তিনটি লোকসভা এবং সাতটি বিধানসভা আসনে উপনির্বাচনের ফলাফল ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনের আগে বিজেপির পক্ষে বলেই মনে হচ্ছে। দিল্লি, অন্ধ্রপ্রদেশ, ঝাড়খণ্ড- এই তিন রাজ্যের উপনির্বাচনে গেরুয়া শিবির পুরোপুরি ধরাশায়ী। ত্রিপুরায় কিছুটা ভালো ফল করলেও রাজধানী আগরতলায় বিজেপির লজ্জাজনক হার হয়েছে। যদিও চার কেন্দ্রের মধ্যে তিনটিই বিজেপি দখল করেছে কিন্তু জয়ের ব্যবধান খুব একটা বেশি নয়।

ত্রিপুরায় উপনির্বাচনে নতুন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সাহা বড় জয় পেলেও রাজধানী আগরতলাতে বিজেপি বড় ধাক্কা খেল। এই কেন্দ্র থেকে বিপুল ভোটে জয়ী হয়েছেন প্রাক্তন বিজেপি বিধায়ক সুদীপ রায় বর্মন। মাসখানেক আগে তিনি বিজেপি ছেড়ে কংগ্রেসে যোগ দেন। আর সেখানে দাঁড়িয়েই বড় ধাক্কা দিলেন বিজেপিকে। বছর ঘুরলেই ত্রিপুরাতে বিধানসভা নির্বাচন। তার আগে বিজেপি’র কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে বিপ্লব দেব সরকারকে সরিয়ে মানিক সাহাকে গুরু দায়িত্ব দেন।বিধানসভা নির্বাচনের আগে ত্রিপুরার চার কেন্দ্রের উপনির্বাচন ছিল বিজেপির কাছে প্রেস্টিজিয়াস ফাইট।তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে চার কেন্দ্রেই তৃণমূলকে চতুর্থ স্থানে পিছিয়ে রেখে কংগ্রেস দ্বিতীয়স্থানে এবং বামেরা তৃতীয় স্থানে উঠে এসেছে।

বোঝা যাচ্ছে আগামী দিনে ত্রিপুরায় বিজেপির সঙ্গে সরাসরি লড়াই হবে বাম-কংগ্রেসের। রাজধানী আগরতলা কেন্দ্রে কংগ্রেস প্রার্থী সুদীপ রায় বর্মণ বিজেপি প্রার্থী অশোক সিনহাকে হারিয়ে দেওয়ায় গেরুয়া শিবির বেজায় অস্বস্তিতে পড়েছে। রাজনৈতিক বিশেষঙ্গরা বলছেন, এই ফল থেকে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে ত্রিপুরার মাটিতে বিজেপিকে হারান যায় এবং এরফলে বিজেপি বিরোধী শিবির আরও উজ্জীবিত হবে।

অন্যদিকে অন্ধ্রপ্রদেশের আতমাকুর কেন্দ্রে বিজেপি বিপুল ভোটে হেরেছে। এখান থেকে প্রায় ৮৩ হাজার ভোটে জিতেছেন ওয়াইএসআর কংগ্রেস প্রার্থী মেকাপতি বিক্রম রেড্ডি।বিজেপি এই কেন্দ্রে মাত্র ১৪ শতাংশ ভোট পেয়েছে। পাশাপাশি ঝাড়খণ্ডের মান্দার বিজেপির পরাজয় ঘটেছে। মন্দারে বিধানসভা আসনে জিতেছেন কংগ্রেসের শিল্পী নেহা তিরকি।

পঞ্জাবের সাংরুর কেন্দ্রেও বিজেপি দাঁত ফোটাতে পারেনি। লোকসভা উপনির্বাচনে সেই আসনে জয়ী হয়েছেন শিরোমণি অকালি দলের প্রার্থী সিমরনজিৎ সিং মান৷২০১৪-র পরে ২০১৯-এ সাংরুর লোকসভা কেন্দ্র থেকে লোকসভা ভোটে জয়ী হয়েছিলেন আপের ভগবত মান। চলতি বছর মার্চ মাসে তিনি পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রীর হয়ায় লোকসভার আসনটি ছেড়ে দিতে হয়। কিন্তু মাত্র সাড়ে তিনমাসের মধ্যে সেখানে রংবদল হল কিভাবে। সাংরুর লোকসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনের ফলে দেখা যাচ্ছে এক সময় জমানত খোয়ানো শিরোমনি অকালি দল অমৃতসরের প্রধান সিমরণজিৎ সিং মান প্রায় ছয় হাজার ভোটে আপ প্রার্থীকে হারিয়েছেন। প্রশ্ন উঠছে, সাড়ে তিনমাসেই কি জনগণ আপের ওপর বিরূপ হয়ে উঠল।

