কলকাতা ব্যুরো: রাজনীতির ঘোলা জলে মাছ ধরতে মরিয়া যখন সবাই, তখন আবার এক দুপাতার চিঠি জেল থেকে লিখে আলোচনায় উঠে এলেন প্রতারণায় অভিযুক্ত সুদীপ্ত সেন। সারদা কেলেঙ্কারির মাথা সুদীপ্ত সেন গ্রেপ্তার হওয়ার আট বছর পর চিঠি লিখলেন দেশের প্রধানমন্ত্রী ও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে। কাগজে, হাতে লেখা সেই ইংরেজি চিঠির মূল বক্তব্য সিপিএম, তৃণমূল, কংগ্রেস ও বিজেপি নেতারা তার কাছ থেকে মোটা টাকা নিয়েছিলেন। তাই তিনি সে কথা এতদিনে জানালেন দেশ ও রাজ্যের প্রধানদের।
ওই চিঠিতে তার বক্তব্য, একসময় সব রাজনৈতিক দলের নেতারাই তার থেকে পয়সা লুটেছেন। তিনি যাদের নাম ওই চিঠিতে লিখেছেন, তাদের কেউ কেউ এখন দল বদল করে বিজেপিতে গিয়েছেন। আবার কেউ তৃণমূল ছাড়ছেন বলে প্রবল জল্পনা রয়েছে। ঠিক সেই সন্ধিক্ষণে কোটি কোটি টাকা বাজার থেকে তুলে নেতাদের হাতে রেখে নানান রকম ব্যবসা ফেঁদে বসা সুদীপ্ত সেনের চিঠি নিয়ে আবার জল্পনা শুরু হয়েছে। কারণ গ্রেপ্তার হওয়ার এত বছর পরে ভোট বাজারে হঠাৎ এমন চিঠি দেওয়ার পিছনে অভিসন্ধি নিয়ে তৈরি হয়েছে প্রশ্ন।
চিঠির বক্তব্য অনুযায়ী, সুদীপ্ত সেন তাঁর ভরা বাজারে নানান নেতাকে কোটি কোটি টাকা দিয়েছিলেন। এর মধ্যে কংগ্রেসের অধীর রঞ্জন চৌধুরীকে তিনি নাকি ছ কোটি টাকা দিয়েছেন। সুজন চক্রবর্তীকে দিয়েছিলেন না কি ন কোটি টাকা। মুকুল রায়কে তিনি এতটাই না কিবিশাল অংকের পেমেন্ট দিয়েছিলেন যে তার অংক আজ তার আর খেয়াল নেই বলে দাবি করেছেন সুদীপ্ত।
তৃণমূলের আর কোনো নেতা নয়, সুদীপ্ত, অধিকারীকে ছ লাখ টাকা না কি দিয়েছেন। আর বিমান বসু নাকি তার থেকে পেয়েছেন দু’কোটি টাকা। ফলে এই বাজারে সুদীপ্ত সেনের মতন একজন ‘গুরুত্বপূর্ণ’ ব্যক্তি জানিয়েছেন রাজ্যের বিরোধী সব দলের মাথা তার থেকে টাকা নিয়েছে। আর শাসকদলের একমাত্র শুভেন্দু অধিকারী নাকি তার ভাগ পেয়েছিলেন। যাকে নিয়ে এখন এত জল্পনা।
ফলে প্রচারণায় অভিযুক্ত সুদীপ্ত সেনের চিঠির যত গুরুত্বই থাক প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক একটা মহলে, আমজনতার একটা বড় অংশের কাছে কিন্তু এটা স্রেফ গিমিক। তাদের মতে, এত বছর জেলে থাকার পরে সুদীপ্ত সেনের মাথায় এই লোক গুলোর কথা হটাৎ মনে এলো কিনা সে প্রশ্নই থাকছে। তিনি জেলে ঢোকার আগেই একসময় বিশাল একটি চিঠি লিখেছিলেন সিবিআই এর উদ্দেশ্য। চৌষট্টি পাতার সেই চিঠি পড়ে তদন্তে যুক্ত করেছিল সিবিআই। তারপরে এতগুলো বছর কেটে গিয়েছে হঠাৎ এখন সুদীপ্ত সেনের এমন কিছু নাম মনে এলো আর তার জন্য নতুন করে মুখ্যমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রী সেসব জানাতে কেন মরিয়া হয়ে উঠলেন সেই প্রশ্ন কিন্তু ঘোরাফেরা করছে সাধারণ মানুষের মধ্যে।
এ রাজ্যের বর্ষিয়ান এক পুলিশ অফিসার বলেন, যে বা যারা সুদীপ্ত সেনকে এই চিঠি লেখায় উদ্বুদ্ধ করেছেন, তাদের এ রাজ্যের পলিটিক্স বা পলিটিসিয়ান সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা না থাকায়, এমন কিছু নাম লিখে দিয়েছেন, যাদের সম্পর্কে রাজনৈতিক ভাবে বিরোধিতা থাকলেও, আর্থিক ভাবে তারা সরাসরি লেনদেন এর যুক্ত ছিলেন এটা মানুষকে বিশ্বাস করা কঠিন হবে।