কলকাতা ব্যুরো: রাজ্যের বকেয়া ১০৮টি পুরসভার ভোটে তৃণমূলের প্রার্থীতালিকা নিয়ে চূড়ান্ত বিভ্রান্তি। দলের তরফে দাবি, ভুয়ো লিস্ট ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র। প্রার্থীতালিকা ঘোষণার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ফের তা বদল করা হয়।
সূত্রের খবর, মাত্র ২০ শতাংশ বদল করা হয়েছে নতুন প্রার্থীতালিকায়। ইতিমধ্যেই তা জেলায় জেলায় পাঠিয়েও দেওয়া হয়েছে। শুক্রবার বিকালে বকেয়া পুরভোটে তৃণমূলের প্রার্থীতালিকা প্রকাশ করেন তৃণমূল কংগ্রেস মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তিনি জানান, সুব্রত বক্সি, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, ফিরহাদ হাকিম-সহ দলের শীর্ষ নেতৃত্বের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কমপক্ষে ৩ হাজার প্রার্থীর নাম চূড়ান্ত করা হয়। দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রার্থী তালিকায় অনুমোদন দিয়েছেন। তালিকায় নাম নেই কোনও বিধায়কের। একই পরিবারের একাধিক ব্যক্তিকেও দেওয়া হয়নি টিকিট। তালিকা জেলায় জেলায় তা পাঠিয়েও দেওয়া হয়।
তবে তালিকা প্রকাশের পরই জেলায় জেলায় বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন দলীয় কর্মী-সমর্থকরা। একাধিক জেলায় উঠে এসেছে বিক্ষোভের ছবি। কোথাও টাকা দিয়ে টিকিট কেনার অভিযোগ, তো আবার কোথাও রাস্তা আটকে, টায়ার জ্বালিয়ে চললো বিক্ষোভ প্রদর্শন। প্রার্থী তালিকা দেখে নির্বাচনী কমিটি থেকে পদত্যাগ করেছেন রাজ্যের খোদ মৎস্যমন্ত্রী অখিল গিরি। নির্বাচনকে সামনে রেখে পূর্ব মেদিনীপুরে একটি কমিটি গঠন হয়, যেখানে পাঁচ সদস্যের মধ্যে একজন ছিলেন অখিল গিরি। কিন্তু এ দিন তালিকা দেখেউ ক্ষুব্ধ হন তিনি। সুব্রত বক্সিকে ফোন করে কমিটি থেকে পদত্যাগ করার কথা জানান তিনি। তাঁর অভিযোগ, তাঁর বাছাই করা নাম বাদ দিয়ে সদ্য বিজেপি ছেড়ে আসা নেতাদের দেওয়া হয়েছে টিকিট।
জানা গিয়েছে এদিন কামারহাটি পুরসভায় তৃণমূলের প্রার্থীর নাম ঘোষণা হওয়ার পরই বেশকিছু কর্মী সমর্থকরা বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। কামারহাটির বিধায়ক মদন মিত্রকে ঘিরে চলে বিক্ষোভ প্রদর্শন।
অন্যদিকে কোন্নগর পৌরসভার ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী চন্দন মণ্ডলের বিরুদ্ধে টাকা দিয়ে টিকিট কেনার অভিযোগ উঠেছে। আর এই বিষয় সামনে আসার পরই ক্ষোভে ফেটে পড়েন স্থানীয় তৃণমূল কর্মী সমর্থকরা।
পাশাপাশি পানিহাটি পুরসভার ৩৪ নম্বর ওয়ার্ডের “বহিরাগত” তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থীকে মেনে নিতে পারছেন না ওই ওয়ার্ডের তৃণমূল কর্মী সমর্থকরা । এদিন সন্ধ্যায় প্রার্থী তালিকা প্রকাশের পরই ক্ষোভে ফেটে পড়েন দলীয় কর্মীরা। তারা সোদপুর মধ্যমগ্রাম রোডের ঘোলা থানা সংলগ্ন অঞ্চলে পথ অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। পরে পুলিশি হস্তক্ষেপে অবরোধ ওঠে।
খড়দহ পুরসভার ছবিও ঠিক একইরকম। প্রার্থী তালিকা নিয়ে এখানেও তৃণমূল কর্মীদের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ চোখে পড়েছে। প্রার্থী তালিকা প্রকাশিত হওয়ার পর সন্ধ্যায় খড়দহ নতুন বাজারের কাছে বিটি রোডে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন তৃণমূল কর্মীরা। এছাড়া অশোকনগর পুরসভার ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী বদলের দাবিতে একের তিন নম্বর মোড়ে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভে সামিল হন স্থানীয় তৃণমূল কর্মীরা।
সূত্রের খবর, এরপরই বৈঠকে বসে তৃণমূল নেতৃত্ব। বৈঠকের পর তৃণমূল নেতৃত্ব জানায়, দু’রকমের প্রার্থীতালিকা ভাইরাল হয়েছে। একটি তালিকায় দলের শীর্ষনেতৃত্বের কারও সই নেই। ভাইরাল অপর প্রার্থী তালিকায় সই রয়েছে ঠিকই। তবে তাতে নেই কোনও তারিখের উল্লেখ। এই দুই তালিকাই ভুয়ো বলে জানানো হয়েছে। শাসক শিবিরের দাবি, শীর্ষ নেতৃত্বের সই করা প্রকৃত তালিকা বিভিন্ন জেলায় ইতিমধ্যেই পাঠানো হয়েছে। তবে কীভাবে ভুয়ো তালিকা ভাইরাল হলো, তা শাসক শিবিরের তরফে খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
আগামী ২৭ ফেব্রুয়ারি দার্জিলিং, আলিপুরদুয়ার, কোচবিহার, জলপাইগুড়ি, উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুর, মালদহ, মুর্শিদাবাদ, নদিয়া, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, হাওড়ার উলুবেড়িয়া, হুগলি, পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, বর্ধমান, বীরভূমের মোট ১০৮টি পুরসভায় ভোট। ৯ ফেব্রুয়ারি মনোনয়ন জমার শেষ দিন। ১২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত করা যাবে মনোনয়ন প্রত্যাহার। কবে ফলপ্রকাশ হবে তা এখনও ঘোষণা হয়নি।