কলকাতা ব্যুরো: রামপুরহাটের ‘গণহত্যা’ নিয়ে রাজ্যের বিরুদ্ধে এবার কোমর বেঁধে ময়দানে নামলো বিজেপি। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদত্যাগ দাবি করলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। রাজ্যের আইনশৃঙ্খলার পরিস্থিতি পুরোপুরিভাবে ভেঙে পড়েছে বলে অভিযোগ নন্দীগ্রামের বিজেপি বিধায়কের। অবিলম্বে এরাজ্যে কেন্দ্রীয় সরকারের হস্তক্ষেপ দাবি করলেন শুভেন্দু অধিকারী। এরই পাশাপাশি কলকাতা হাইকোর্টকেও এই ঘটনায় যথোপযুক্ত পদক্ষেপের আর্জি বিরোধী দলনেতার। রামপুরাহাটের বিষয়টি নিয়ে আজই দিল্লিতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে কথা বলবেন রাজ্য বিজেপি সভাপতি তথা বালুরঘাটের সাংসদ সুকান্ত মজুমদার ও অর্জুন সিং।
রামপুরহাটের বগটুই গ্রামে পুড়িয়ে ‘খুন’। একটি বাড়ি থেকেই মোট ১০ জনের অগ্নিদগ্ধ দেহ উদ্ধার করেছে দমকল। সোমবার রাতে বগটুই গ্রামের মোড়ে দুষ্কৃতীদের ছোড়া বোমার আঘাতে খুন হন তৃণমূলের উপপ্রধান ভাদু শেখ। তারপরেই বগটুই গ্রামে ৭-৮টি বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। পুড়ে মৃত্যু ১০ জনের। মৃতদের মধ্যে রয়েছেন বেশ কয়েকজন মহিলা ও শিশু। রামপুরাহাটের এই ঘটনা তৃণমূলের অন্তর্দ্বন্দ্বের ফল বলেই অভিযোগ বিরোধীদের। এই ঘটনার দায় নিয়ে রাজ্যের পুলিশমন্ত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদত্যাগ দাবি করেছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী।
এদিন বিধানসভায় শুভেন্দু বলেন, গত এক সপ্তাহে রাজ্যে ২৬ জন খুন হয়েছেন। রামপুরহাটে গণদাহ-গণহত্যা হয়েছে। পুলিশমন্ত্রীকে অবিলম্বে পদত্যাগ করতে হবে। কেন্দ্রের হস্তক্ষেপ চাই। এটা আর একটা ছোট আঙারিয়া। গতকাল রামপুরহাটে বিস্ফোরণ হয়েছে, তার এনআইএ তদন্ত চাই। বাড়িতে আগুন লাগানোর ঘটনায় সিবিআই চাই। দিল্লিতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে দেখা করবেন সুকান্ত মজুমদার, অর্জুন সিংরা। এর আগে ছোট আঙারিয়া, নন্দীগ্রাম, নেতাই গণহত্যায় বিচারব্যবস্থা হস্তক্ষেপ করেছিল। এবারও আদালত হস্তক্ষেপ করবে বলে আশা করছি।
রামপুরহাট-কাণ্ডের প্রতিবাদে রাজভবনে যায় বিজেপি পরিষদীয় দল। মঙ্গলবার বিধানসভায় এমনটাই জানিয়েছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। রাজস্থান বিধানসভার স্পিকার সিপি জোশীর ডাকে সেখানে ভাষণ দিতে গিয়েছেন রাজ্যপাল জাগদীপ ধনখড়। তাই মঙ্গলবার বিকেলে রাজভবন গিয়ে ভিডিয়ো কনফারেন্সে রাজ্যপালের সঙ্গে কথা বলেন বিজেপি বিধায়কেরা। সেখানেই রাজ্যপালের দফতরে জমা দেওয়া হয় একটি প্রতিবাদপত্র। যেখানে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলার অবনতির দাবি করে কেন্দ্রীয় হস্তক্ষেপের দাবি করা হয়েছে।
বিরোধী দলনেতা বলেন, রাজ্যে আইনের শাসন নেই। তাই এ বিষয়ে আমরা রাজ্যপাল মারফত কেন্দ্রীয় সরকারকে রাজ্যে হস্তক্ষেপের দাবি জানিয়েছি। বিকেলে বিধানসভা থেকে বিধায়করা প্রতিবাদ মিছিল করে রাজভবনে যান। তবে রাজভবনের পাশাপাশি দিল্লিতে রামপুরহাট-কাণ্ডের প্রতিবাদে সরব হন বিজেপির সাংসদরা। রাজ্য সভাপতি তথা বালুরঘাটের সাংসদ সুকান্ত মজুমদারের নেতৃত্বে বিজেপি সাংসদরা মঙ্গলবার বিকেলে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। সেখানেই রাজ্যের আইনশৃঙ্খলার অবনতির কথা তুলে ধরে কেন্দ্রীয় হস্তক্ষেপের দাবি জানান। এমন জোড়া প্রতিবাদ কর্মসূচির পাশাপাশি বুধবার বিজেপি পরিষদীয় দল রামপুরহাটের বগটুই গ্রামে যাওয়ার কথা জানিয়েছে। ওই গ্রামে যেতে তাঁদের আটকানো হলে সেখানেই বিধায়কেরা বিক্ষোভ প্রদর্শন করবেন বলে আগাম হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বিরোধী দলনেতা।
এদিকে, রামপুরহাটের ঘটনায় রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব নেই বলেই জানিয়েছেন রাজ্য পুলিশের ডিজি মনোজ মালব্য। তবে ঠিক কী কারণে এই ঘটনা ঘটল তা খতিয়ে দেখা হবে বলে জানিয়েছেন বঙ্গ পুলিশের এই শীর্ষ কর্তা। রামপুরহাটে মোট ৮ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। একটি বাড়ি থেকেই ৭টি অগ্নিদগ্ধ দেহ উদ্ধার হয়েছে। এখনও পর্যন্ত রামপুরহাটের বগটুই গ্রামের ঘটনায় মোট ১১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।