এক নজরে

৩৩৫ বছরের যুদ্ধে আহত নিহত শূন্য

By admin

June 02, 2024

১৯৮৫ সালে লন্ডনের নেদারল্যান্ডস দূতাবাসে একটি চিঠি এসে পউছায়, অদ্ভুত সেই চিঠিটি লেখেন ইংল্যান্ডের স্বায়ত্ত্বশাসিত প্রদেশ সিসিলি দ্বীপপুঞ্জের কাউন্সিলের চেয়ারম্যান ও স্থানীয় ইতিহাসবিদ রয় ডানকান। তিনি জানান, তাদের এলাকায় একটি লোকগল্প প্রচলিত যে, অনেক অনেক বছর আগে ডাচরা সিসিলিবাসীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে এবং কাগজে-কলমে যুদ্ধটা এখনও চলছে। ডানকান জানান তিনি অনেক কাগজপত্র ঘাঁটাঘাঁটি করে লোকগল্পটির সত্যতার ব্যাপারে কিছু প্রমাণ পেয়েছেন। তিনি ঘটনাটির পুরো রহস্য উন্মোচনের জন্য নেদারল্যান্ডস দূতাবাসকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করেন। ডাচ দূতাবাস খোঁজখবর নিয়ে জানতে পারে ঘটনাটি সত্য এবং ঘটনাটি ঘটে ইংল্যান্ডের গৃহযুদ্ধের (১৬৪২-১৬৫১) সময়। রাণী প্রথম এলিজাবেথ যখন ক্ষমতায় ছিলেন তখন ডাচরা ইংল্যান্ডের কাছ থেকে অনেক সাহায্য-সহযোগিতা পেয়েছিল। কৃতজ্ঞতাস্বরূপ, নেদারল্যান্ডস ছিল ইংল্যান্ডের বন্ধু রাষ্ট্র। ইংল্যান্ডে গৃহযুদ্ধ শুরু হলে ডাচরা নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করে। রয়ালিস্টিক বাহিনী বা পার্লামেন্টারিয়ান বাহিনী কোনো পক্ষকেই সেই সময়  সমর্থন করেনি।

যে দল জিতবে তাদের পক্ষেই তারা যাবে- এমনটাই ছিল ডাচদের মনোভাব। যুদ্ধে একসময় পার্লামেন্টারিয়ানরা আধিপত্য বিস্তার করতে থাকে। রাজা চার্লসের অনুগত রয়ালিস্টিক বাহিনী পিছু হটতে থাকে, হাতছাড়া হতে থাকে একের পর এক শহর। পার্লামেন্টারিয়ানদের জয় নিশ্চিত দেখে ডাচরা পার্লামেন্টারিয়ানদের সমর্থন করে। রাজা ও রাজপরিবারের অনুগত রয়ালিস্টিক বাহিনী এই সিদ্ধান্তকে বিশ্বাসঘাতকতা হিসেবে বিবেচনা করে। পার্লামেন্টারিয়ান বাহিনীর দাপটে রয়ালিস্টিক বাহিনী বলতে গেলে ইংল্যান্ড ত্যাগ করতে বাধ্য হয়। রয়ালিস্টদের সর্বশেষ শক্ত ঘাঁটি ছিল ইংল্যান্ডের সমুদ্র তীরবর্তী এলাকা কর্নওয়াল থেকে ৪৫ কি.মি. পশ্চিমে অবস্থিত ছোট্ট দ্বীপপুঞ্জ সিসিলি। গৃহযুদ্ধের শেষ বছর (১৬৫১) সিসিলিতে থাকা রয়ালিস্টদের যুদ্ধজাহাজের আক্রমণে ডাচ নেভির একটি জাহাজ মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্থ হয়। এই ঘটনার পর ডাচ অ্যাডমিরাল মার্টেন হারপারর্টজোন ট্রুম্প সিসিলিতে আসেন এবং রয়ালিস্টদের কাছে ক্ষতিপূরন দাবি করেন।

স্বাভাবিকভাবেই রয়ালিস্টরা সেই দাবী প্রত্যাক্ষান করে। ক্ষুব্ধ ডাচ অ্যাডমিরাল সিসিলির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। যদিও সিসিলি ছিল ইংল্যান্ডের অধীন, কিন্তু অ্যাডমিরাল ট্রুম্প ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা না করে শুধু সিসিলির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। কারণ, সিসিলি বাদে ইংল্যান্ডের অন্যান্য অংশ তখন পার্লামেন্টারিয়ানদের নিয়ন্ত্রণে ছিল, যাদেরকে ডাচরা সমর্থন দিয়েছিল। যুদ্ধ ঘোষণা করে অ্যাডমিরাল ট্রুম্প একটিও গুলি-গোলা না ছুড়ে জাহাজ নিয়ে দেশে ফিরে যান। সে বছরই, রয়ালিস্টদের হটিয়ে পার্লামেন্টারিয়ানরা সিসিলিতে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে। ফলে, রয়ালিস্টদের সাথে আর ডাচদের যুদ্ধ করার সুযোগ থাকে না। একসময় ডাচরা তাদের এই যুদ্ধের কথা ভুলেই যায়। কিন্তু লোকগল্প হিসেবে এই যুদ্ধের কথা সিসিলিবাসীর প্রজন্ম থেকে প্রজন্মের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। মূল ঘটনার সঙ্গে জুড়ে যায় নানা কাহিনি- কেটে যায় প্রায় তিনশ বছর।

নেদারল্যান্ডসের লন্ডন দূতাবাস আনুষ্ঠানিকভাবে এই যুদ্ধের কথা স্বীকার করে নিলে রয় ডানকান লন্ডনে অবস্থিত ডাচ কূটনীতিককে সিসিলিতে আমন্ত্রণ জানান শান্তিচুক্তি স্বাক্ষর করার জন্য। সেই আমন্ত্রণ অনুযায়ী ডাচ রাষ্ট্রদূত রেইন হাইডিকপার লন্ডন থেকে সিসিলি আসেন এবং শান্তিচুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। একটি রক্তপাতহীন যুদ্ধের অবসান হয়, নতুন একটি ইতিহাস রচিত হয়। বলা হয় এই যুদ্ধই পৃথিবীর সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধ। একটানা ৩৩৫ বছর যুদ্ধ চলেছিল। গুলি গোলা ছোড়া যেমন হয়নি, তেমনি আহত বা নিহত হননি একজনও। চুক্তি স্বাক্ষর নিয়ে অনেকই বলেন, এই চুক্তিস্বাক্ষরের কোনো প্রয়োজন ছিল না। একটি দেশ কখনও আরেকটি দেশের একটি অংশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করতে পারে না। তাছাড়া অ্যাডমিরাল ট্রুম্প সিসিলির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার জন্য নেদারল্যান্ডসের উচ্চপর্যায় থেকে অনুমতি নেননি।