয়াল লিখে প্রচারের কাজ শুরু করেছেন তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী তথা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাতৃবধূ কাজরী বন্দ্যোপাধ্যায়, রত্না চট্টোপাধ্যায়, পূজা পাঁজা, রঘুনাথ পাত্র, গৌতম হালদার সহ একাধিক প্রার্থী।

শুক্রবার পুরভোটের প্রার্থী তালিকায় ভাতৃবধূকে টিকিট দিয়ে বড় চমক দিয়েছেন তৃণমূল সুপ্রিমো। খোদ মমতার ওয়ার্ডেই প্রার্থী কাজরী বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি মমতার ভাই কার্তিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্ত্রী। শুক্রবার প্রার্থী তালিকা প্রকাশের পর শনিবার সকালেই প্রচার শুরু করে দেন কাজরী। তিনি জানান, মমতা যে তাঁকে প্রার্থী করবেন, এ কথা তিনি জানতেন না। শনিবাসরীয় সকালে প্রচারে বেরিয়ে পড়েন ৭৩ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থী কাজরী।

প্রার্থী হওয়ার কথা কি তিনি জানতেন? জবাবে কাজরী বলেন, প্রার্থী হওয়ার ১০ মিনিট আগেও জানতাম না যে আমি প্রার্থী হচ্ছি। মিটিং থেকে বেরিয়ে দিদি যখন ঘরে এল, তখনও দিদি আমাকে কিছু বলেনি। অন্য একজন বলল, লিস্টে তোর নাম আছে।

যদিও কাজরী বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেন, বাড়িতে রাজনীতির আলোচনা তেমন হয় না। তিনি বলেন, দিদি বাড়ি চলে এলে একেবারে ঘরোয়া, রাজনীতিটা বাইরেই থাকে।

তবে প্রথমবার ভোটে লড়াই, তাই মমতার আশীর্বাদ সঙ্গে নিয়েই নামছেন বলে জানান কাজরী। তিনি জানান, দিদি সবসময়ই ভালো কাজ করার পরামর্শ দেন, মডেল ওয়ার্ড তৈরি করার কথা বলেন। তবে কাজরী জানিয়েছেন ৭৩ নম্বর ওয়ার্ডে বিশেষ কোনও সমস্য নেই। কিছু ঘাট ভেঙে গিয়েছে, ভোটের পর সেগুলো সারিয়ে ফেলা হবে।

বেহালা পশ্চিম বিধানসভা কেন্দ্রের ১৩১ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থী রত্না চট্টোপাধ্যায় এদিন সকালে নিজের ওয়ার্ডে দেওয়াল লিখে প্রচার শুরু করেন। তৃণমূলের তরফে টিকিট পাওয়ার বিষয়টি অবশ্য প্রত্যাশিত ছিল রত্নার কাছে। তাঁর কথায়, বিধায়ক হব কোনও দিন ভাবিনি, তবে আমার আশা ছিল ১৩১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হব। তবে ইতিমধ্যেই রত্না চট্টোপাধ্যায়কে আইনি নোটিস পাঠিয়েছেন বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়। পর্ণশ্রীর বাড়ি ছাড়ার নোটিস পাঠিয়েছেন তিনি। বাড়িটি তিনি কিনে নিয়েছেন বলে নোটিসে দাবি করেন বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়। যদিও এই নোটিস নিয়ে খুব হালকা চালেই জবাব দিয়েছেন রত্না। শনিবার ভোট প্রচারে বেরিয়ে রত্না চট্টোপাধ্যায় হাসতে হাসতে বলেন, লোটা কম্বল গোটানোই আছে। ভোট শেষ হলেই চলে যাব।

রত্না চট্টোপাধ্যায় আরও জানান, শোভনবাবু মেয়র পদ ছাড়ার পর থেকে এই ওয়ার্ডের যাবতীয় কাজ কর্ম দেখতেন তিনি। তাই তিনি নিজেকে এখানকার কাউন্সিলর হিসেবেই ভেবেছেন। তিনি বলেন, ওয়ার্ডের সঙ্গে এতটাই আত্মিকভাবে জড়িয়ে গিয়েছি যে আমার কখনও মনে হয়নি আমি কাউন্সিলর নই।

পাশাপাশি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপণ করেও রত্না জানান, এই টিকিট পাওয়ার বিষয়টি প্রত্যাশিত ছিল। তিনি বলেন, আমি ভাবিনি কোনওদিন বিধায়ক হব, সেই সম্মান দেওয়ার জন্য আমি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে কৃতজ্ঞ।

প্রথমবার ভোটে লড়ছেন মন্ত্রী শশী পাঁজার মেয়ে পূজা পাঁজা। শনিবার কুমোরটুলি এলাকায় প্রচারে নেমে মন্দিরে পুজো দিলেন তিনি। পাশাপাশি, জনসংযোগও সারলেন কলকাতা পুরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডে। 

