তারাবাঈ ১৮৫০সালে বর্তমান মহারাষ্ট্র রাজ্যের বেরার প্রদেশের বুলদানায়, এক মারাঠা পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তাঁর বাবার নাম ছিল বাপুজি হরি শিন্দে। তাঁর পিতা রাজস্ব দপ্তরের সিনিয়ার ক্লার্ক ছিলেন । তারাবাঈের শিক্ষা বাড়িতেই হয় তার বাবার ইচ্ছায়। তিনি মারাঠি এবং সংস্কৃত লিখতে পারতেন ; কিছুটা ইংরেজিও জানতেন । শিক্ষার আলোয় আলোকিত হওয়ার কারনে তিনি প্রশ্ন করতে শিখেছিলেন সমাজের প্রচলিত প্রথার বিরুদ্ধে । ১৮৮২ সালে প্রকাশিত হয় তারাবাঈের “স্ত্রী-পুরুষ তুলনা”নামে একটি পুস্তিকা । যেখানে তিনি প্রশ্ন তুলেছিলেন এবং তুলনা করেছিলেন সমাজে নারীদের আবস্থান নিয়ে ।এই পুস্তিকাটিতে উচ্চ-বর্ণের পিতৃতন্ত্রের একটি সমালোচনা করেছিলেন। প্রায়শই এটিকে প্রথম আধুনিক ভারতীয় নারীবাদী পাঠ্য হিসাবে বিবেচনা করা হয়।সেই সময়ে নারী নিপীড়নের উৎস হিসেবে হিন্দু ধর্মীয় শাস্ত্রকে সমালোচনা করেছিলেন শিন্দে ,হিন্দু এপিক এর ফেমিনিস্ট ইন্টারপ্রিটেশন পাওয়া যায় তার বই এ।
মহারাষ্ট্রের সেই সময়ের একজন সমাজসেবক জ্যোতিরাও ফুলে তারাবাঈকে নিজের মেয়ে মতো ভালোবাসতেন এবং তাঁর লেখা পুস্তিকার সবচেয়ে বড় পাঠক ফুলেই ছিলেন। তারাবঈ হয়ে উঠেছিলেন জ্যোতিরাও এর মেয়ে “চিরনজ্ঞিবীনি”।
ভারতের প্রথম সাবলটার্ন ফেমিনিস্ট তারাবাঈ বিধবাদের পূর্ণবিবাহ ,নারী শিক্ষা, সতীপ্রথা, মেয়েদের জন্যে স্কুল ইত্যাদির জন্যে জ্যোতিরাও ফুলের সত্যসেধক সমাজের সাথে কাজ করেছিলেন । তারাবাঈ বলতেন ভারতীয় সমাজ মেয়েদের কে দেখে পবিত্র এবং অপবিত্র এই দুটি ধরনায় ,মেয়েরা হয় খুব ভালো না হলে তারা বেশ্যা । আর সমাজে বেশ্যারা মানুষ নয় । ভারতীয় শাস্ত্রেই নারীদের ওপর অত্যাচার-আপমানের পথ খুব সুক্ষ্ম ভাবে দেখানো আছে, না হলে সীতাকে অগ্নিপরীক্ষা দিতে হত না ।পিতৃতান্ত্রিক সমাজে নারীরা কম-বেশি খারপ অবস্হায় সব সময়ই থাকে তাদের দুরবস্থার প্রধান কারন সমাজ,পরিবার , সেই সমাজের বিরুদ্ধে গিয়ে প্রশ্ন করতে শিখিয়েছেন তারাবাঈের মতো মানুষেরা । তারাবাঈ শিন্দে শুধু একটি ব্যাক্তিত্ব নয় তিনি বিদ্রোহের স্ফুলিঙ্গ ।