Many different vegetables sold at street market on Goa in India. Red onions, tomatoes and potatoes laid out in large trays for sale. Unrecognizable man reache out to take some veggies.

এক নজরে

পেঁয়াজের ঝাঁঝে চোখে জল

By admin

November 18, 2024

শীতের শুরু থেকেই পেঁয়াজের দামের ঝাঁঝে চোখের জলে নাকের জলে হচ্ছে দেশবাসী। দেশের বেশ কয়েকটি শহরে ইতিমধ্যেই সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছে অত্যাবশ্যকীয় এই ফসল। ভারতীয় খাদ্যতালিকার ওপেনিং থেকে টেল এন্ডার পর্যন্ত পেঁয়াজ নেই খাবারের টেবিলে এটা ভাবা যায়না। সেই পেঁয়াজ এখন বহুমূল্য হওয়ার কারণে অনেকের কাছেই বিলাসী খাবারের তালিকায় চলে গিয়েছে। পেঁয়াজ কিনতে রীতিমত চোখে জলে নাকের জলে একাকার হচ্ছেন বাঙালি। বাজারে গিয়ে পেয়াজের দাম জিজ্ঞেস করলে কেউ বলছে ৭০ টাকা কেজি, কেউ বলছে ৮০ টাকা, আবার কোনও কোনও বাজারে ১০০ টাকা কেজি দরেও বিক্রি হচ্ছে পেঁয়াজ। এত দাম হলে সাধারণ মানুষের পক্ষে কেনা প্রায় অসম্ভব হয়ে ওঠে। দেশে বেড়েছে খাদ্য মূল্যস্ফীতি, সামগ্রিক মূল্যস্ফীতিও বেড়েছে। পেঁয়াজ, আলু, টমেটোর দাম অনেকটাই বেড়েছে। পেঁয়াজের দাম পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে উঠেছে। পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির জেরেই মূল্যস্ফীতির সূচক ঊর্ধ্বমুখী বলে জানিয়েছেন দেশের কেন্দ্রীয় অর্থ সচিব। ভারতের সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে মাত্র চার দিনের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম ২১ শতাংশ বেড়েছে। ফলে গত পাঁচ বছরের মধ্যে পেঁয়াজের দাম সর্বোচ্চ। খুচরা বাজারে গড়ে ৭০-৮০ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে। ব্যবসায়ীদের দাবি, অক্টোবর মাস থেকেই ধীরে ধীরে দাম বাড়ছে; নভেম্বরে যা অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে।

কেন পেঁয়াজের দাম হঠাৎ করে বেড়ে গেল? দেশের ৪৩ শতাং পেঁয়াজ উৎপাদন হয় আরব সাগরের তীরের মহারাষ্ট্রে। দেশের সবচেয়ে বড় পেঁয়াজের বাজার মহারাস্ট্রের লাসলগাঁও পাইকারি বাজারে প্রতিদিন ২০০ থেকে ২৫০ টন পেঁয়াজের আগমন ঘটে। গত বছর যার পরিমাণ ছিল প্রায় এক হাজার টন। বছরে তিনটি চক্রে পেঁয়াজ হয়। মহারাষ্ট্রের কৃষকরা জুন এবং জুলাই মাসে তাদের খরিফ পেঁয়াজের ফসল বপন করে, অক্টোবর থেকে তা সংগ্রহ করে। অক্টোবরের মাঝামাঝি বৃষ্টিপাত এবং এই বছরের অক্টোবরের শেষে দীপাবলি পড়ার কারণে এই প্রক্রিয়াটি বিলম্বিত হয়েছিল। অক্টোবরের বৃষ্টির কারণে খরিফ ফসলের ফলন ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হয়েছিল। সারা ভারতে খরিফ বপনের পরিমাণ গত বছরের ২.৮৫ লাখ হেক্টরের তুলনায় ৩.৮২ লাখ হেক্টরের বেশি। তাছাড়া পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধির প্রধান কারণ সরবরাহ ব্যবস্থায় ঘাটতি। যা বছরের এই সময় অস্বাভাবিক কিছু নয়। পেঁয়াজ-রসুনের ব্যবসাদারদের মতে, পুরনো ফসলের বাজার মন্দার দিকে। অর্থাৎ হিমঘরের পেঁয়াজ-রসুন কমতির দিকে চলে গিয়েছে। এখন নতুন ফসল ওঠা অবধি অপেক্ষা ছাড়া উপায় নেই। দ্বিতীয় কারণ বিপুল পরিমাণে রফতানি করার ফলে দেশীয় বাজারে ঘাটতি দেখা দিয়েছে। তৃতীয়ত, রাজস্থান, মহারাষ্ট্র এবং কর্নাটকে উৎপাদনে ঘাটতি। নাসিকের পিম্পলগাঁওয়ে সেরা কোয়ালিটির পেঁয়াজের দাম হয়ে গিয়েছে ৮০ টাকা পর্যন্ত। অন্যদিকে, বাংলাদেশ আমদানি শুল্ক তুলে নেওয়ায় রফতানি বিরাট পরিমাণে বেড়ে গিয়েছে।

