তথ্য প্রযুক্তির এই যুগে আপনি যদি কাউকে চিঠি লেখেন, তাহলে তা গন্তব্যে পৌঁছাতে কত সময় লাগতেপারে? এক সপ্তাহ বড়জোর এক মাস আর যদি কোনও অঘটন ঘটে তাহলে আরও কয়েকমাস। তার থেকেবেশি সময় লাগার কোনও কারণ নেই। কিন্তু সেই চিঠি যদি ১০০ বছরেরও বেশি সময় পরে তার গন্তব্যে পৌঁছায়, তখন কী বলবেন আপনি? গল্পনয়, এমনটাই ঘটেছে। চিঠিটি পোস্ট করা হয়, ১৯১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে। বিশ্বযুদ্ধের সময়ে পাঠানো ওই চিঠিটি সম্প্রতি দক্ষিণ লন্ডনের হ্যালেট রোডের ঠিকানায় আসার পর এ নিয়ে শুরু হয় হইচই।
চিঠিতে প্রাপকের ঠিকানা লেখা ছিল, হ্যামলেট রোড, দক্ষিণ লন্ডন। সেই ঠিকানায় এখন থাকেন ফিনলে গ্লেন। তিনি বলেন, ‘আমরা ১৬ সাল লেখাটা লক্ষ্য করেছিলাম। ভেবেছিলাম, এটি ২০১৬ সালে লেখা। পরে চিঠির স্ট্যাম্পেদেখি, একজন রাজার ছবি, তিনি কিং জর্জ। বিষয়টি আমাকে ধাক্কা দেয়। কারণ, স্ট্যাম্পে রানির ছবি থাকার কথা।’প্রয়াত রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের জন্মেরও আগের সময়। উল্লেখ্য, গ্লেনের কথা অনুযায়ী আরও কয়েক বছর আগে চিঠিটি তাদের বাড়িতে পৌঁছায়। তবে, বেশ কয়েকদিন আগে সেটি তারা হাতে পায়। প্রসঙ্গত, ব্রিটেনের পোস্টাল সার্ভিস অ্যাক্ট ২০০০ অনুযায়ী, অপরের নামে কোনো চিঠি পেলে সেটি খুলে দেখা আইনত অপরাধ। এর জন্য সাজা বা জরিমানা গুনতে হবে। গ্লেন বলেন, ‘আমরা বুঝতে পারি এটি পুরনো, চিঠির ঐতিহাসিক গুরুত্ব বুঝতে পেরেই আমি চিঠিটি খোলার সাহস পাই।’
চিঠিটি লিখেছিলেন ক্রিস্টাবেল মেনেল। যার বাবা ছিলেন চা ব্যবসায়ী হেনরি টুক মেনেল। লিখেছিলেন ওসওয়াল্ড মার্শ নামের একজনের স্ত্রী কেটির কাছে। কেটির উদ্দেশ্যে মেনেল লিখেছিলেন, ‘প্রিয় কেটি, আমি এখানে খুব ঠাণ্ডার মধ্যে বেশ কষ্টকর জীবনযাপন করছি।’ মেনেল চিঠিতে এও লিখেছেন যে, তার পরিবার ইংল্যান্ডের বাথ শহরে ছুটি কাটাচ্ছিলেন।জানা গিয়েছে, ১৮০০ দশকে লন্ডনের দক্ষিণাঞ্চল ব্যবসায়িক কেন্দ্র ছিল। অনেক ধনাট্য পরিবার তখন ওই এলাকায় বসতি স্থাপন করে।তবে কেন চিঠিটি তার নির্ধারিত গন্তব্যে পৌঁছাতে এত সময় নিয়েগ্লেনের ঠিকানায় এসে পৌঁছাল তা এখনও স্পষ্ট নয়।এবিষয়ে নরউড রিভিউ-এর সম্পাদক স্টিফেন অক্সফোর্ড বলেন, এটি খুবই অস্বাভাবিক ঘটনা তবে এই চিঠিটি আমাদের স্থানীয় ইতিহাস সম্পর্কে জানতে সাহায্য করবে।
প্রায় একই ধরণের আরেকটি ঘটনা ঘটেছিল বছর তিন আগে। ১০০ বছর আগে ডাকযোগে পাঠানো একটি চিঠিএসে পৌঁছয় যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগানের ব্রিটানি কিচ নামে এক মহিলার ডাকবাক্সে। তিনি জানান, নিজের সন্তান ও বাড়ির কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকায় পোস্টকার্ডটি প্রথমে গুরুত্ব সহকারে খেয়াল করেননি। তিনি এও বলেন, তাঁর কাছে ব্যাপারটি খুবই অদ্ভুত লাগে। কারণ, বর্তমান যুগে কেউ পোস্টকার্ড পাঠায় না। তারপর-ই তিনি খেয়াল করেন, পোস্টকার্ডটি পাঠানোর তারিখ ১৯২০ সালের ২৯ অক্টোবর। তার বর্তমান ঠিকানায় রয় ম্যাককুইন নামের এক ব্যক্তির কাছে পাঠানো হয়েছিল পোস্টকার্ডটি। ফ্লোসি বার্জেস নামে এক ব্যক্তি পাঠিয়েছিল এটি।
পোস্টাল সার্ভিসের একজন মুখপাত্র জানান, ‘এ ধরনের ঘটনায় পুরানো চিঠি বা পোস্টকার্ড ডাকবিভাগে আসার পর হারিয়ে যাওয়া ও পুনরুদ্ধারের ঘটনা কমই ঘটে। সাধারণত মানুষ ফ্লে মার্কেট, অ্যান্টিকের দোকান বা অনলাইন থেকেই এ ধরনের পুরনো জিনিস কিনে পুনরায় ডাকবিভাগে পাঠান। ঠিকানা দেয়া থাকলেই আমরা কার্ড বা চিঠিগুলো সেই ঠিকানায় পাঠিয়ে দেই। ম্যাককুইন বা বার্জিসের কোনো পরিবারের সদস্য বা দুটি পরিবারের সদস্যদের চেনেন এমন কাউকে খুঁজে পেতে কিচ পোস্টকার্ডটির ছবি ফেসবুক গ্রুপে পোস্ট করেছেন।