আকাশসীমা ভেদ করা অট্টালিকা ও জৌলসপূর্ণ আধুনিক আরব আমিরাতের জাঁকজমকের মাঝে লুকিয়ে থাকা ভৌতিক গ্রাম আল মাদাম। মরুভূমির বালিতে চাপা পড়ে থাকা এই পরিত্যক্ত গ্রামে পার্শ্ববর্তী এলাকার কোনো লোকই আসতে চায়না। কারণ লোকমুখে প্রচলিত যে, গ্রামটি ভৌতিক। সংযুক্ত আরব আমিরাতের সর্ববৃহৎ এবং সবচেয়ে জনবহুল শহর। দুবাই থেকে মাত্র ৭৪ কি.মি. দূরেই রয়েছে পরিত্যক্ত গ্রাম আল মাদাম। দুবাই শহর হতে ঘণ্টাখানেকেরও কম সময়ে গাড়ি চালিয়ে পৌঁছানো যায় শারজার সীমান্তবর্তী নির্জীব এই গ্রামে।

পরিত্যক্ত ১২টি বাড়ি এবং কেন্দ্রে নির্মিত একটি মসজিদে ঘেরা আল-মাদাম গ্রামে প্রথমে পা রাখতেই জনশূন্যতার বিস্ময়কর নিরবতা এবং রহস্যময় বালির ঘ্রাণ পাওয়া যাবে। পুরো গ্রামটিকে ধীরে ধীরে গ্রাস করে নিচ্ছে মরুভূমির বালি। পরিত্যক্ত বাড়িগুলোর দরজা পুরোপুরি খোলা, আবার কোনো কোনো বাড়িতে দরজার অস্তিত্বই নেই। বাড়িগুলোর ভেতরে রাখা এলোমেলো আসবাবপত্রগুলোকেও গ্রাস করেছে বালির প্রতিটি কণা। গ্রামের এই দৃশ্য দেখে যে কেউ বুঝতে পারবে, গ্রামের বাসিন্দারা আচমকা কোনো বিপদে নিজেদের জীবন রক্ষার্থে সবকিছু ছেড়ে গ্রাম হতে পালিয়েছে। আবার অনেকে এই কথাও বলে থাকে, অতিপ্রাকৃত কোনো শক্তি এই গ্রামের বাসিন্দাদের গ্রাম ছেঁড়ে পালাতে বাধ্য করেছে।

গ্রামটির এই ভুতুড়ে ঘটনা চাউর হতেই বিজ্ঞানীরা এর কারণ খুঁজতে আল মাদামে যান। প্রাথমিক ভাবে বিজ্ঞানীরা জানতে পারেন যে, গ্রামে নাকি এমন এক রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটেছিল যে কারণে ঐ গ্রামের ধারেকাছে ঘেঁষতেও কেউ সাহস পেতেন না। দুবাই থেকে এক ঘণ্টার দূরত্বে মরুভূমির মাঝে শারজার সীমানালাগোয়া এই জনশূন্য গ্রামে যে কয়েকটি বাড়ি রয়েছে, সেগুলোর দরজা-জানলা হাট করে খোলা। ঘরের আসবাবপত্রও এলোমেলো। দেখে মনে হবে, কোনো তাড়াহুড়োয় বা আপৎকালীন পরিস্থিতিতে সব ফেলে পালিয়েছেন বাসিন্দারা।

স্থানীয়দের দাবি, ১৯৭০ সালের আশপাশে এই গ্রামটির সৃষ্টি। গ্রামে গেলেই একটা অদ্ভুত নিস্তব্ধতা অনুভূত হবে। গা ছমছমে ভাব চতুর্দিকে। চারদিকে ধু ধু করছে বালি। আর তার মাঝখানে বালির মধ্যে থেকে মাথা উঁচিয়ে আছে বেশ কয়েকটি বাড়ি আর একটি মসজিদ। দিনের বেলায় আর পাঁচটা গ্রামের মতোই লাগবে আল মাদামকে। তবে রাত হতেই এর চেহারা বদলে যায়। সেখানে যে একটা গ্রাম রয়েছে তা বোঝা দায় হয়ে যায়। প্রাথমিক ভাবে বিজ্ঞানীরা মনে করেছিলেন, রাতের বেলায় বালিতে ঢাকা পড়ে যায় পুরো গ্রাম। কারণ সেখানে ক্রমাগত হাওয়া চলতে থাকে। যে কারণে বালি এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় সেই হাওয়ার সঙ্গে উড়ে যায়। আর সে বালির তলায় চাপা পড়ে যায় গ্রাম। তবে এই যুক্তিকে আবার বিজ্ঞানীদের একাংশ খণ্ডন করেছেন। তাদের দাবি, রাতে বালিতে চাপা পড়ে গেলেও, দিনে আবার দ্রুত বালি সরে যায় কীভাবে? এমনটা তো সম্ভব নয়!

বিজ্ঞানীরা আরো একটি সম্ভাবনার কথা তুলে ধরেছেন। তা হলো, রাতে দৃষ্টিভ্রমের কারণে গ্রামটি অদৃশ্য হয়ে গিয়েছে বলে মনে হয়। কারণ দুবাইয়ে যেমন অর্ধেক মরুভূমি, তেমনই রয়েছে সমুদ্র। ভূপৃষ্ঠের কাছাকাছি বাতাস দ্রুত গরম হয়, আর উপরের দিকের বাতাস সমুদ্রের কারণে ঠাণ্ডা থাকে। ফলে নীচের দিকে যখন আলোর প্রতিসরণ হয়, তখনই মনে হয় গ্রামটি অদৃশ্য হয়ে গিয়েছে। গ্রামটিকে আল কুতবি উপজাতি সম্প্রদায়ের বাস ছিল। প্রতিকূল পরিবেশ, ধু ধু মরুভূমি আর ক্রমাগত বালির হামলার কারণে গ্রাম ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন কুতবিরা। গ্রামটির এই ‘রহস্যময়’ চরিত্রের জন্য তা পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠছে। অনেক আবার রহস্য উদ্ঘাটনের টানে ছুটে আসেন। আল মাদামের পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলোর বিশ্বাস, ঐ গ্রামে এক নারীর আত্মা ঘুরে বেড়ায়। উম দুয়াইস নামে ঐ আত্মার বিড়ালের মতো চোখ, হাতে ধারালো অস্ত্র থাকে।