কলকাতা ব্যুরো: আন্দোলনের নামে পাবলিক প্লেস বন্ধ করা যায় না। বৃহস্পতিবার শাহীন বাগ মামলার পরিপ্রেক্ষিতে এই নির্দেশ জারি করল সুপ্রিম কোর্ট। সুপ্রিম কোর্টের বক্তব্য অনুযায়ী, স্বাধীনতা এবং সৌজন্যে হাতে হাত ধরে চলা উচিত। আন্দোলনকারীদের সে কারণেই একটি নির্দিষ্ট জায়গা বেছে নেওয়া উচিত বলে মনে করে সুপ্রিম কোর্ট।শাহীনবাগে তিন মাস ধরে চলা সিটিজেনশিপ আমেন্ডমেন্ট অ্যাক্ট এর পরিপ্রেক্ষিতে ধর্না কে কেন্দ্র করে এদিন সুপ্রিম কোর্ট বৃহত্তর স্বার্থে যে রায় দিয়েছে, তা আগামী দিনে দেশে অন্য কোন ও পথের আন্দোলনেও তা কতটা কার্যকর হয় দেখার আছে। আদালত এদিন শাহীনবাগ প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তার রায়ে বলেছে, শাহীনবাগে কি হয়েছে তা সকলেই দেখেছেন। আন্দোলন হিসেবে শুরু হলেও তা সাধারণ মানুষের চলার পথে অন্তরায় করেছে শাহীনবাগ এলাকাকে।
এই প্রসঙ্গে সুপ্রিমকোর্ট প্রশাসন কে ও একহাত নিয়েছে। চোখা চোখা ভাষায় সুপ্রিম কোর্ট একটি বিষয় স্পষ্ট করে দিয়েছে, প্রশাসন আন্তরিকভাবে দায়িত্ব পালন না করলে, এই সমস্যাই হবে। একইসঙ্গে সুপ্রিমকোর্টের বক্তব্য, প্রশাসন যদি কথাবার্তা বা আলাপ-আলোচনায় সময় ব্যয় না করতো, তাহলে সুপ্রিম কোর্টকে আজ এমন রায় দিতে হতো না। প্রশাসন পুলিশ আইন প্রয়োগ করতে এবং বাধা দূর করার ক্ষেত্রে চেষ্টা করেনি, তারা বিচার বিভাগের নির্দেশের জন্য অপেক্ষা করছে। এটা প্রশাসনের একটা দুর্বলতা বলেও মনে করছে কোর্ট।
শাহীনবাগ এর ঘটনা প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে সুপ্রিম কোর্টের বক্তব্য, পুলিশ তার কাজ সম্পর্কে কিভাবে দায়িত্বশীল হয়ে এগোবে, তা তাকেই ঠিক করতে হবে। বিচার বিভাগের নির্দেশের অপেক্ষায় না থেকে, পুলিশ তার দায়িত্ব পালন করবে এবং সেক্ষেত্রে ফল পাওয়া যাবে, এটাই আশা করা যায়। এখানে পুলিশ তা না করায় আদালতকেই তার কাঁধ এগিয়ে দিতে হলো পুলিশের দায়িত্বশীল হওয়ার জন্য। বিচারপতি সঞ্জয় কিষাণ কল, বিচারপতি অনিরুদ্ধ বোস এবং বিচারপতি কৃষ্ণ মুরারি এদিন এ রায় দিতে গিয়ে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, পুলিশ প্রশাসন তার কাজে দায়িত্বশীল না হাওয়া দুর্ভাগ্যজনক। আর তাই বিচার বিভাগকে এগিয়ে আসতে হল।
বিচারপতি অনিরুদ্ধ বসু বলেছেন, আন্দোলনের অধিকার থাকবেই। কিন্তু কোথাও তার মধ্যে একটা সামঞ্জস্য থাকা জরুরী। আন্দোলনের অধিকার প্রয়োগ করতে গিয়ে, নাগরিকদের পথচলা দিনের পর দিন বন্ধ করে দেওয়া যায় না। রাস্তা বন্ধ করে যদি এমন আন্দোলন হয়, তাহলে পথের অধিকার রক্ষার কি হবে? প্রশ্ন তুলেছেন বিচারপতি অনিরুদ্ধ বসু।
সুপ্রিম কোর্টের এই ঐতিহাসিক রায়ের পর এখন বৃহত্তর ক্ষেত্রে রাস্তা আটকে বা পাবলিক প্লেসে বিক্ষোভ, মিছিল করার নামে নাগরিকদের গতি স্তব্ধ করে দেওয়ার ঘটনা ঠেকাতে পুলিশ আদপেই এরপরেও সতর্ক হবে কিনা, সেই প্রশ্ন কিন্তু থেকেই যাচ্ছে। আবার বহু ক্ষেত্রে শাসক দল কোন এমন আন্দোলন করলে, সেখানে প্রশাসনের নীরবতা এদেশে একটা স্বাভাবিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। উল্টোদিকে বিরোধীদের এমন আন্দোলনে ভেঙে দিতে রে রে করে পুলিশের এগিয়ে যাওয়ার ঘটনাও এদেশে নতুন কিছু নয়। আদালত এ ব্যাপারে কোন মন্তব্য না করলেও, নাগরিকদের প্রশ্ন, এক্ষেত্রেও কি প্রশাসনের সামঞ্জস্য রাখা কর্তব্য নয়?