কলকাতা ব্যুরো: সুন্দরবনে ঘনঘন বাঘের গভীর জঙ্গল ছেড়ে লোকালয় বেরিয়ে আসা এবং তাকে কেন্দ্র করে আতঙ্কিত বাসিন্দাদের সঙ্গে বাঘে মানুষ টানাটানি ক্রমশ বাড়ছে। বুধবার বিকেলে তেমনই এক ঘটনার সাক্ষী হলো সুন্দরবনের হিঙ্গলগঞ্জ এলাকা। শামসেরনগর গ্রামে ঝিঙ্গাখালী জঙ্গল লাগোয়া রায়মঙ্গল নদীর কুকড়েখালি খাড়ি বরাবর জাল দিয়ে গ্রামের সঙ্গে সীমানা দিয়েছিল বনদপ্তর। এদিন পড়ন্ত বিকেলে সেই জালের ফাঁক দিয়ে একটি বাঘ বেরিয়ে পড়ে জঙ্গল থেকে। তারপর খাল বরাবর হাঁটতে থাকে।
কিছুক্ষণের মধ্যেই খালের এপারে গ্রামের লোকের চোখে পড়ে যায় বাঘটি। তখন ভাটার টান নদীতে। গ্রামবাসীরা আতঙ্কিত হয়ে লাঠি সহ যে যা হাতের কাছে পেয়েছেন তা নিয়ে বাঘটিকে তাড়া করেন। কেউ বনদপ্তরে খবর দেওয়ার জন্য একে ওকে ঠেলাঠেলি করতে থাকেন। বাঘ তখন নদীতে ভাটার মধ্যেই মানুষের চিৎকার শুনতে পেয়ে ভয়ে আতঙ্কে কখনো দৌড়ে কখনো বা কাদার মধ্যে দিয়ে কোনরকমে নিরাপদ দূরত্বে যাওয়ার চেষ্টা করে। দীর্ঘক্ষন ধরে বাঘের পিছনে ছুটতে থাকেন স্থানীয় বেশ কিছু লোকজন। তাদের ভয়, খাড়িতে জল না থাকায়, কোনভাবে বাঘটি ঢুকে পড়তে পারে গ্রামের মধ্যে।
আবার এই অবস্থায় বাঘটির ঢুকে পড়লে তাকে ঠেকানোর জন্য হাতে লাঠিসোটা তুলে নেন গ্রামবাসীরা। যদিও শেষ পর্যন্ত খাড়ির মধ্যেই জঙ্গলের দিকে দীর্ঘক্ষন ঘুরাঘুরির পর ভীত সন্ত্রস্ত বাঘটি ঢুকে পরে জঙ্গলে। গোটা ঘটনা মোবাইলে ভিডিও করেন গ্রামেরই বাসিন্দারা।
বাঘের সেই ছবি দেখে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, কোনভাবে জালের ছেড়া অংশ দিয়ে বাঘটি চলে এসেছিল নদীর ধারে। তারপরে মানুষের চিৎকার-চেঁচামেচিতে ভয় পেয়ে যায় বাগটি। কোনক্রমে গ্রামে ঢুকে পড়লে তার কি হাল হতো তা নিয়ে সন্ধিহান বিশেষজ্ঞরা। যদিও বনদপ্তর এর দাবি, কোন কারনে জঙ্গল থেকে বেরিয়ে পড়লেও আবার সেটিকে জঙ্গলেই ফেরত পাঠানো গিয়েছে। সেটিকে নজরদারির জন্য এদিন বিকেলের পরে বনদপ্তর এর কর্মীরা ওই এলাকায় ঘাঁটি গেড়েছেন।
গত কয়েক বছরে তুলনায় করোনায় লকডাউনের মধ্যে সুন্দরবনে বাঘের আক্রমণে মানুষের আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা অনেকটাই বেড়েছে। সে ক্ষেত্রে লকডাউনে কর্মহীন মানুষ নিজেদের এলাকায় ফিরে কর্মসংস্থানের জন্য জঙ্গলে কাঁকড়া, মধু, মিন সংগ্রহ করতে গিয়ে বাঘের মুখোমুখি হয়েছেন বেশি। ফলে বাঘকে তার নিরাপত্তা দিতে হলে এমন ফাঁকফোকর বুঝিয়ে ফেলা ও আরো নজরদারি জরুরি বলে মনে করছেন অবসরপ্রাপ্ত অফিসাররা।