কলকাতা ব্যুরো: প্রবল প্রাকৃতিক বিপর্যয় সাড়া ফেলে দেওয়া রাজ্যে সতর্কতার মধ্যে এ যেন এক অন্য বাবুঘাট দেখা গেল মঙ্গলবার সকালে। স্ট্যান্ড রোডের পারে গঙ্গার মাঝে যেখানে হাওড়া এবং বাবুঘাটের মধ্যে লঞ্চ চলাচল করে, তার খানিকটা দূরেই এখন বিস্তীর্ণ জলপথ একেবারে ফাঁকা। শুধু বাড়ছে ঢেউয়ের উপর ঢেউ। গঙ্গার জলের ঢেউয়ের শব্দ ধাক্কা মারছে পাড়ে।
অথচ দুদিন আগেও চিত্রটা ছিল একেবারে আলাদা। নদীর মধ্যে দ্বিতীয় হুগলি ব্রিজকে পিছনে রেখে জমে থাকে একের পর এক লঞ্চ, আর ছোট জাহাজ। গঙ্গার মাঝখানে একসঙ্গে অন্তত গোটা দশেক এমন লঞ্চ, জাহাজ, নৌকো, ভুটভুটি দিনের-পর-দিন জমিয়ে রাখা নিয়ে পরিবেশ কর্মীরা বিভিন্ন সময় গঙ্গাকে দূষিত করার অভিযোগও তুলেছেন। কিন্তু সে কথায় এতদিন কান দেয়নি কেউ।


এবার সাইক্লোন যশের প্রবল বেগে ধেয়ে আসার পূর্বাভাসে টনক নড়েছে প্রশাসনের। নদীর বুক থেকে সে সব নোঙ্গর করে রাখা জলযান গুলি হঠাৎ যেন উবে গিয়েছে। এখন বাবুঘাট থেকে দ্বিতীয় সেতুর দিকে তাকালে একেবারে শুনশান ফাঁকা, বহু দূর পর্যন্ত দৃশ্যমান। অথচ যারা নিত্যদিন নদীপথে হাওড়া এবং বাবুঘাটে চলাচল করেন অথবা সার্কুলার ট্রেনে যাতায়াত করেন, তারা দেখেছেন, বাবুঘাটের এই জায়গায় কি পরিমান জলযান একসঙ্গে নদীর মাঝখানে বছরের-পর-বছর জমিয়ে রাখা হয়। পরিবেশ কর্মীরা বারবার এভাবে নদীতে আবর্জনা জমিয়ে রাখার বিরোধিতা করলেও, এতদিন কাজ হয়নি।


এবার সেসব উধাও হয়ে গিয়েছে গঙ্গার মধ্যে থেকে। উল্টে নদীর একেবারে পাড় ঘেঁষে রীতিমতো মোটা কাছি দিয়ে লঞ্চ, ভুটভুটি গুলিকে বেঁধে দেওয়া হয়েছে, যাতে যত ঝড় আসুক না কেন, কোনমতে সেগুলি দিকভ্রান্ত হয়ে এদিক ওদিক চলে না যায়। আর এই অবস্থা দেখে পরিবেশ কর্মীরা বলছেন, আগামী দিনেও প্রাকৃতিক দুর্যোগ চলে গেলেও, এভাবেই যেন নদীকে পরিষ্কার রাখার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
এদিকে এদিন গঙ্গার ধারের লকগেট গুলি বন্ধ থাকায় দুপুরের দিকে শহরে বৃষ্টি হলেও জল গঙ্গার দিকে যেতে পারেনি। বুধবার বেলা সাড়ে ১১ টা থেকে চারটে পর্যন্ত লকগেটগুলি বন্ধ থাকবে। আবার ওই সময়ের মধ্যেই যশ ধাক্কা মারবে সমুদ্র উপকূলে। ফলে প্রবল বৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে কলকাতাজুড়ে। সেই সময় লকগেট গুলি বন্ধ থাকলে শহরের জল কিভাবে গঙ্গায় নামবে, তা নিয়ে চিন্তা রয়েছে।
যদিও এদিন দুপুরে পুরসভার প্রশাসকরা গঙ্গার পাড়ে বিভিন্ন পয়েন্টে গিয়ে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখেন। বুধবার ভরা কোটাল এর জন্য গঙ্গায় জলোচ্ছ্বাস প্রায় সাড়ে পাঁচ মিটার উঁচু হবে। তাই এখন থেকেই সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version