এক নজরে

রাজ্যের বন্যা পরিস্থিতিতে মৃত ও আহতদের আর্থিক সাহায্যের ঘোষণা প্রধানমন্ত্রীর

By admin

August 05, 2021

কলকাতা ব্যুরো: বুধবার সকালেই রাজ্যের বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে খবরাখবর নিতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ফোন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কেন্দ্রের তরফ থেকে রাজ্যকে সবরকমের আশ্বাস দিয়েছিলেন তিনি। কিছুক্ষন পর প্রধানমন্ত্রীকে রাজ্যের বানভাসি অবস্থার কথা জানিয়ে তিন পাতার একটি চিঠি দেন মুখ্যমন্ত্রী। আর তার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই টুইট করে বন্যা পরিস্থিতির ঘটনায় মৃতদের জন্য ২ লাখ ও আহতদের জন্য ৫০ হাজার টাকা আর্থিক সাহায্যের ঘোষণা করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।

প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে করা টুইট করে জানানো হয়েছে, ‘প্রধানমন্ত্রী জাতীয় ত্রাণ তহবিল থেকে পশ্চিমবঙ্গে বন্যার জেরে মৃতদের পরিবারকে আর্থিক সাহায্য হিসেবে ২ লাখ টাকা করে দেওয়া হবে এবং আহতদের প্রত্যেককে দেওয়া হবে ৫০ হাজার টাকা।’

জানা গিয়েছে, বুধবার প্রধানমন্ত্রীকে দেওয়া তিন পাতার চিঠিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় লিখেছিলেন, ‘৫৪ হাজার কিউসেক জল ছাড়ার কথা বলে ২ লাখ কিউসেক জল ছেড়েছে ডিভিসি। যার ফলে ভেসে গিয়েছে বাংলার বিভিন্ন জেলা। দুর্ভোগে কয়েক লাখ মানুষ।’ চিঠিতে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন এই “ম্যান মেড” বন্যার ফলে ক্ষতির মুখে পড়েছেন দুর্গত এলাকার বাসিন্দারা। শীঘ্রই ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বিস্তারিতভাবে কেন্দ্রকে জানাবে রাজ্য।

প্রসঙ্গত, বন্যা দুর্গত এলাকার পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে বুধবারই হেলিকপ্টারে করে এলাকা পরিদর্শনের কথা ছিল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। তবে খারাপ আবহাওয়া এবং মাঝেমাঝে বৃষ্টিপাতের জেরে সেই পরিদর্শন বাতিল হয়ে যায়। কিন্তু তার কিছুক্ষনের মধ্যেই তিনি সড়কপথে হাওড়ার আমতা ও উদয়নারায়নপুর যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। ত্রাণ শিবিরে গিয়ে কথা বলেন অসহায় মানুষদের সঙ্গে। এদিন দুর্গতদের সঙ্গে দেখা করে মমতা জানান যে তিনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশনের জল ছাড়ার বিষয়ে অভিযোগ জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী মুখ্যমন্ত্রীকে আশ্বাস দিয়েছেন এই প্রাকৃতিক দুর্যোগের পরিস্থিতিতে রাজ্যের পাশেই আছে কেন্দ্র।প্রসঙ্গত, দীর্ঘদিন ধরেই একাধিক ইস্যুতে কেন্দ্র-রাজ্য সংঘাত চরমে। সে আমফান হোক কিংবা ইয়াস; রাজ্যের দাবি ক্ষয়ক্ষতির হিসাব অনুযায়ী সঠিক সাহায্য করেনি কেন্দ্র। একাধিক চিঠি চালাচালি করেও লাভের লাভ কিছুই হয়নি। যা নিয়ে একাধিকবার প্রকাশ্যে সরব হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কেন্দ্রকে বারবার জানিয়েও কোণও সুরাহা হয়নি।২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসের কাছে ভরাডুবি হয়েছে বিজেপির। একুশকে পাখির চোখ বাংলার মাটি আঁকড়ে পড়ে থাকলেও সব মাঠে মারা গিয়েছে বিজেপির হাইকম্যান্ড তথা কেন্দ্রীয় শীর্ষ নেতৃত্বের। তারপর থেকে ধীরে ধীরে নারদা ইস্যু থেকে ভুয়ো করোনা ভ্যাকসিন ইস্যু, রাজ্য সরকারকে একাধিক বাণে বিদ্ধ করেছে গেরুয়া শিবির। নিন্দায় সরব হয়েছেন বিজেপির উচ্চপদস্থ নেতা নেত্রীরাও।কিন্তু মমতা এবার পা বাড়িয়েছেন দিল্লি দখলের উদ্দেশে। ২০২৪ লোকসভা নির্বাচনকে টার্গেট করে রাজধানী শহরে বিরোধী জোটকে এককাট্টা করতে মরিয়া প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন তৃণমূল কংগ্রেস সুপ্রিমো। কিছুদিন আগেই দিল্লি সফরে গিয়ে সোনিয়া গান্ধী, রাহুল গান্ধী, অরবিন্দ কেজরিওয়াল, কানিমোঝি সহ একাধিক বিরোধী দলের হেভিওয়েটদের সঙ্গে বৈঠক করে এসেছেন। প্রধানমন্ত্রী, সড়ক মন্ত্রীদের জানিয়ে এসেছেন রাজ্যের একাধিক দাবিদাওয়ার কথাও। ইতিমধ্যেই মমতাকে “প্রধানমন্ত্রী” হিসেবে দেখতে চেয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় ঝড় তুলেছে “আব কি বার, দিদি সরকার” নতুন হ্যাশট্যাগ। তারমধ্যেই আবার রাজ্যের বানভাসি অবস্থা নিয়ে শুরু নতুন তরজা। রাজ্যের বর্তমান পরিস্থিতির জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের উদাসীনতাকেই কাঠগড়ায় তুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী।অন্যদিকে তাৎপর্যপূর্ণভাবে “বাংলাকে বাঁচানোর” দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছে বিজেপি। দিলীপ ঘোষ, শুভেন্দু অধিকারীরা নিজেদের নতুন করে প্রমান করার তাগিদে সবটুকু উজাড় করে দিচ্ছেন। কলকাতা একাধিকবার দিল্লি গিয়ে দলের হাইকম্যান্ডের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করে রণনীতি সেট করছেন। তাই বুধবার জনসাধারণের ইমোশনকে কাজে লাগিয়ে মমতার চিঠি দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই প্রধানমন্ত্রীর এই আর্থিক সাহায্যদান কিছুটা হলেও স্ট্র্যাটেজিক পদক্ষেপ বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক মহলের একাংশ।