এক নজরে

#SpecialReport : পাহাড়ে গুরঙের দাদাগিরি শেষ

By admin

July 01, 2022

এক দশক আগেও বিমল গুরুংয়ের দাদাগিরি ছিল পাহাড়ে। বেশ কিছু কাল ধরেই গুরুং পাহাড়বাসীর মধ্যে গোর্খাল্যান্ড আবেগ নিয়ে তৃণমূল ও বিজেপির মধ্যে আসা যাওয়া করে নিজের রাজনৈতিক ক্ষমতা ধরে রেখেছিলেন। কিন্তু সে খেলার দিন যে ঘনিয়ে এসেছে তার ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছিল গত পুরনির্বাচনে। চার মাস আগে দার্জিলিং পুরসভা নির্বাচনে হামরো পার্টি জয়ী হয়েছিল। কিন্তু এবার জিটিএ নির্বাচনে (GTA Election) তারা আর সুবিধা করতে পারলো না। অনীত থাপার বিজিপিএম-এর কাছে হেরে প্রধান বিরোধী দল হয়েই খুশি থাকতে হল। পাহাড়ের রাজনীতিতে আরও একবার পালাবদল ঘটলো এবং তা হল অনীত ত্থাপার হাত ধরে। তিনিই এখন পাহাড়ে গুরুংয়ের বিকল্প শক্তি বলা যায়। জিটিএ ভোটেই দার্জিলিং ও কালিম্পংবাসী একযোগে গুরুংয়ের রাজনৈতিক কফিনে শেষ পেরেক ঠুকে দিয়েছে। ফলে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা আর পাহাড়ি এলাকায় ক্ষমতাসীন নয়। নতুন দল ভারতীয় গোর্খা প্রজাতান্ত্রিক মোর্চা এখন ক্ষমতায়। ভোটে হারল অজয় এডওয়ার্ডের হামরো পার্টি এখনও দার্জিলিং পুরসভায় ক্ষমতাসীন। উল্লেখ্য,জিটিএ ভোটে এই প্রথম ফুটল তৃণমূল কংগ্রেসের জোড়াফুল।

পাহাড়ের রাজনীতি অনেকটা পাহাড়ের আবহাওয়ার মতো। এই মেঘ তো পরক্ষণে রোদ্দুর। পাশাপাশি প্রতিনিয়তই চলে উত্থান আর পতন। সেই উত্থান-পতনের সরণি যেন অনেকটাই গুরু শিষ্যের পরম্পরা। কালের নিয়েম গুরুর রাজপাট একদিন উঠে আসে শিয্যের হাতে। একদিন পাহাড়ের রাজা ছিলেন সুবাস ঘিসিং। ১৯৮৮ থেকে২০০৮– টানা কুড়ি বছর ঘিসিংয়ের চোখে চোখ রেখে কথা বলার মতো দার্জিলিং পাহাড়ে একজনও কেউ ছিল না। সুবাস ঘিসিংয়ের এই রাজনৈতিক আধিপত্য গোর্খাল্যান্ড আন্দোলনের নেতৃত্বের মাধ্যমে। তখন ঘিসিংকে গুরু মেনে তার ছায়াসঙ্গি ছিলেন জিএনএলএফের অন্যতম কাণ্ডারি বিমল গুরুং। তারপর গুরু সুবাস ঘিসিংকে টপকে উল্কার উত্থান হল বিমল গুরুংয়ের। ঘিসিংয়ের জিএনএলএফ থেকে বেরিয়ে গুরুং গঠন করলেন গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা।

ঘিসিংয়ের মতো গুরুংও পাহাড়ে রাজত্ব করেন গোর্খাল্যান্ড আন্দোলনকে হাতিয়ার করে। ঘিসিঙের সময় পাহাড়ের প্রাপ্তি দার্জিলিং গোর্খা হিল কাউন্সিল আর গুরুংয়ের আমলে জিটিএ। জিটিএ পেয়ে গুরুং পাঁচ বছর শান্ত ছিলেন কিন্তু বোর্ডের মেয়াদ শেষ হ‌তে না হতেই গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে ফের‌ সুর চড়ান। তখন তাঁর ইশারায় ভয়ে হোক আর ভক্তিতে পাহাড়ের মানুষ উঠত বসতো। পাশাপাশি মোর্চার ডাকা টানা বনধে শৈলরানির পর্যটন ব্যবসা লাটে ওঠে। কিন্তু রাজ্য পুলিশের সাব ইন্সপেক্টর অমিতাভ মালিকের গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুর ঘটনায় বেকায়দায় পড়ে যায় বিমল। মামলার বোঝা মাথায় নিয়ে গা ঢাকা দিতেই পাহাড়ের রাজনীতির রাশ আলগা হয়ে পড়ে।

একুশের বিধানসভা নির্বাচনের পরই অনীক থাপা গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা থেকে বেরিয়ে এসে ভারতীয় গোর্খা প্রজাতান্ত্রিক মোর্চা গড়েন। এবার জিটিএ নির্বাচনে জিতে অনীত থাপার সেই বিজিপিএমই পাহাড় রাজনীতিতে পাদপ্রদীপের আলোয় উঠে এল। ঘিসিঙের পর গুরুং, গুরুঙের পর অনীত- একদা অনীত থাপা ছিলেন বিমল গুরুংয়ের গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার প্রথম সারির নেতা। পাহাড়ে হিংসার ফলে গুরুংয়ের অপসারণের পর বিনয় তামাং ও অনীত থাপাই হয়ে ওঠেন দলের প্রধান কাণ্ডারি। ২০২১-এর বিধানসভা ভোটের আগে পাহাড়ে ফিরলেও বিমল আর পুরনো ক্ষমতা ফিরে পাননি। ততদিনে তাঁর অনুপস্থিতিতে ক্ষমতা ভাগ হয়ে যায় বিনয় তামাং ও অনীত থাপার মধ্যে। তাঁরাই মূল গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা হয়ে উঠেছিলেন। কিন্তু একুশের পরবর্তী সময়ে অনীত থাপা নতুন দল গড়েন এবং বিনয় তামাং তৃণমূলে যোগ দেন। বাকি পড়ে থাকে গুরুংয়ের মোর্চা। পাশাপাশি পাহাড়ে উত্থান হয় হামরো পার্টির। জিটিএ নির্বাচনে চতুর্মুখী লড়াইয়ে শেষ হাসি অনীতের।