যদিও দিল্লির রাজিন্দর নগর কেন্দ্রে ১১ হাজার ৪৬৮ ভোটে জিতেছে আপ। কিন্তু পঞ্জাবে খোদ মুখ্যমন্ত্রীর কেন্দ্রে হেরে যাওয়ায় দিল্লির রাজেন্দ্রনগর বিধানসভা উপনির্বাচনে আম আদমির জয় কিছুটা হলেও ঢাকা পড়ে গেল। বিজেপি বহু চেষ্টা করেও এবার দিল্লির বিধানসভা নির্বাচনে আপ-এর দাপট রুখতে পারল না। তবে এবার উপ নির্বাচনে ভোট খুব কম পড়ায় ব্যবধান কমেছে আপ-এর। বিজেপির মোট ১৮জন এই কেন্দ্রে জয়ের দাবি করে প্রার্থী হতে আবেদন করেছিলেন। তার মধ্যে থেকে রাজেশ ভাটিয়াকে বেছে আপকে হারাতে চেয়েছিল বিজেপি। কিন্তু পদ্ম শিবিরের সেই আশা পূরণ হল না।

তবে বিজেপি উত্তরপ্রদেশের দুটি লোকসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে দুটিতেই জয়ী হয়েছে। রামপুর ও আজমগড় কেন্দ্র দুটি সপার শক্ত ঘাঁটি বলে পরিচিত৷ উত্তরপ্রদেশের উপনির্বাচনে বিজেপির ব্যাপক জয় অখিলেশ যাদবের চিন্তা বাড়ালো। রামপুর লোকসভা নির্বাচনী কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী ঘনশ্যাম সিং লোধি সম্প্রতি সমাজবাদী পার্টি ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন। বিজেপি রামপুর লোকসভা নির্বাচনী কেন্দ্রের উপনির্বাচনে তাঁর ওপরেই ভরসা রাখে। লোধি বিজেপিকে নিরাশ করেননি। আজম খানের দুর্গ হিসেবে পরিচিত রামগড়ে লোধি উপনির্বাচনে বিজেপির জয় ছিনিয়ে আনেন। রামগড়ের মতো আজমগড়ও সমাজবাদী পার্টির শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত ছিল। সমাজবাদী পার্টির প্রধান অখিলেশ যাদব সাংসদ পদ ছেড়ে দিলে সেখানে উপনির্বাচন হয়। আজমগড়ের উপনির্বাচনেও ভোজপুরী অভিনেতা ও গায়ক দীনেশ লালা যাদব নিজের জয় নিশ্চিত করেছেন।

বিরোধীদের হাতে বেকারত্ব, অসহিষ্ণুতা, মূল্যবৃদ্ধি, অগ্নিবীরের মতো হাজারো ইস্যু। তারপরও বিজেপি দেশের মোট ১০ আসনের উপনির্বাচনের মধ্যে ৫টিতে জয় পেয়েছে। কেবল তাই নয়, যে দুই রাজ্যে জয় পাওয়াটা বিজেপির জন্য চ্যালেঞ্জ ছিল, সেই দুটি রাজ্যেও গেরুয়া শিবিরজয় পেয়েছে।দলের টালমাটাল পরিস্থিতিতেও কংগ্রেস২টি আসনে জিতেছে। একটি করে আসন জিতল আম আদমি পার্টি, শিরোমণি অকালি দল (অমৃতসর) এবং ওয়াইএসআর কংগ্রেস।

উত্তরপ্রদেশেও বিজেপি অখিলেশের দুর্গ ছারখার করে দিয়ে উত্তরপ্রদেশের দুটি লোকসভা আসনই দখল করেছে। ওই দু’টি আসনই সমাজবাদী পার্টির শক্ত ঘাঁটি বলে পরিচিত। সবচেয়ে অপ্রত্যাশিত ফলাফল হয়েছে পাঞ্জাবে। আম আদমি পার্টির প্রার্থীকে হারিয়ে চমক দিয়েছেন শিরোমণি অকালি দল অমৃতসরের প্রার্থী। বিধানসভা নির্বাচনের মাত্র কয়েক মাসের মধ্যে এভাবে মুখ্যমন্ত্রীর কেন্দ্রে শাসকদলের হেরে যাওয়া বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। বাকি তিন আসনের মধ্যে দিল্লিতে জিতেছে আম আদমি পার্টি। ঝাড়খণ্ডে জিতেছে শাসক জোটের সঙ্গী কংগ্রেস। অন্ধ্রপ্রদেশেও বিরাট জয় পেয়েছে ওয়াইএসআর কংগ্রেস পার্টি।
Share.
Leave A Reply

Exit mobile version