প্রসঙ্গত, গত ৫ নভেম্বর ন্যাশনাল কোঅপারেটিভ কনজিউমার্স ফেডারেশনের সভাপতি জানিয়েছিলেন, পেঁয়াজের দাম ৮ নভেম্বর থেকে নামতে শুরু করবে। কিন্তু, তারপরেও ১০ দিন কেটে গিয়েছে। পরিস্থিতির কোনও উন্নতি হয়নি। গত সপ্তাহে কেন্দ্র সিদ্ধান্ত নিয়েছিল মজুত পেঁয়াজ বাজারে ছেড়ে দিয়ে দাম নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করা হবে। এই অবস্থায় অতিবৃষ্টির জন্য উৎপাদনে মার খাওয়া নতুন পেঁয়াজ বাজারে আসতে শুরু করবে নভেম্বরের শেষাশেষি। সেই হিসাবে ডিসেম্বরের মাঝামাঝির আগে তেমন কোনও সুরাহা মিলবে না বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। শোনা যাচ্ছে এবার কড়া নজরদারি শুরু করেছে রাজ্যের টাস্ক ফোর্স। স্থানীয় থানার পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে শহরের একাধিক বাজারে হানা দেয় টাস্ক ফোর্স। এত বেশি দামে যাতে পেঁয়াজ বিক্রি না করা হয়, সে ব্যাপারে সতর্ক করা হয়েছে। তারা টাস্ক ফোর্সের প্রতিনিধিরা নাকি দোকানে দোকানে ঘুরে পেঁয়াজ, আলু, আদা রসুন কোথায় কত দামে বিক্রি হচ্ছে তার খোঁজ নেন ।  টাস্কফোর্সের সদস্যদের তরফে জানানো হয়,  এবছর কেন্দ্রীয় সরকার কো অপারেটিভ-এর মাধ্যমে কৃষকদের কাছ থেকে পেঁয়াজ কিনে নিয়েছে। টাস্ক ফোর্সের অভিযোগ, সেই পেঁয়াজ সরকার দিল্লির পাইকারি বাজারে ৩০ টাকা দরে বিক্রি করছে আর পশ্চিমবঙ্গে ৫০ টাকা দরে। আপাতত মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে নজরদারি চলছে।

সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে মাত্র চার দিনের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম ২১ শতাংশ বেড়েছে। ফলে গত পাঁচ বছরের মধ্যে পেঁয়াজের দাম সর্বোচ্চ। খুচরা বাজারে গড়ে ৬০ রুপি কেজি দরে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে। ব্যবসায়ীদের দাবি, অক্টোবর মাস থেকেই ধীরে ধীরে দাম বাড়ছে; নভেম্বরে যা অনেকটাই বেড়ে যায়। মহারাষ্ট্রের লাসালগাঁওতে ৪ নভেম্বর থেকে পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে কেজিতে ৪৭. ৭০ টাকায়; ৭ নভেম্বর যা বেড়ে ৫৭. ৭০ টাকায় উঠে যায়। দাম এখনো সেই পর্যায়ে আছে। একই ছবি দেখা যাচ্ছে আলু ও টমেটোর ক্ষেত্রেও। অক্টোবরে দেশে খুচরা মূল্যস্ফীতি ছিল ৬. ২১ শতাংশ; এর মধ্যে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল ১০. ৮৭ শতাংশ। গত এক বছরে গড় খুচরা মূল্যস্ফীতি ৫ শতাংশ; খাদ্যপণ্যের ৮ শতাংশ। ভারতের হর্টিকালচার প্রোডিউসার এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন বলেছে, বাজারে নতুন করে শীতের সবজি না আসা পর্যন্ত এই পরিস্থিতির উত্তরণের সম্ভাবনা কম। তবে ডিসেম্বর মাসের শুরুর দিকে দাম অনেকটা কমবে বলে আশা প্রকাশ করেছে অন্যদিকে রাজ্য টাস্ক ফোর্স জানাচ্ছে, এই রাজ্যে প্রতি মাসে দেড় লক্ষ টন পেঁয়াজ লাগে। তার অর্ধেকেরও কম পেঁয়াজ আমদানি হচ্ছে। দাম বেড়ে যাওয়ায় ব্যবসায়ীরাও আমদানি করতে ভয় পাচ্ছেন।

টাস্ক ফোর্স কেন দাম নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না, প্রশ্ন তুলছেন ক্রেতাদের অনেকে। টাস্ক ফোর্স সূত্রের দাবি, তারা বাজারে নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছে। তাদের কথায়,  অভিযান চালানোর সময়ে ঠিক দাম নেওয়া হচ্ছে। ফিরে এলেই আবার দাম বাড়ছে! যদিও টাস্ক ফোর্সের অভিযানের খবর আগাম কী ভাবে বাজারে পৌঁছে যাচ্ছে, সে প্রশ্নের সদুত্তর মেলেনি।