কলকাতা ব্যুরো: পুরুলিয়ার ঝালদার কংগ্রেস কাউন্সিলর তপন কান্দু খুনের প্রত্যক্ষদর্শীর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার। বুধবার সকালে নিজের ঘর থেকে শেফাল বৈষ্ণব ওরফে নিরঞ্জন নামে ওই প্রত্যক্ষদর্শীর দেহ উদ্ধার হয়। তাঁর ঘর থেকে উদ্ধার হয়েছে একটি সুইসাইড নোটও। তবে বুধবার সকালে নিরঞ্জন বৈষ্ণবের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হওয়ার পর থেকেই দানা বাঁধছে রহস্য। যে ব্যক্তি তপন কান্দুকে চোখের সামনে খুন হতে দেখেছিলেন, যে ব্যক্তিকে গত কয়েকদিন ধরে থানায় ডেকে বসিয়ে রাখা হচ্ছে, সেই ব্যক্তির ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার নিছক আত্মহত্যার ঘটনা না কি অন্য কিছু? সেই প্রশ্নই তুলছেন বিরোধীরা। পরিবারের অভিযোগ, এ দিন নিরঞ্জনের দেহ উদ্ধার হওয়ার পর থেকেই পাওয়া যাচ্ছে না তাঁর মোবাইল ফোনটি। এই ঘটনাতেও পুলিশের দিকেই আঙুল তুলছে পরিবার। এদিকে, নিরঞ্জনের দেহের পাশে যে সুইসাইড নোট পাওয়া গিয়েছে, তা পুলিশের হাতে তুলে দিতে চাইছে না পরিবার। তাঁদের আশঙ্কা, সুইসাইড নোট পুলিশ লোপাট করে দিতে পারে।
উল্লেখ্য, গত ১৩ মার্চ বিকেলে ঝালদা-বাঘমুন্ডি সড়কপথে গোকুলনগর গ্রামের কাছে হাঁটতে বেরিয়েছিলেন কংগ্রেস কাউন্সিলর তপন কান্দু। সেই সময় আততায়ীদের গুলিতে খুন হন তিনি। কংগ্রেস কাউন্সিলরের সঙ্গে ছিলেন যাদব রজক, শেফাল ওরফে নিরঞ্জন বৈষ্ণব, সুভাষ কর্মকার, প্রদীপ চৌরাশিয়া ও সুভাষ গড়াই নামে পাঁচ সঙ্গী। তাঁরা খুনের প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন। বুধবার সকালে নিজের ঘর থেকে শেফাল ওরফে নিরঞ্জন বৈষ্ণবের দেহ উদ্ধার হয়। ঝালদার ১১ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা ছিলেন তিনি। শেফাল ওরফে নিরঞ্জন বৈষ্ণবের ঘর থেকে সুইসাইড নোটও উদ্ধার হয়েছে।
উদ্ধার হওয়া ওই সুইসাইড নোটে নিরঞ্জন ওরফে শেফাল লেখেন, যেদিন তপনের হত্যা হয় সেদিন থেকে আমি মানসিক অবসাদে ভুগছি। যে দৃশ্যটি দেখেছি মাথা থেকে কোনওরকম বার হচ্ছে না। ফলে রাতে ঘুম হচ্ছে না। খেতে মন যাচ্ছে না। শুধু ওই ঘটনাটাই মনের মধ্যে ঘোরাফেরা করছে। তারপর পুলিশের বারবার ডাক। আমি জীবনে থানার চৌকাঠ পার করিনি। এই সব আমি আর সহ্য করতে না পারার জন্য আমি এই পথ বেছে নিলাম। এতে কারও কোনওরূপ প্ররোচনা, চাপ বা হাত নেই। আমি স্বেচ্ছায় আত্মত্যাগ করলাম।

যদিও জেলা পুলিশ সুপার এস. সেলভামুরুগন জানান, তাঁকে তদন্তের জন্য থানায় ডাকা হচ্ছিল। এই ঘটনায় ইতিমধ্যেই শুরু রাজনৈতিক তরজা। বিরোধীদের দাবি, পুলিশই আত্মহত্যায় প্ররোচনা দিয়েছে। যদিও তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ সেই অভিযোগ খারিজ করেছেন। তাঁর মতে, পরিচিত কেউ খুন হলে তদন্তের স্বার্থে পুলিশ থানায় ডেকে পাঠাবে সেটাই স্বাভাবিক। সে কারণেই বারবার শেফালকেও থানায় ডাকা হয়েছে।
পুরুলিয়ায় কংগ্রেসের জেলা সভাপতি নেপাল মাহাতো এ দিন ঘটনার খবর পেয়েই ছুটে যান ঘটনাস্থলে। তিনি সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে অভিযোগ জানিয়েছেন, নিরঞ্জনের মোবাইল পাওয়া যাচ্ছে না। সেটি কেউ বা কারা সরিয়ে নিয়ে থাকতে পারে বলেই সন্দেহ কংগ্রেস নেতার। আর অন্যদিকে, নিরঞ্জন দাদা সহ পরিবারের অন্যান্যরাও একই অভিযোগ জানিয়েছেন। তাঁদের সন্দেহ প্রমাণ লোপাট করতেই কেউ সরিয়ে নিয়েছে মোবাইল। মৃত্যুর আগে কারা ফোন করেছিল নিরঞ্জনকে? সেই প্রমাণ কি সরিয়ে ফেলতে চাইছেন কেউ? প্রশ্ন উঠেছে সেখানেই।
এদিকে, পুরবোর্ড গঠনের দিন ঝালদা পুরভবনের পাশে কালা দিবস পালনে বাধা দেয় পুলিশ। নিহত কংগ্রেস কাউন্সিলর তপন কান্দুর স্ত্রী পূর্ণিমাকে পুলিশ হেনস্তা করে বলেও অভিযোগ। তার প্রতিবাদে বুধবার ঝালদা পুরশহরে সকাল ৬টা থেকে সন্ধে ৬টা পর্যন্ত মোট ১২ ঘণ্টা বন্ধের ডাক দেওয়া হয়েছে।
পাশাপাশি সিবিআইয়েরও এদিন ঝালদায় যাওয়ার কথা। ঝাড়খণ্ড সীমান্তের ঝালদার তুলিনের একটি হোটেলে সিবিআই ক্যাম্প অফিস তৈরি করবে। সেখানে থেকে তদন্ত করবে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার আধিকারিকরা।