কলকাতা ব্যুরো: ট্যাংরার মেহের আলি লেনে চামড়ার গুদামের অগ্নিকাণ্ড ভয়াবহ আকার নিল। যা প্রায় রাতের ঘুম কেড়ে নিতে পারে স্থানীয় বাসিন্দা থেকে দমকল, প্রশাসনিক কর্তাদের। ঘণ্টা তিনেক কেটে গেলেও পুরোপুরি আগুন নিয়্ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়নি। দমকলের ২০ টি ইঞ্জিনের সাহায্যে রীতিমতো জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় কাজ করছেন কর্মীরা। ভেঙে পড়েছে গুদামের পাঁচিলের একাংশ। বিপদ টের পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে গিয়েছেন দমকল মন্ত্রী সুজিত বসু। ইতিমধ্যে তাঁকে ফোন করে খোঁজ নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

সন্ধে প্রায় ৬টা। মেহের আলি লেনের একটি চামড়ার গুদামে দাউদাউ আগুন জ্বলে ওঠে। ঘিঞ্জি এলাকায় দাহ্য পদার্থের স্তূপের মধ্যে আগুনের লেলিহান শিখা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। খুব কম সময়ের মধ্যেই পাশের একটি বাড়িও চলে যায় আগুনের গ্রাসে। ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে প্রথমে দমকলের ৫ টি ইঞ্জিন ঘটনাস্থলে গেলেও পরে পরিস্থিতির ভয়াবহতা বুঝে তা বাড়তে বাড়তে ২০ তে দাঁড়ায়। চারটি ডিভিশনের দমকল বাহিনীকে কাজে লাগানো হয়েছে।
সরু গলি, চারপাশে ছোটবড় বাড়ি এবং জলের তেমন উৎস না থাকায় আগুন নেভানো বড়সড় চ্যালেঞ্জ হয়ে ওঠে দমকল কর্মীদের কাছে। এক দমকল কর্মীর কথায়, খুব সমস্যা হচ্ছে। ছোট জায়গা, এর মধ্যে ঠিকমতো কাজ করা যাচ্ছে না। তবে এর মধ্যেও চেষ্টা তো চালিয়ে যেতে হবে। সেটাই আমরা করছি।

এদিকে, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আতঙ্ক, ভয়াবহতা সবই বেড়েছে। প্রচণ্ড তাপে গুদামের কাচ ভেঙেছে, ভেঙেছে পাঁচিলের একাংশও। গোটা গুদামই আগুনের গ্রাসে চলে যায়। তাতে তিনজন দমকল কর্মীর জখম হওয়ার খবর মিলেছে। বড়সড় বিপদ এড়াতে গুদাম সংলগ্ন বাড়িগুলি থেকে মানুষজনকে সরানোর কাজ শুরু হয়। প্রথমেই সরিয়ে ফেলা হয় গ্যাস সিলিন্ডার। কোনওভাবে তাতে আগুন লেগে গেলে বিপদ আরও বাড়বে। স্থানীয়রাও আগুন নেভানোর কাজে হাত লাগিয়েছেন। গুদামের দুপাশের দুটি বাড়ি থেকে জল এনে ছাদ থেকে তা ছড়িয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা চলছে। তবে দাউদাউ আগুনের কাছে এই চেষ্টা তুচ্ছ হয়ে যাচ্ছে। পরবর্তীতে জলের জোগান বাড়াতে পাম্পও আনা হয়।

পরিস্থিতির ভয়াবহতা বুঝে ঘটনাস্থলে যান দমকল মন্ত্রী সুজিত বসু। তবে মন্ত্রী জানান, এখনও কোনও হতাহতের খবর নেই। যদিও বেসরকারি সূত্রে খবর, প্রবল ধোঁয়ায় অসুস্থ হয়ে পড়েছেন অন্তত চারজন দমকল কর্মী। অগ্নিকাণ্ডের খবর নিতে সুজিত বসুকে ফোন করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অগ্নিনির্বাপণের কাজ কীভাবে চলছে, পরিস্থিতি কতটা গুরুতর, বিপদের আশঙ্কাই বা কতটা – সেসব খোঁজখবর তিনি নিয়েছেন বলে জানান সুজিত বসু। ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে তিনি নিজে সর্বক্ষণ কাজের দিকে নজর রাখছেন।

সূত্রের খবর, ২০১২ সালে এই কারখানার অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থার যাবতীয় মেয়াদ শেষ হয়েছে। নতুন করে পরে অনুমোদনও নেওয়া হয়নি। এসবের তদন্ত হবে বলে জানিয়েছেন দমকল মন্ত্রী।