কলকাতা ব্যুরো: গত মাস ছয়েক ধরে যে সমস্যার সমাধান করা যায়নি, জাতীয় নির্বাচন কমিশন মাত্র ৩৬ ঘণ্টার নোটিশে তার সমাধান করে দিলো। রাজ্যের যত পুর নিগম এবং পুরসভায় রাজনৈতিক দলের নেতারা প্রশাসক হয় বসে রয়েছেন, তাদের সকলকে সরিয়ে সেখানে সরকারি আধিকারিকদের প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ করতে হবে। এই মর্মে শনিবার সন্ধ্যায় নির্দেশ জারি করেছে জাতীয় নির্বাচন কমিশন। এই নির্দেশ কার্যকর করে ২২ মার্চ সকাল দশটার মধ্যে তার রিপোর্ট জাতীয় নির্বাচন কমিশনের কাছে পাঠাতে হবে রাজ্যের মুখ্য সচিবকে। ফলে কলকাতাসহ রাজ্যের প্রায় ১১৬ টি পুরসভা এবং পুর নিগমের মেয়াদ শেষের পরেও রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের প্রশাসক হিসেবে বসিয়ে রাখার প্রবণতা এক ঝটকায় কাটতে চলেছে এ রাজ্যে। সে ক্ষেত্রে শিলিগুড়িতে সিপিএমের অশোক ভট্টাচার্য যেমন বাদ পড়বেন, তেমন রাজ্যের প্রায় অন্য সব পুরসভা এবং পুর নিগমের প্রশাসক হিসেবে তৃণমূল নেতাদের দাপিয়ে বেড়ানো বন্ধ হতে যাচ্ছে।


গত বছর মে মাসে কলকাতা শুরু পুরসভার মেয়াদ শেষের মুহূর্তেই ববি হাকিমকে প্রশাসক বোর্ডের চেয়ারম্যান করে বসিয়ে দেয় রাজ্য সরকার। যা নিয়ে বিজেপি প্রথম মামলা করে হাইকোর্টে। পরে হাওড়া পুরসভা সহ রাজ্যের সব পুরসভায় মেয়াদ শেষের পরেও যেখানে জনপ্রতিনিধিদের প্রশাসক হিসেবে বসানো হয়েছে তাদের সরানোর দাবিতে মামলা হয়। কলকাতা পুরসভার মামলাটি একাধিকবার সুপ্রিম কোর্টে যায়। বর্তমানে সুপ্রিম কোর্টে মামলাটি বিচারাধীন।


মাস তিনেক আগে সুপ্রিমকোর্ট ইঙ্গিত দেয়, যদি রাজ্য নির্বাচন কমিশন দ্রুত মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়া পুরসভা গুলিতে নির্বাচন না করে, সে ক্ষেত্রে দেশের শীর্ষ আদালতে সেখানে সরকারি আধিকারিকদের প্রশাসক হিসেবে বসিয়ে দেবে। কিন্তু বাস্তবে সেই মামলা এখনো চলছে। এরই মধ্যে এদিন নির্বাচন কমিশন রাজ্যের মুখ্য সচিবকে নির্দেশ দিয়েছে, সোমবার বেলা দশটার মধ্যে এই নির্দেশ কার্যকর করে তা জানাতে হবে কমিশনকে। ফলে এতদিন আদালতেও যে সমস্যার সমাধান হয়ে ওঠেনি, কমিশনের নির্দেশে এক লহমায় সেই জটিলতা কাটবে বলে আশায় বিরোধী দলগুলোর নেতারা।


আর নির্বাচন ঘোষণা হয়ে যাওয়ার পরে কমিশন এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ায়, তা রাজনৈতিক প্রচারে রাজ্যের শাসক ও বিরোধীদের দরজার নয়া ইস্যু হয়ে উঠল বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। এই ইস্যু নিয়ে রাজ্যের শাসক দল বা সরকার আদালতে গেলেও খুব একটা সুবিধা হবে না বলেই মনে করছেন আইনি বিশেষজ্ঞরা। কারণ তাদের বক্তব্য, সুপ্রিম কোর্ট কলকাতা পর নিগমের মামলায় যে পর্যবেক্ষণ দিয়েছে, তা এ ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তকেই আরো বেশি শক্তিশালী করবে।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version