পাশাপাশি বেহালা পূর্ব বিধানসভার ১৪২ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী রঘুনাথ পাত্র হরিদেবপুর চক রামনগরে নিজের হাতে দেওয়াল লিখে প্রচার শুরু করলেন।

অন্যদিকে শনিবার সাতসকালে মর্নিং ওয়াকে বেরিয়েই প্রচার শুরু করেন ৪ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী গৌতম হালদার। এদিন বাজারে প্রচার করতে করতে দলীয় কর্মী সমর্থকদের সঙ্গে সিপিএমের পার্টি অফিসেও ভোট চান তিনি। 

শিয়ালদা এলাকায় শনিবার প্রচার করেন তৃণমূলের নতুন মুখ মোনালিসা বন্দ্যোপাধ্যায়। কলকাতা পুরসভার ৪৯ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী বাড়ি বাড়ি ঘুরে করলেন প্রচার। বাজারে গিয়েও সারলেন জনসংযোগ।

তবে শনিবার নয় বৃহস্পতিবার থেকেই এক মুহূর্ত সময় নষ্ট না করে তৃণমূল কংগ্রেস কর্মীরা দেওয়াল লিখতে এবং প্রচার করতে শুরু করে দেয়। তবে কোথাও প্রার্থীর নাম ছিল না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়নের কথা লেখা হয় সব দেওয়ালে। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামেও চলে দেওয়াল লিখন।  

শুধু দেওয়াল লেখাই নয়, তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে সব ধরনের প্রচারই শুরু করে দেওয়া হয়েছে। উল্টোডাঙ্গা অঞ্চলে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যেবেলা কয়েকজন তৃণমূল কর্মী বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রচার শুরু করেন। স্থানীয় তৃণমূল নেতা জানান, করোনার কারণে আমরা চার-পাঁচ জন মিলে প্রচারে বেরিয়েছি। আমরা জনসংযোগে জোর দিচ্ছি। প্রার্থীর নাম ঘোষণা হয়ে গেলে তাঁকে সঙ্গে নিয়ে বেরোবো। ছোট ছোট মিটিং করব।

প্রসঙ্গত, প্রথমবার ভোটের ময়দানে সুরজিৎ সেনগুপ্ত। কলকাতা পুরসভার ৯১ নম্বর ওয়ার্ডের কাঁকুলিয়া রোডে শনিবার প্রচার করেন সিপিএম প্রার্থী। একইসঙ্গে চলে দেওয়াল লেখার কাজও। ইতিমধ্যেই শনিবার থেকে বাড়ি বাড়ি প্রচার করতে শুরু করেছে সিপিএম প্রার্থীরা।

অন্যদিকে পুরভোটের ময়দানে বাম- তৃণমূল নেমে পড়েছে। প্রার্থী তালিকা প্রকাশের পর প্রচারও শুরু করে দিয়েছেন প্রার্থীরা। কিন্তু গেরুয়া শিবিরে এখনও চলছে দফায় দফায় বৈঠক। ১৪৪ টি ওয়ার্ডের প্রার্থী তালিকা এখনও চূড়ান্ত করেনি গেরুয়া শিবির। জানা গিয়েছে, শনিবার ফের বৈঠকে বসছে বিজেপি। আর সেখানেই ১৪৪ জন প্রার্থীর নাম জমা পড়বে বলে সূত্রের খবর। এ দিন পরপর ২ দফায় বৈঠক হবে। রবিবারই সম্ভবত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করবে বিজেপি।

বিধানসভা নির্বাচনই হোক বা উপ নির্বাচন, প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে সব দলের পর প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করে বিজেপি। পুর নির্বাচনের ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হচ্ছে না। এ ছাড়া পুরভোট নিয়ে রাজ্যের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিল বিজেপি। গেরুয়া শিবিরে আশা ছিল, আদালতের রায় ঘোষণা হবে শীঘ্রই। তাই পুরভোটের প্রস্তুতি নেওয়ার ক্ষেত্রেও কিছুটা দেরি করেছে বিজেপি। তবে এবার প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করতে তৎপর হয়েছে বঙ্গ বিজেপি।

জানা গিয়েছে, শনিবারই কলকাতা পুরভোটে কংগ্রেসের প্রথম দফার প্রার্থী তালিকা প্রকাশিত হবে। ৫০টি আসনে প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করবে কংগ্রেস। রবিবার পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশ করবে কংগ্রেস। ১৩০টি আসনে প্রার্থী দিতে পারে কংগ্রেস। বামেদের জেতা সব আসনেই প্রার্থী দিচ্ছে কংগ্রেস।