কলকাতা ব্যুরো: আমেরিকা দাবি করেছিল, আগামী এক মাস লাগবে তালিবানদের আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে পৌঁছতে। আর শুক্রবার তালিবানরা কান্দাহার দখল এরপর কাবুল প্রদেশের একটি জেলায় পৌঁছে গিয়েছে বলে জানাচ্ছেন সর্বশেষ দখল হাওয়া লগার প্রদেশের নাগরিকরা। ফলে আর বড়জোর চার পাঁচ দিনের মধ্যে তালিবান পতাকা রাজধানীর প্রাণ কেন্দ্রে উড়বে বলে নিশ্চিত নাগরিকরা। ফলে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হয়ে উঠবে বলে আশঙ্কা আমেরিকার। তারা নিজেদের দেশের নাগরিকদের নিরাপদে দেশে ফেরাতে বিশাল সেনাবাহিনী সেখানে পাঠাচ্ছে। বিশেষ বিমানে কাবুলে থাকা আমেরিকানদের ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য সবরকম ব্যবস্থা করা হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। ভারতও বসে নেই। কাবুলে কর্মরত ভারতীয় সাংবাদিক এবং ইঞ্জিনিয়ারদের যেকোনোভাবে দেশে ফেরার জন্য সর্তকতা জারি করেছে বিদেশমন্ত্রক। আর ওইদিকে তালেবান জঙ্গিরা একের পর এক প্রদেশ দখলের সঙ্গেই ক্রমশ মৃত্যুর মিছিল চলছে। সঙ্গেই মহিলাদের উপর অত্যাচার নিশংস হয়ে উঠছে।
এর আগে তালিবান মুখপাত্র জানিয়ে ছিল, সপ্তাহখানেকের মধ্যেই কাবুলে তাদের পতাকা উড়বে। বর্তমানে রাজধানীর প্রাণ কেন্দ্র থেকে থেকে মাত্র ৫০ কিলোমিটার দূরে রয়েছে তালিবান জঙ্গি ফৌজ। ইতিমধ্যেই কাবুলের সামান্য দূরে আফগানিস্তানের লগার প্রদেশের দখল নিয়েছে জঙ্গিরা।


শনিবার সকালে কান্দাহারের রেডিও স্টেশনের দখল নিয়েছে তালিবানি জঙ্গিরা। মার্কিন সেনা আফগানিস্তান ছেড়ে যাওয়ার তিন সপ্তাহের মধ্যেই এইভাবে আফগান প্রশাসন তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ায় হাহাকার শুরু হয়েছে সাধারণ নাগরিকদের মধ্যে। যেভাবে আফগান প্রশাসন তালিবানদের কাছে আত্মসমর্পণ করেছে, তা নাগরিকদের আরো ভয়াবহ পরিস্থিতির সামনে দাঁড় করিয়েছে বলে মনে করছেন সেখানকার বিশিষ্টরা।
তালেবান জঙ্গিরা আফগানিস্তানে ৩৪ টি প্রদেশের মধ্যে আঠারোটি প্রদেশের রাজধানী দখল করে নিয়েছে। সর্বশেষ লস্কর ও কুন্দুজ চলে গিয়েছে তালিবানদের দখলে। লগার ও কান্দাহার এখন জঙ্গিদের হাতে। গত মাস ছয়েকে প্রায় চার লক্ষ আফগান ভিটে ছাড়া হয় ভিনদেশে পালিয়ে গিয়েছে। মেয়েদের বাঁচাতে এখন পরিবারগুলি রীতিমতো দিশেহারা। আর জঙ্গিরা যেখানেই যাচ্ছে, সেখানেই পরিবার থেকে মেয়ে থাকলে তাদের তুলে নিয়ে চলে যাচ্ছে বিয়ে করার অছিলায়। পাশাপাশি বাড়িতে কিশোর-তরুণ থাকলে তাদের অন্তত একজনকে দিতে হচ্ছে তালেবান জঙ্গী দলে নাম লিখানোর জন্য
এর প্রতিবাদ করলেই বুলেট বিদ্ধ হচ্ছে দেহ।


জঙ্গিরা এতটাই নৃশংস যে গুলি করে খুন করার পরেও সেই দেহ তুলে নিয়ে যাওয়ার উপায় নেই পরিবারের। আবার মেয়েদের তুলে নিয়ে যাওয়ার সময় বাধা দিতে গিয়ে তালিবানদের গুলি খেতে হচ্ছে নিরীহ নাগরিকদের। এই অবস্থায় রাষ্ট্রপুঞ্জের কাছে আবেদন আফগানিস্থানের সাধারণ মানুষের মানবাধিকার রক্ষার যে ঘোষণা বছর বছর করা হয়, তা আজ আফগানিস্তানের বাইরেই কি থমকে গেছে? অবশ্য এখনো চুপ আমেরিকার মতো শক্তিশালী দেশ। সেনা প্রত্যাহারের পর এত ঘটনার পরেও আর কোনরকম আফগানিস্থানে সামরিক সাহায্য দিয়ে জড়াতে চাইছে না তারা। ফলে লক্ষ লক্ষ আফগান নাগরিকের ভবিষ্যৎ এখন তালিবান জঙ্গিদের হাতের মুঠোয়।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version