এক নজরে

সিপাহি বিদ্রোহের অনুপ্রেরণা বিবেকানন্দ! মোদী সরকারের পত্রিকার তথ্যে বিভ্রান্তি

By admin

January 12, 2022

কলকাতা ব্যুরো: স্বামী বিবেকানন্দের ১৬০তম জন্মদিবসে তাঁকে শ্রদ্ধার্ঘ নিবেদন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। বুধবার স্বামীজির সিমলা স্ট্রিটের বাড়িতে গিয়ে শ্রদ্ধা জানান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন সিমলা স্ট্রিটে স্বামীজীর বাসভবনে পালন করা হয় বিশেষ অনুষ্ঠান।

তবে করোনা পরিস্থিতিতে বাড়ির ভিতরে ভক্তদের প্রবেশ নিষেধ। তাঁদের জন্য বাইরেই শ্রদ্ধা জানানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। স্বামী বিবেকানন্দের জন্মদিন ও স্বাধীনতার ৭৫ বছর, এই উপলক্ষে রামকৃষ্ণ মিশন ও কেন্দ্রীয় সরকারের সংস্কৃতি মন্ত্রক একগুচ্ছ অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা করেছে।  এই অনুষ্ঠান ও বিভিন্ন কর্মসূচি চলবে আগামী ১৫ অগাস্ট পর্যন্ত।

পাশাপাশি স্বামীজিকে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও। বুধবার টুইটবার্তায় প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন যে, জাতি গঠনের জন্য স্বামীজির জীবন নিবেদিত। তিনি তরুণদের দেশ গঠনের কাজে অনুপ্রাণিত করেছেন। স্বামী বিবেকানন্দের জন্ম হয়েছিল ১৮৬৩ সালের ১২ জানুয়ারি। প্রতিবারই এই দিনটি স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। এবারও তার অন্যথা হয়নি। সকালে টুইটে বিবেকানন্দ-স্মরণ করেন মোদী।

টুইটে তিনি লিখেছেন যে, মহান স্বামী বিবেকানন্দকে তাঁর জয়ন্তীতে আমি শ্রদ্ধা জানাই। তাঁর জীবন ছিল জাতি গঠনের জন্য নিবেদিত। তিনি তরুণদের দেশ গঠনের কাজ করতে অনুপ্রাণিত করেছেন। আমাদের জাতির জন্য তিনি যে স্বপ্ন দেখেছিলেন তা পূরণ করতে আসুন আমরা একসঙ্গে কাজ করে যাই।

অন্যদিকে স্বামী বিবেকানন্দের জন্মদিনে টুইটে শ্রদ্ধার্ঘ জানিয়েছেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়। তিনি লিখেছেন, ‘আশা করব রাজ্যের যুবদের প্রতিভা ও কর্মদক্ষতাকে সম্পূর্ণ কাজে লাগাবে মমতা সরকার।

রাজ্যে পালিত হচ্ছে স্বামী বিবেকানন্দের জন্মদিবস। প্রতি বছর এই দিনটা বিশেষভাবে পালিত হয় রাজ্যে। এবছরও সেই একই ছবি দেখা গেল। করোনা বিধি মেনেই তবে এবছর সর্বত্র স্বামী বিবেকানন্দর জন্মদিবস পালন হচ্ছে। এদিন স্বামী বিবেকানন্দ-র জন্মদিবস উদযাপন ককে বিজেপিও। বিজেপির কার্যালয়ে স্বামী বিবেকানন্দের জন্মদিবস উদযাপন হয়। বিজেপির কার্যালয়ে রয়েছে বিশেষ অনুষ্ঠানও। অন্যদিকে এদিন সকালে স্বামী বিবেকানন্দের সিমলা স্ট্রিটের বাড়িতে যান রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। সেখানে বিবেকানন্দের মূর্তিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন তিনি। স্বামীজিকে বিশেষ শ্রদ্ধা জানান। এদিনই স্বামীজির বাসভবনে একটি আর্ট গ‍্যালারিরও শুভ উদ্বোধন হয়। ভারত সরকার ও রামকৃষ্ণ মিশনের যৌথ উদ‍্যোগে নির্মিত এই গ‍্যালারি শুভ উদ্বেধন হয়। তারই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যান রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এছাড়াও ছিলেন অগ্নিমিত্রা পালও।

