কলকাতা ব্যুরো: পরিবেশ দূষণ রুখতে পশ্চিমবঙ্গে সবধরনের বাজি ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল কলকাতা হাইকোর্ট। সোমবার হাইকোর্টের সেই রায়কে খারিজ করে দিল সুপ্রিম কোর্ট। দেশের অন্যান্য অংশের মতো বাংলাতেও পরিবেশ বান্ধব, সবুজ বাজির ব্যবহার করা যাবে বলে জানিয়ে দিল শীর্ষ আদালত ৷
শীর্ষ আদালত জানিয়েছে, কলকাতা হাইকোর্ট শুধু সবুজ বাজি ব্যাবহারের ক্ষেত্রে তার পরিকাঠামোর অভাবের বাস্তব পরিস্থিতির কথা বলেছে। কিন্তু সেটা নিয়ে কোনো বিশ্লেষণ বা আলোচনা শুনানিতে হয়নি। সম্মতভাবে ভাবতে হবে ৷ তাই যদি সব বাজি নিষিদ্ধ করতে হয়, তাহলে আবেদনকারীকে প্রয়োজনীয় নথি-সহ ফের এই নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হতে হবে। যদি হাতে সময় না থাকার কারণে আর সেই পথে যাওয়ার সম্ভাবনা কম বাজি বন্ধে পক্ষে থাকা আবেদনকারীদের।

এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে কয়েকদিন আগে কালীপুজো, দীপাবলি ও এই বছরের অন্যান্য উৎসবগুলিতে সবরকমের বাজি নিষিদ্ধ করে দেয় কলকাতা হাইকোর্ট ৷ তার বিরুদ্ধেই মামলা হয়েছে সুপ্রিম কোর্টে ৷ সোমবার সকালে এক দফা এই নিয়ে শুনানি হয় ৷ কিন্তু রাজ্যের আইনজীবী না থাকায় তখন শুনানি বন্ধ হয়ে যায়। বিকেলে ফের শুনানি হয়। তখন শীর্ষ আদালত জানায় যে এক বিষয় নিয়ে বারবার শুনানি চায় না তারা ৷ সেখানে মামলকারীদের পক্ষে জানানো হয় যে কোনটা পরিবেশ বান্ধব বাজি ও কোন বাজি পরিবেশ বান্ধব নয়, তা বাক্সে থাকা কিউআর কোড থেকে বোঝা সম্ভব ৷ আর সেই সমস্ত পরিবেশ বান্ধব বাজির প্যাকেটও তৈরি ৷

প্রসঙ্গত, সুপ্রিম কোর্ট আগেই পরিবেশ বান্ধব বাজি ব্যবহারে ছাড় দিয়ে রেখেছে ৷ এদিন সুপ্রিম কোর্টের দুই বিচারপতি এএম খানউইলকর ও অজয় রাস্তোগীর বিশেষ বেঞ্চে সেই প্রসঙ্গও উঠে আসে ৷ আদালত স্পষ্ট জানায়, পশ্চিমবঙ্গ ব্যতিক্রম হতে পারে না ৷ সব রাজ্যের জন্য একই নির্দেশ হওয়া হয়েছে। তাই রাজ্য সরকারকে এই নিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে ৷

কেন সব ধরনের বাজির উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা উচিত নয়, সেই ব্যাখ্যাও দিয়েছে আদালত ৷ সুপ্রিম কোর্টের মতে, যাঁরা পরিবেশ সম্পর্কে সচেতন, তাঁরা জানেন কীভাবে সতর্কতা অবলম্বন করতে হয় ৷ তাই সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা জারি উচিত নয় ৷ শীর্ষ আদালত বলেছে, ‘এটা পরিষ্কার করে দেওয়া হচ্ছে যে বাজি ব্যবহারের উপর পুরোপুরি নিষেধাজ্ঞা নেই। শুধুমাত্র সেইসব বাজি নিষিদ্ধ করা হচ্ছে (বেরিয়াম সমৃদ্ধ বাজি), যা নাগরিকদের স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকারক। আরও স্পষ্টভাবে প্রবীণ নাগরিক এবং শিশুদের (ক্ষেত্রে ক্ষতিকারক)।’

এই মামলাটি করা হয়েছে পশ্চিমবঙ্গের বাজি ব্যবসায়ী সমিতি ও অন্য একটি গোষ্ঠীর পক্ষ থেকে। তারা শীর্ষ আদালতের কাছে আবেদনে সেই সাত লক্ষ পরিবারের কথা তুলে ধরে, যারা সরাসরি বাজি তৈরি বা বিক্রির ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত ৷ পাশাপাশি আবেদনে জানানো হয়েছে, সুপ্রিম কোর্ট ও ন্যাশনাল গ্রিন ট্রাইব্যুনালের নির্দেশ অনুযায়ী পশ্চিমবঙ্গে বাজি তৈরি করা হয় ৷ তারপরও হাইকোর্ট বিষয়টিকে গুরুত্ব দেয়নি ৷ যদি ও রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ জানিয়েছে, এ রাজ্যে সবুজ বাজি তৈরির কোনো কারখানা নেই।