কলকাতা ব্যুরো: ছাত্রনেতা অনিস খানের মৃত্যুতে ক্রমশই উত্তপ্ত হচ্ছে রাজ্য। পুলিশের বিরুদ্ধে সরাসরি অভিযোগে ঘটনার তদন্তে সিবিআই চেয়ে মামলার পথে তার পরিবার। এদিকে গভীর রাতে বাড়িতে ঢুকে পুলিশের পোশাক পড়ে কি করে তাকে খুঁজতে গিয়ে এমন মৃত্যু, এই নিয়ে উত্তপ্ত হয়ে উঠছে রাজ্য রাজনীতি। পথে নেমেছেন তথাকথিত বুদ্ধিজীবীরা। রবিবার দুপুরে ভবানী ভবনে পুলিশের শীর্ষ কর্তারা তলব করেছেন হাওড়া গ্রামীণের পুলিশ সুপার সৌম্য রায়কে। গোটা ঘটনায় আমতা থানার ভূমিকা নিয়ে রহস্য আরো জোরালো হচ্ছে। এদিন সকালে পুলিশ আনিসের বাড়িতে গেলে তাদের ঘিরে ব্যাপক বিক্ষোভ দেখান স্থানীয় বাসিন্দারা।
রাজ্য সরকার এবং কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে নানান অভিযোগে রাজনৈতিক আন্দোলনে গত কয়েক বছর ধরে সামনের সারিতে ছিলেন ছাত্রনেতা অনিস খান। তার মৃত্যুতে এদিন পরিবারের পাশে থাকতে যান বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা। বুদ্ধিজীবীরা তাদের বাড়িতে যান। রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় এই ঘটনায় বিক্ষোভ দেখাচ্ছে এসএফআই।শুক্রবার গভীর রাতে তার বাড়িতে পুলিশের উর্দি পড়ে হানা দেয় কয়েকজন। অভিযোগ, আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে তার বাবাকে গুলি করার হুমকি দিয়ে দরজা খোলান হয়। রাত একটা নাগাদ একজন পুলিশের উর্দি পরা বাড়ির নিচতলায় বাবাকে দাঁড় করিয়ে রাখেন কানে রিভলভার ঠেকিয়ে। সিভিক ভলেন্টিয়ার পোশাক পরা তিনজন উঠে যান বাড়ির উপর তলায়। কিছুক্ষণ পরেই নিচ থেকে ভারী কিছু পতনের শব্দ পায় পরিবার। এর পরেই উপর থেকে তিনজন নেমে এসে ‘কাজ হয়ে গেছে’ বলে, ওই পুলিশ অফিসারকে সঙ্গে নিয়ে বেরিয়ে যায়।
পরে পরিবারের লোকজন বাড়ির পিছনে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন আনিসকে। অ্যাম্বুলেন্সে করে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে মৃত্যু হয় ওই ছাত্র নেতার। পুলিশ ওপর থেকে ধাক্কা মেরে ফেলে খুন করেছে বলে অভিযোগ। অভিযোগ আরো গুরুতর হয়ে ওঠে পুলিশের ভূমিকায়। পরিবারের দাবি, ওই রাতেই আমতা থানায় খবর দেওয়া হলেও, আসছি, আসব করে, শনিবার সকাল ন’টা নাগাদ পুলিশ আসে ওই বাড়িতে। তারপর দেহ তোলা হয়। ফলে গোটা ঘটনার পিছনে পুলিশ এবং কোন একটা মহলের জড়িত থাকার সন্দেহে রয়েছে পরিবারের।
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে শনিবার সন্ধ্যায় পার্ক সার্কাস এলাকায় বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন বিক্ষোভ দেখায়। যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি হয় ছাত্রদের। আর রবিবার সকাল থেকেই হাওড়া, বাঁকুড়া, মেদিনীপুর সহ বিভিন্ন জায়গায় এস এফআই বিক্ষোভ দেখায়। রাস্তায় নেমে আন্দোলন নয় সমাজের বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষ সোশ্যাল মিডিয়ায় এই ঘটনায় ধিক্কার জানান।
প্রশ্ন যেখানে, ঘটনার দিন গভীর রাতে এলাকায় জলসা শুনে বাড়ি ফিরেছিলেন আনিস। তার পরপরই পুলিশ দাবি করে কয়েকজন বাড়িতে হানা দেয়। তারা কি করে জানলো যে তখনই বাড়ি ফিরেছে ওই ছাত্রনেতা। পাশাপাশি ওই রাতেই থানাকে জানানো হলেও, কেন পরদিন সকাল ন’টায় পুলিশ মৃত্যুর খবর পেয়ে বাড়িতে গেল? এই দেরির কারণ কি? যদিও তৃণমূল নেতা ববি হাকিমের বক্তব্য, আন্দোলন করে লাভ নেই। গোটা ঘটনায় পুলিশ তদন্ত করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রকৃত অপরাধীদের খুঁজে বের করা হবে। এই প্রসঙ্গে তিনি উত্তর প্রদেশের নাম টেনে আনেন। তার দাবি, এমন ভাবে খুন নাকি উত্তরপ্রদেশে হয়। তাই ভিন রাজ্য থেকে কেউবা কারা এসে এমন নারকীয় ঘটনা ঘটালো কিনা সেই প্রশ্ন উস্কে দেন তিনি। যদিও বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার এর বক্তব্য, আসলে তৃণমূলের নেতা ফিরহাদ দৃষ্টি ঘোরানোর চেষ্টা করছেন। পরিবারের বক্তব্য, যারা এসেছিল তারা সকলেই স্পষ্ট বাংলায় কথা বলেছে। ফলে আনিসের এই রহস্যমৃত্যুতে পরিস্থিতি আরো ঘোরানো হচ্ছে রাজ্য রাজনীতিতে।