বুধবার স্বামী বিবেকান্দরের বাসভবনে শ্রদ্ধার্ঘ অর্পণের পর শুভেন্দুবাবু বলেন, ‘আমি পদ পাওয়ার জন্য ললায়িত নই। রাজ্য সরকার বিরোধী দলনেতাকে ভয় পায়। এদিন সিমলা স্ট্রিটে স্বামীজির বাসভবনে তাঁকে শ্রদ্ধা জানান শুভেন্দু অধিকারী। এরপর তিনি বলেন, আমি কমিটির সদস্য হওয়ার জন্য আদালতে আবেদন করিনি। এটা ব্যক্তি শুভেন্দু অধিকারীর ব্যাপার নয়। প্রশ্নটা বিরোধী দলনেতা পদকে নিয়ে। বিচারপতির ইচ্ছা হয়েছিল তাই কমিটিতে রেখেছিলেন। আবার তাঁর মনে হয়েছে বলে বাদ দিয়েছেন। এটা রাজ্য সরকারের উদ্দেশ্যপ্রণোদিত পদক্ষেপ। তবে আদালতের নির্দেশকে সম্মান করা উচিত।

রাজ্য সরকারের সমালোচনা করে শুভেন্দু বলেন, রাজ্য সরকার বিরোধী দলনেতাকে ভয় পায়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের একমাত্র লক্ষ্য হল বিরোধী দলনেতাকে আটকাও।

তবে এদিন কেন্দ্রীয় সরকারি সংস্থা প্রেস ইনফরমেশন ব্যুরোর (‌পিআইবি)‌ ওয়েবসাইটে স্বামীজিকে নিয়ে ভুল তথ্য প্রকাশিত হয়েছে। যা নিয়ে নতুন করে বিতর্ক দানা বেঁধেছে। ইতিমধ্যে কেন্দ্রীয় সরকারি সংস্থার এই ভুল তথ্য পরিবেশন নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি তৃণমূল।

সারা দেশ ব্যপী অমৃত মহোৎসব পালন করছে কেন্দ্রীয় সরকার। নিউ ইন্ডিয়া সমাচার নামে একটি ই ম্যাগাজিন প্রকাশ করেছে কেন্দ্রীয় সরকারি সংস্থা পিআইবি। ম্যাগাজিনটির মূল উদ্দেশ্যই হল কীভাবে বদলেছে ভারত সেই বিষয়টিকে তুলে ধরা। উঠে এসেছে ভক্তি আন্দোলনের প্রসঙ্গও। এই প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় সংস্থা পিআইবি লিখেছে, দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ভক্তি আন্দোলনে সাধু সন্তরা অংশ নিয়েছিলেন। অংশ নিয়েছিলেন স্বামী বিবেকানন্দ ও শ্রীচৈতন্যদেব। আর আন্দোলন ১৮৫৭ সালের সিপাহি বিদ্রোহে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিল। বিতর্ক তৈরি হয়েছে এই লেখা থেকেই। ইতিহাস বলছে, স্বামী বিবেকানন্দের জন্ম হয়েছিল ১৮৬৩ সালে। প্রশ্ন উঠছে, ১৮৫৭ সালের সিপাহি বিদ্রোহে তিনি কীভাবে অনুপ্রেরণা জোগাবেন।

ইতিমধ্যে পিআইবির এই তথ্যের টুইটার হ্যান্ডেল পোস্ট করে টিপ্পনি কাটতে শুরু করেছে তৃণমূল। এই প্রসঙ্গে তৃণমূলের তরফে বলা হয়েছে, ‘‌স্বামীজির জন্ম হয়েছে ১৮৬৩ সালে। আর সিপাহি বিদ্রোহ হয়েছে ১৮৫৭ সালে। তিনি কীভাবে বিদ্রোহে অনুপ্রেরণা দিলেন, এটা বোঝার চেষ্টা করছি।’‌ এরপরই পিআইবিকে উদ্দেশ্য করেই তৃণমূলের খোঁচা, ‘‌এই ব্যাপারে আপনারা কোনও সাহায্য করতে পারবেন।’‌

তবে এখনও পর্যন্ত পিআইবির তরফে কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। বলা বাহুল্য আগামিদিনে এটা রাজনৈতিক ভাবে হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করবে রাজ্যের শাসক দল।