বার্সেলোনার কিংবদন্তিদের আঁতুড়ঘর লা মাসিয়ার রত্ন ইয়ামাল। বেশ কিছুদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিওনেল মেসির সঙ্গে ইয়ামালের ছোটবেলার কটেকটি ছবি ঘুরে বেড়াচ্ছে। মেসি যখন লা মাসিয়া থেকে সদ্য বার্সেলোনার মূল দলে জায়গা পাকা করছেন, তখন ক্লাবের একটি ক্যালেন্ডারের ফটোশুটে ছ’মাসের ইয়ামালের সঙ্গে মেসির দেখা হয়েছিল। সেই ইয়ামালই এখন বল পায়ে কারিকুরিতে মেসিকে মনে করাচ্ছেন। ইউরোর ইতিহাসে সবচেয়ে কমবয়সে মাঠে নামা, গোল আর অ্যাসিস্টের কীর্তি গড়েছেন ইয়ামাল। মেসির মতো রেকর্ডের ফুলঝুরি সাজাচ্ছেন কিশোর বয়সেই। এরই মধ্যে বার্সেলোনার মূল দলের হয়ে নজর কেড়েছেন ১৬ বছরের উইঙ্গার ইয়ামাল। স্পেনের অনূর্ধ্ব ১৫, ১৬, ১৭, ১৯ সব দলের হয়ে খেলেছেন। জাতীয় দলের হয়েও খেলে ফেলেছেন ১৩টি ম্যাচ।

ইয়ামালের জন্ম স্পেনের মাটারা প্রদেশে এক উদ্বাস্তু পরিবারে। তাঁর বাবা মরক্কোর মানুষ, মা আফ্রিকার ছোট্ট দেশ গিনির। নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে আজ এই জায়গাতে উঠে এসেছেন ইয়ামাল। তাঁর পরিবার ২০১৪ সাল থেকে বার্সেলোনায় স্থায়ীভাবে থাকতে শুরু করে। ৭ বছর বয়সে তাঁকে ভর্তি করা হয়েছিল বার্সেলোনার ফুটবল অ্যাকাডেমিতে। স্পেনের প্রতিটি বয়সভিত্তিক দলের হয়ে প্রতিভার পরিচয় দেওয়া ইয়ামালকে তাঁর ওই বয়সেই জাতীয় দলের হয়ে খেলার প্রস্তাব দিয়েছিল মরক্কোর ফুটবল সংস্থা। কিন্তু ইয়ামাল নিজের জন্মভূমিকেই বেছে নেন।

এবারের ইউরোয় তথাকথিত ‘বড়’ দলগুলোর মধ্যে স্পেনই এখন পর্যন্ত সেরা ফুটবল খেলছে। দুর্দান্ত পারফর্ম করে তারা ফাইনালে পৌঁছে গেছে। তারুণ্ ফুটবলারে ঠাঁসা এই স্পেনের এই দলটিতে সবচেয়ে বেশি নজর কেড়েছেন ক্লাব বার্সেলোনায় খেলা ১৬ বছরের কিশোর লামিন ইয়ামাল। ২০২৪-এর ইউরো কাপে প্রথমবারের মতো স্পেনের হয়ে সিনিয়র পর্যায়ের কোনো টুর্নামেন্টে মাঠে নেমেছেন ইয়ামাল। আর মাঠে নামার পর থেকেই একের পর এক কীর্তি গড়ছেন। এছাড়াও ইউরোর ইতিহাসে সবচেয়ে কমবয়সে গোল করানোর রেকর্ডেও এখন ইয়ামালের নাম। আর ফ্রান্সের বিপক্ষে সেমিফাইনালে ইউরোর ইতিহাসে সবচেয়ে কমবয়সি ফুটবলার হিসেবে গোল করার কীর্তিও গড়েছেন এই স্প্যানিশ কিশোর।

সেমিফাইনালে ফ্রান্স যখন রান্দাল কোলো মুয়ানির দেওয়া গোলে ম্যাচে এগিয়ে ঠিক তখনই প্রায় ২৫ গজ দূর থেকে দুর্দান্ত এক শটে লক্ষ্যভেদ করেন ইয়ামাল। এই গোলের মাধ্যমেই সবচেয়ে কমবয়সি ফুটবলার হিসেবে ইউরোয় গোলের কীর্তি গড়েন তিনি। এই গোলের জন্য ম্যাচসেরার পুরস্কারও পেয়েছেন এবং ইউরো কাপের ইতিহাসে সবচেয়ে কম বয়সে ম্যাচসেরা হওয়ার রেকর্ডটাও তাঁর হয়ে গেছে। এই গোলেই ম্যাচের মোড় ঘুরে যায়। টুর্নামেন্টে প্রথমবারের মতো ছন্দময় ফুটবল খেলতে থাকা দিদিয়ের দেশমের ফ্রান্স এই গোলেই মোমেন্টাম হারায়। অন্যদিকে এই গোলের চার মিনিটের মাথায় আরেক গোলে ফরাসিদের টপকে ফাইনালে জায়গা করে নেয় স্পেন।

ক্লাব ফুটবলেও সবচেয়ে কমবয়সি ফুটবলার হিসেবে একাধিক রেকর্ড গড়েছেন ইয়ামাল। বার্সেলোনার ইতিহাসে সবচেয়ে কম বয়সে লা লিগায় অ্যাসিস্ট, সবচেয়ে কম বয়সে লা লিগায় গোল, সবচেয়ে কম বয়সে লা লিগায় ম্যাচে জোড়া গোল সহ অসংখ্য কীর্তি স্থাপন করেছেন এই তরুণ ফুটবলার। ইয়ামাল ইতিমধ্যেই পেলের রেকর্ড ভেঙে দিয়েছেন। কোনও বড় আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টের সেমিফাইনালে খেলা এবং গোল করার নতুন রেকর্ড এখন ইয়ামালের। বিশ্বের অন্যতম সেরা ফুটবল আইকন ৬৬ বছর আগে ১৯৫৮ সালে এই রেকর্ড গড়েছিলেন।

যাঁকে নিয়ে এত কথা সেই স্প্যানিশ কিশোর অবশ্য এতকিছু ভাবছেন না। ১৬ বছরের ইয়ামালের মন্তব্য, ‘এসব নিয়ে বেশি ভাবতে চাই না। আমি জানি না, আমি আদৌ আইকন কিনা। কারণ এসব মাঠে একেবারেই সাহায্য করে না।’ তিনি খুশি দলকে সাহাষ্য করতে পেরে, ‘আমি খুশি দলকে জয় এনে দেওয়া এবং ফাইনালে তুলতে পেরে। জানি না, এটাই টুর্নামেন্টের সেরা গোল কিনা।’ স্পেনের হয়ে কখনও ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল খেলবেন ভাববেননি বলে জানান। তাঁর কাছে এ এক স্বপ্ন সত্যি হওয়ার দিন। আগামী রবিবার কাকে প্রতিপক্ষ হিসাবে পেতে চান জানতে চাওয়া হলে ইয়ামালের জবাব, ‘এই নিয়ে ভাবছি না। ম্যাচটা কঠিন হবে।’ মেসির ছোঁয়ায় বড় হয়ে ওঠা এই কিশোর শেষপর্যন্ত ফাইনালের কঠিন ম্যাচকে (UEFA Euro 2024) সহজ করে তুলতে পারেন কিনা সেদিকেই তাকিয়ে এখন গোটা বিশ্ব।